ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নিয়ে লোকনাট্যদলের নাটক

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ১৫ জুন ২০১৭

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নিয়ে লোকনাট্যদলের নাটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রথম সারির নাট্য সংগঠন লোক নাট্যদল নতুন দুটি প্রযোজনা মঞ্চে আনছে। নতুন ওই দুটি নাটকের মহড়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। নাটক দুটির মধ্যে একটির নাম ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও সমাপ্ত স্বাধীনতা’ এবং অন্যটি ‘রাজকুমারী সুন্দরীবালা’। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থ দুটিকে উপজীব্য করে আগামী ৩ মাসের মধ্যে লোক নাট্যদল নাটকটি প্রযোজনা করছে। ইতোমধ্যে নাটকের মহড়া শুরু হয়েছে। লোক নাট্যদলের প্রায় ৩০ জন অভিনয়শিল্পী এই নাটকে অভিনয় করছেন। নাটকটির পরিকল্পনা, নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। লোক নাট্যদল সুত্রে জানা গেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ অবলম্বনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে সমুন্নত রেখে নাটকটির কাহিনী বিন্যাস করা হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু যে সংগ্রাম করেছেন, একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য যে প্রেরণা যুগিয়েছেন নাটকটিতে তা তুলে ধরা হবে। মৃত্যুর তুচ্ছতা অতিক্রম করে যে মহানায়ক নিজের স্বপ্ন ও সংগ্রামের আলোকে আজ আলোকিত তাঁর সেই আলোতেই আমরা ভবিষ্যতের পথ চিনে নিতে চাই। তিনি আমাদের মুক্তিদাতা। আজকে এবং আগামীদিনের ও তাঁর আদর্শের উত্তরাধিকার বাঙালীর সবচেয়ে বড় সম্পদ ও পাথেয়। নাটকের বিষয়বস্তুতে সেই কথাই উঠে এসেছে। এদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে চুকনগরের গণহত্যা এক কালো অধ্যায় রচনা করেছে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সেনারা যে নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তারই এক নীরব সাক্ষী হয়ে আছে আজকের চুকনগর। শুধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধই নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম যেসব গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে চুকনগর গণহত্যা অন্যতম। ১৯৭১ সালের ২০ মে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খুলনার ডুমুরিয়ার চুকনগরে পাকিস্তানী বর্বর সেনারা নির্মম এ হত্যাকা- ঘটায়। অতর্কিত এ হামলা চালিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে তারা। মে মাসের মাঝামাঝি সময় খুলনা, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর ও বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। ভারতে যাবার জন্য তারা ট্রানজিট হিসেবে বেছে নেন ডুমুরিয়ার চুকনগরকে। ১৯ মে রাতে সবাই চুকনগরে এসে পৌঁছান। পরদিন সকালে সাতক্ষীরা এবং কলারোয়ার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করার জন্য চুকনগরের পোতাখোলা বিল, কাঁচাবাজার চাঁদনী, ফুটবল মাঠ, কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন শ্মশানে আশ্রয় নেন। কিন্তু ২০ মে সকাল ১০টার দিকে তিনটি ট্রাকে করে হঠাৎ পাকিস্তানী সেনারা চুকনগর বাজারের ঝাউতলায় (তৎকালীন পাতখোলা) এসে থামে। দুপুর ৩টা পর্যন্ত তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে থাকে। লাশের গন্ধে ভারি হয়ে যায় চুকনগর ও এর আশপাশের গ্রামের বাতাস। মাঠে, ক্ষেতে, খালে-বিলে পড়ে থাকে লাশ আর লাশ। পাকিস্তানী সেনাদের সেই নির্মম হত্যাকা-ের সংগঠিত হওয়ার পর ছয় মাসের একটি শিশু মৃত মায়ের দুধ পান করছিল। স্থানীয় একজন শিশুটিকে উদ্ধার করেন এবং তার বাড়িতে নিয়ে যান। উদ্ধারের সময় তিনি লক্ষ্য করেন তার মৃত মায়ের হাতে শাখা ও সিঁথিতে সিঁদুর ছিল। তিনি শিশুটির নাম দেন ‘সুন্দরীবালা’। শিশু কন্যাটির ধর্মীয় বিষয়টি যাতে রক্ষিত হয়, সেজন্য তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব অর্পণ করেন অন্য আরেকটি হিন্দু পরিবারে। পরিবারটি তার নাম দেন ‘রাজকুমারী’। সুন্দরীবালা ওরফে রাজকুমারী এবং চুকনগরের এই নির্মম গণহত্যার উপর উপজীব্য করে লোক নাট্যদল ‘রাজকুমারী সুন্দরীবালা’ নামে একটি নাটক মঞ্চে আনার লক্ষ্যে মহড়া শুরু করেছে। নাটকটির নির্দেশনা দিচ্ছেন নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। আগামী তিন মাসের মধ্যে নাটকটি মঞ্চে আনা হবে বলে জানা গেছে। সে লক্ষ্যেই নাটকের মহড়া চলছে।
×