ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার থেকে আসা জনগোষ্ঠী নিরাপত্তার জন্য হুমকি

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৬ জুন ২০১৭

মিয়ানমার থেকে আসা জনগোষ্ঠী নিরাপত্তার জন্য হুমকি

সংসদ রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে আসা অবৈধ জনগোষ্ঠী ভবিষ্যতে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেছেন, বর্তমানে কক্সবাজার জেলার মোট জনসংখ্যার ২০ থেকে ২৫ ভাগই রাখাইন প্রদেশ থেকে আসা জনগোষ্ঠী। ওই সকল অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকদের দ্বারা নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারী দলের সংসদ সদস্য ইস্রাফিল আলমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, মিয়ানমার নাগরিকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে ভূমির ক্ষতি করছে, গাছ পালা নষ্ট করছে। পরিবেশের ক্ষতি করছে। এমনকি তারা বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে। তারা স্থানীয় শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মন্ত্রী জানান, অনুপ্রবেশকারী নাগরিকরা উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের ক্ষতি সাধন করছে। তাদের কেউ কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন দ্বীপ অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছে। এসব এলাকায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক ভারসম্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। তারা মিয়ানমার সীমান্তে মাদক দ্রব্য, অস্ত্র ও মানবপাচার, চোরাচালান, সীমান্তে মাদক উৎপাদনসহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত রয়েছে। একই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মিয়ানমার নাগরিকরা সীমান্ত এলাকায় একটি অপরাধ চক্র তৈরি করে জাতীয় নিরাপত্তা, জাতিগত পরিচয় ও আর্থ-সামাজিক স্থীতিশীলতার ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে। অনেক মিয়ানমার নাগরিক বঙ্গোপসাগরে জেলে হিসেবে গিয়ে বাংলাদেশী জেলেদের হত্যা করছে। মাছ ধরার ট্রলার ছিনতাই করছে। তিনি আরও জানান, সর্বশেষ গত অক্টোবর ২০১৬ মিয়ানমারের সীমান্ত ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ও তদপরবর্তী সামরিক অভিযানের প্রেক্ষিতে সে দেশের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠী ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়। ফলশ্রুতিতে নতুনভাবে রাখাইন রাজ্যের বিপুলসংখ্যাক মুসলিম নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ হাজার মিয়ানমারের নাগরিক নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা আয় ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে এক বছরে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ। সরকারী দলের এ কে এম শাহজাহান কামালের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনের জন্য ১৯৭২ সাল থেকে একটি প্রটোকল বিদ্যমান। যার আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশী নৌযান দ্বারা ৪ হাজার ৪৯৯ মেট্রিক টন ট্রানজিট পণ্য পরিবাহিত হয়েছে। ওই পণ্য পরিবহনকালে বাংলাদেশী নৌযানসমূহ ভাড়া মাসুল বাবদ এক কোটি ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার ৯৬০ টাকা আয় করেছে। ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির ৭৪ শতাংশই আওয়ামী লীগের আমলে জাতীয় পার্টির এ কে এম মাঈদুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ১০১টি সমঝোতা ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, ভারতের ১৩৪টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল এবং রাশিয়ার সঙ্গে ২৮টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এসব চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকলগুলোর মধ্যে ৭৪ শতাংশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ৭৪ শতাংশ এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ১৬ শতাংশ স্বাক্ষরিত হয়েছে। মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের মোট ২৬৩ চুক্তি, সমাঝোতা স্মারক ও প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৪টিই স্বাক্ষরিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, ৪২টি বিএনপি আমলে এবং এরশাদ সরকারের আমলে নয়টি ও সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আটটি।
×