ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিতে বিদায় বাংলাদেশের

ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল রবিবার

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৬ জুন ২০১৭

ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল রবিবার

সেমি-ফাইনালের মঞ্চ, অনেক বড় মঞ্চ। এ মঞ্চে ভারত বহুবার আসীন হলেও বাংলাদেশ প্রথমবার এমন মঞ্চে আসন পেল। এই মঞ্চে প্রত্যাশা জয়ের তীব্র আকাক্সক্ষা থাকে। থাকে চাপও। যে চাপ বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা এর আগে কোনদিনই নেননি। এমন মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতাই তো জীবনে কোনদিন হয়নি! এবার প্রথমবার বলে সেই চাপ নিতেও পারেনি বাংলাদেশ। তাইতো ভারতের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে বার্মিংহামের এজবাস্টনে ৯ উইকেটে হেরে গেল বাংলাদেশ। রোহিত শর্মার অপরাজিত ১২৩ ও বিরাট কোহলির অপরাজিত ৯৬ রানে ভারতের কাছে হারল বাংলাদেশ। ভারত এমনই খেলা দেখাল, ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের কথাই স্মরণ করিয়ে দিল। যদিও এবার কোন আম্পায়ার কিংবা আইসিসির বিতর্কিত ঘটনা ঘটেনি। অনায়াসেই জিতেছে ভারত। তবে এই ম্যাচে রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি করে দেখালেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি বিতর্কিত ‘নো’ থেকে বেঁচে সেঞ্চুরি করেছিলেন। ভারত জিতেছিল। এবার রোহিতও সেরাটা খেলেই সেঞ্চুরি করেন। তার সঙ্গে কোহলিও চার রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারেননি। তাতে ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হলো না বাংলাদেশের। সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন। টুর্নামেন্ট থেকেও বিদায় নিল। বাংলাদেশকে হারিয়ে ভারত ফাইনালে উঠল। যে ফাইনালে রবিবার লন্ডনের ওভালে পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করবে ভারত। আগেরদিন ভালভাবেই বোঝা যাচ্ছিল, এজবাস্টনের উইকেটে প্রচুর রান লুকিয়ে আছে। ভারত তাই টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিল। উদ্দেশ্যে ভালভাবেই বোঝা গেল। বাংলাদেশকে অল্প রানে বেঁধে রেখে এরপর টার্গেট অতিক্রম করতে চায় ভারত। এমন ফ্ল্যাট উইকেটে বাংলাদেশও একটি ভুল করে বসল। চার পেসার নিয়ে আবারও খেলল। যেখানে এক স্পিনারের খুবই দরকার ছিল। ভারত অবশ্য তাদের পরিকল্পনায় পুরোপুরি সফল হলো। তিন পেসার ও তিন স্পিনার দিয়ে বাংলাদেশের রানের গতিতে লাগাম টেনে ধরে থাকল। তামিম ইকবাল (৭০), মুশফিকুর রহীম (৬১) ও শেষবেলায় মাশরাফি বিন মর্তুজা যদি অপরাজিত ৩০ রান না করতেন, তাহলে আরও কম রান বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ হতো। শেষপর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৬৪ রান করল বাংলাদেশ। দুই পেসার ভুবনেশ্বর কুমার ও জাসপ্রিত বুমরা ২টি করে উইকেট শিকার করলেন। স্পিনার কেদার জাদব ২টি ও রবীন্দ্র জাদেজা ১টি উইকেট নিলেন। এ রান অতিক্রম করতে গিয়ে সহজেই জিতে গেল ভারত। ৮৭ রানে গিয়ে শিখর ধাওয়ানকে (৪৬) আউট করা গেছে। কিন্তু এরপর রোহিত ও কোহলি মিলে যে দ্বিতীয় উইকেটে ১৭৮ রানের জুটি গড়েন, তাতেই জিতে যায় ভারত। ১ উইকেট হারিয়ে ৪০.১ ওভারে ২৬৫ রান করে জিতে ভারত। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে শুধু মাশরাফি ১টি উইকেট নিতে পারেন। কী সুন্দর খেলছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে তামিম ও মুশফিক যখন জুটি বেঁধে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন। যেই তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীমের জুটি (১২৩ রানের জুটি) ভেঙ্গে গেল, বাংলাদেশেরও ধস নামতে শুরু করল। অথচ ম্যাচটিতে ৩০০ রানও হয়ে যেতে পারে, এই আশা জেগেছিল। সেখানে ২৭০ রানও করা গেল না। প্রথম দুই উইকেট ৩১ রানে পড়ার পর তামিম ও মুশফিক মিলে দলকে ১৫৪ রানে নিয়ে যান। সেখান থেকে ১৭৯ রানের মধ্যে আরও ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তামিমের পর মুশফিক, এরপর সাকিব আউট হয়ে যান। এখানেই যেন বাংলাদেশ যে হারতে যাচ্ছে, সেই চিত্র ফুটে ওঠে। যদিও মাহমুদুল্লাহ, মোসাদ্দেক ছিলেন। কিন্তু কতদূর আর নিয়ে যেতে পারবেন তারা। মাহমুদুল্লাহতো প্রতিদিন আর সেঞ্চুরি করবেন না। বৃষ্টিতে ১০ মিনিট দেরিতে খেলা শুরু হয়। সৌম্য সরকার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছেন। মনে করা হচ্ছিল, সেমিফাইনালে তার সময়। কিন্তু রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে যান সৌম্য। ব্যাটিং উইকেটেও কিছুই করতে পারলেন না। বাংলাদেশও চাপে পড়ে যায়। সৌম্যের মতো সাব্বির রহমান রুম্মনের কাছ থেকেও বিশেষ কিছু চাওয়ার ছিল। কিন্তু তিনিও তা দিতে ব্যর্থ হন। ৩৬ রানের সময় ১৯ রান করে আউট হয়ে যান সাব্বির। বাংলাদেশ দল যেন বিপত্তিতে পড়ে যায়। এমনই অবস্থা হয়, এখন বড় একটি জুটি না হলেই নয়। এরপরই তামিম-মুশফিকের জুটির দেখা মিলে। দুইজন মিলে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। বড় জুটি গড়ার ইঙ্গিত দেন। দুইজন মিলে দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। দেড়শ রানেও নিয়ে যান। এর মধ্যে তামিম হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। মনে হচ্ছিল, সেঞ্চুরিই না করে ফেলেন ভারতের বিপক্ষে সবসময়ই ভাল খেলা তামিম। হাফসেঞ্চুরি করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বাধিক রানও করেন তামিম। দুইজন মিলে দলকে ১০০ রানের জুটি উপহার দেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম-মুশফিক মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৬৬ রান যোগ করে দলকে ৩০০ রানের বেশি করার দিকে নিয়ে যান। ঠিক একইরকম মনে হচ্ছিল এবারও। কিন্তু যেই দলের রান ১৫৯ রানে যায়, ৭০ রান করে তামিম আউট হয়ে যান। উমেশ যাদবের বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান। ১৫ রানে একবার ‘নো’ বল হওয়ায় বোল্ড হলেও বেঁচে যান তামিম। সেই সুযোগটি ভালভাবে কাজে লাগিয়ে ৮২ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৭০ রান করে আউট হন তামিম। যেই তামিম আউট হলেন, তখন যেন বাংলাদেশ ইনিংসও বিপাকে পড়া শুরু করল। মুশফিক ছিলেন। ব্যাট করছিলেন। তামিম আউটের আগে হাফসেঞ্চুরিও করেন মুশফিক। ছিলেন সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, মোসাদ্দেক। মনে করা হচ্ছিল, শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ ৩০০ রান করতে না পারলেও ২৮০ রানের ঘরে অনায়াসে যাবে। কিন্তু যেই তামিম আউট হন, বাংলাদেশের ব্যাটিংও যেন মন্থর হয়ে যায়। এ মন্থর গতিতেই মুশফিক-সাকিব এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু ১৮২ রানে গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সাকিব (১৫) আউট হতেই শুরু হয়ে যায় উইকেট পড়ার ধুম। ২ রান যোগ না হতেই মুশফিকও (৬১) আউট হয়ে যান। ২২৯ রানের মধ্যে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আউট হওয়াতে বাংলাদেশের সাত উইকেটের পতন ঘটে যায়। তখন ২৮০ রান করার আশাও শেষ হয়ে যায়। শেষে গিয়ে দুই পেসার যেন ব্যাট হাতে ঝলক দেখালেন। মাশরাফি ও তাসকিন মিলে দলকে এতদূর নিয়ে আসলেন। দুইজন মিলে ৩৫ রানের জুটি গড়েন। মাশরাফি অপরাজিত ৩০ ও তাসকিন অপরাজিত ১১ রান করেন। মাশরাফি ও তাসকিন মিলে যা করে দেখালেন, ব্যাটসম্যানরা তা করতে পারলেন না। জাসপ্রিত বুমরাহকে এক ওভারেই ২টি বাউন্ডারি হাঁকান মাশরাফি। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে বাউন্ডারি হাকান তাসকিন। দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। কিন্তু এমন ব্যাটিং উইকেটে তামিম ও মুশফিক ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যানই ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি। তামিম-মুশফিক জুটি যতক্ষণ ছিলেন, অনেক বড় স্কোর হওয়ার সম্ভাবনা ততক্ষণ বেঁচে থাকে। কিন্তু যেই এ জুটি ভেঙ্গে যায়, এরপর ধস নামে। সেই ধসে বাংলাদেশও হেরে যায়। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ অনেক শক্তিশালী। এমন শক্তিশালী দলের বিপক্ষে, উইকেট যেখানে রানের কথা বলে; সেখানে ভারতকে হারাতে হলে স্কোরবোর্ডে ৩০০ রানও যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশতো তার ধারেকাছেই যেতে পারল না। আর তাতে হার হল। সেমিতেই শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মিশনও।
×