ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের কেনাকাটা

রাজধানীর ফুটপাথের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৬ জুন ২০১৭

রাজধানীর ফুটপাথের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মাথার ওপর ছাউনি নেই, উপরে খোলা আকাশ। নেই আলোকসজ্জার বাড়াবাড়ি। কখনও বর্ষার বৃষ্টি, কখনও প্রচ- ভ্যাপসা গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে চলে বেচাকেনা। তবু ঈদ বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি ভিড় রাজধানীর ফুটপাথের দোকানগুলোতে। দুপুরের পর জমে উঠছে ফুটপাথের বেচাকেনা। ঈদ সামনে রেখে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কিছুটা ছাড় দেয়ায় দুপুরের আগে ফুটপাথে বসে যাচ্ছেন হকাররা। স্বল্প আয়ের মানুষেরা ছুটে যাচ্ছেন ফুটপাথের ঈদ বাজারে। কিনছেন জামা, থ্রিপিছ, শাড়ি, পাঞ্জাবি, পায়জামা, লুঙ্গি, জুতা ও স্যান্ডেলসহ সব ধরনের প্রসাধনী। রাজধানীর ফুটপাথে সবই মিলছে। সাধ্যের মধ্যে সাধের পোশাকটি কিনতে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের মানুষের ঢল ফুটপাথের বাজারে। ক্রেতার পদচারণায় ঈদের বাতাস বইছে ফুটপাথে। ফুটপাথের এই মার্কেটে মেয়েকে কোলে নিয়ে কেনাকাটা করেছেন আয়শা বেগম। মতিঝিল থেকে শুরু করে হেঁটে বেড়িয়েছেন গুলিস্তান-পল্টন মোড় পর্যন্ত। কেনাকাটা করেছেন আদরের মেয়ের জন্য, প্রিয় স্বামীর জন্য এবং সবশেষে নিজের জন্যও। ফুটপাথে সবই পেয়েছেন তিনি। তাই বেজায় খুশিও। তার হাতে থাকা অনেক ব্যাগই বলে দিচ্ছে ঈদ এসে গেছে। এবার নতুন পোশাক কেনাকাটার পালা। এ রকম অসংখ্য আসমা বেগমরা ঈদের কেনাকাটা করে রাজধানীর ফুটপাথ থেকেই। এরাই সমাজের নিম্নবিত্ত। তবে নিম্নবিত্তদের এই মার্কেট হালে মধ্যবিত্তদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই বেচাবিক্রি বাড়ছে ফুটপাথের দোকানগুলোতে। এছাড়া মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে পোশাকসহ ঈদ পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ফুটপাথের বাজার মধ্যবিত্তদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ঈদ সামনে রেখে এ বছর ফুটপাথের দোকানগুলো আগে-ভাগে জমে উঠেছে। তাছাড়া দাম কম হওয়ার কারণে অনেকে ঈদ বাজার করছেন ফুটপাথ থেকেই। তবে এখানে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। কারণ ব্যবসায়ী নামের অনেক প্রতারক রয়েছে ফুটপাথে। ওরা ১শ’ টাকার পণ্য সুযোগ পেলে ১ হাজার টাকা বিক্রি করতেও দ্বিধা করবে না। এজন্য প্রতিটি ক্রেতার ফুটপাথ সম্পর্কে আগে কম বেশি ধারণা থাকা প্রয়োজন। অন্যথায় এখানে ঠকার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও আজকাল অনেক ফুটপাথে মার্কেট ও শপিংমলের মতো একদামে পণ্য বিক্রি করা হয়ে থাকে। এদিকে সরজমিনে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, মৎস্যভবন রোড, ফার্মগেট, মিরপুর-১, মিরপুর-১০ যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর প্রায় সব ফুটপাথে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেল। পল্টন রোডের ফুটপাথে কয়েক হকার এক সঙ্গে একই সুরে শুধু বলছে- ‘দেড় শ’ দেড় শ’ দেখে নেবেন বেছে নেবেন দেড় শ’। হকারদের এই সুর পূর্বপরিচিতি হলেও ঈদ বাজার উপলক্ষে এই ডাক ক্রেতাদের বেশ আনন্দ দিচ্ছে। ফুটপাথে দেড় শ’ টাকায় পাঞ্জাবি বিক্রি করা হচ্ছে। যদিও বায়তুল মোকাররমের সামনের ফুটপাথে সর্বনিম্ন দেড় শ’ থেকে ৫শ’ টাকার দামের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া শার্ট বিক্রি হচ্ছে ২০০-৪৫০ টাকা। প্যান্ট ২০০-৫০০, জুতা ৩০০-৫০০, স্যান্ডেল ১৫০-৩০০ এবং বাচ্চাদের বিভিন্ন আইটেমের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে দেড় শ’ থেকে ৭০০ টাকায়। এছাড়া শাড়ি, লুঙ্গি, তরুণীদের থ্রিপিস, জুতা ও কসমেট্রিক্স ফুটপাথে বিক্রি হচ্ছে। অনেক হকার রাস্তার মাঝে বিছানা বিছিয়ে, চকি ফেলে, কাঁধে নিয়ে, হাতে করে এবং গাড়িতে করেও এসব পণ্য বিক্রি করছেন। গুলিস্তানে বাঁশের ঝাকায় করে জুতা বিক্রি করা হচ্ছে। সারাবছর এখানে এভাবে জুতা-স্যান্ডেল বিক্রি হলেও ঈদ সামনে রেখে লাখ লাখ জোড়া জুতা ফুটপাথে তোলা হয়েছে। পল্টন রোডের হকার জসিম মিয়া আলাপকালে জনকণ্ঠকে বলেন, ফুটপাথেও এখন ভাল জিনিস পাওয়া যায়। তাই দাম একটু বেশি। আগে ২শ’ টাকায় একটি পাঞ্জাবি বিক্রি করলে ৩০ টাকা লাভ হতো। কিন্তু এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় ৩০০ টাকায় বিক্রি করলেও ২০ টাকা লাভ করা যায় না। তাছাড়া হকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে কম লাভে মাল বিক্রির প্রতিযোগিতা রয়েছে ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের। এর ফলে এখানকার ক্রেতাদের ঠকার প্রবণতা কম থাকে। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে যথেষ্ট পরিমাণ পোশাক তোলা হয়েছে প্রতিটি দোকানে। তবে গতবারের চেয়ে এ বছর পোশাকের দাম একটু বেশি। পোশাকের পাশাপাশি বিভিন্ন কসমেটিক্স বিক্রি হচ্ছে ফুটপাথে। এছাড়া লিপস্টিক, কানের দুল আইশোডা, চুলের ব্যান্ড, চুড়ি, হাতের ব্রেসলেট, মেকআপ বক্সসহ সব কিছু পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাথে। যারা গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে যাবেন তারা ঈদ পণ্যের সঙ্গে ফুটপাথ থেকে চার্জার লাইট কিনছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুটপাথেও অনেক ভাল জিনিস বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে পোশাকের পাইকারি বাজার থেকে অনেক শার্ট-প্যান্ট চলে আসছে ফুটপাথে। বিদেশী পোশাকের এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, পোশাকের মডেল হলে আমদানিকৃত অনেক পোশাক অবিক্রিত থেকে যায়। পরে কম দামে ওই পোশাক ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এছাড়া গার্মেন্টস রফতানিকারকদের অর্ডার ও শিপমেন্ট বাতিল হলেও অনেক সময় সেই সব পোশাক ফুটপাথে চলে আসে।
×