ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের বোলিং বনাম ভারতের ব্যাটিং

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৫ জুন ২০১৭

বাংলাদেশের বোলিং বনাম ভারতের ব্যাটিং

স্পোর্টস রিপোর্টার বার্মিংহ্যাম থেকে ॥ সবার একটাই কথা। ভারত হারুক। কিন্তু সত্যিই কি ভারত হারবে। বাংলাদেশ কী আজ সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠতে পারবে? পারতেও পারে। যদি যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব তৈরি করে, লড়াই করে ভারত ক্রিকেটারদের বাগে ফেলা যায়। পরাস্ত করা যায়। তাহলেই সম্ভব। ম্যাচটিতে মূলত বাংলাদেশের বোলিং বনাম ভারতের ব্যাটিংই দেখা যাবে। ভারত দলটি খুবই শক্তিশালী। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি, যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি, হার্দিক পান্ডে, কেদার জাদব, রবীন্দ্র জাদেজা আছেন। এ দলটিকে যদি ব্যাটিংটাতে বিপদে ফেলা যায় তাহলেই বোধহয় হয়ে যাবে। এ জন্য সবার মনে একটা হিসেবও যেন খেলছে। বাংলাদেশ দল স্বাভাবিকভাবেই চার পেসার নিয়ে খেলবে। সেই পেসারদের দিয়েই ভারতকে বিপদে ফেলতে হবে। কিভাবে? মুস্তাফিজুর রহমান এখন পর্যন্ত নিজেকে উজাড় করে দিতে পারেননি। উইকেট পাওয়া যেন তার জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। ব্যাটসম্যানরা যেন মুস্তাফিজকে ভালভাবে বুঝে গেছেন। কিন্তু সবারই জানা, ২০১৫ সালে যে বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে গেছে ভারত, সেই সিরিজে হেরেছে; তা তো মুস্তাফিজের ‘কাটারে’ বিধ্বস্ত হয়েই। সেই মুস্তাফিজ আজ শুরুতেই জ্বলে উঠলেই হয়। মুস্তাফিজের সঙ্গে যুদ্ধের লড়াইয়ে নামতে হবে ভারতের এ মুহূর্তে সেরা ব্যাটসম্যানদেরই। রোহিত, ধাওয়ান, কোহলি, যুবরাজ, ধোনিরা মুস্তাফিজের সামনে বিপদে পড়তে পারেন। এ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুরুতে দুটি উইকেট যদি মুস্তাফিজ নিতে পারেন। তাহলেই ছন্নছাড়া হয়ে যাবে ভারতের ব্যাটিং লাইন। মুস্তাফিজের পর আছেন তাসকিন আহমেদ। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে গতিময় বোলার। তিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। মুস্তাফিজ যদি শুরুতেই দুই উইকেট নিতে পারেন। তখন তাসকিন এসে ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলতে পারলেই হয়। সঙ্গে একটি-দুইটি উইকেট দ্রুত নিয়ে নিতে পারলেই হয়। এরপর রুবেল আছেন। যিনি বারবার কোহলিকে আউট করার জন্য উদগ্রীব। সেই কাজটি যদি রুবেল করতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই। আছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। যিনি সবসময়ই ভারতকে পেলে জ্বলে ওঠেন। আজও যদি তিনি জ্বলে উঠতে পারেন তাহলে শুরুতেই বিপত্তিতে পড়ে যাবে বাংলাদেশ। যেটি বাংলাদেশকে ফাইনালে ওঠানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এ চার পেসারের পর আছেন স্পিনার সাকিব আল হাসান। যিনি ভারতের বিপক্ষে সবসময়ই ভাল খেলতে চান। ভাল খেলেন। তিনি কোনভাবে বল হাতে জ্বলে উঠতে পারলেই হলো। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিবের কাছ থেকে এখনও সেইরকম বোলিং মিলেনি। আজ মিলে গেলেই হলো। সঙ্গে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত তো আছেনই। যিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। নিউজিল্যান্ডকে অল্পতেই বেঁধে রেখেছেন। বাংলাদেশের বোলিংটাই দুর্দান্ত করতে হবে। যদি ভারতকে আটকে রাখতে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটিংটাও তো করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের। ভারতের চার বোলার আছেন। যারা যে কোন সময় যে কোন দলকে বিপদে ফেলতে প্রস্তুত। পেসার ভুবনেশ্বর কুমার, বুমরা, স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা আছেন। আবার হার্দিক পান্ডেও রয়েছেন। এ বোলাররা যে কোন দলকে হারিয়ে দিতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের এ চার বোলার থেকেই সাবধান থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা একটু বুঝে খেলে এগিয়ে যেতে পারলেই হয়। তামিম ইকবাল আছেন। যিনি প্রথম দুটি ম্যাচের প্রথমটিতে সেঞ্চুরি করেছেন। দ্বিতীয়টিতে ৯৫ রান করেছেন। তৃতীয় ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেছেন। তবে ভারত বলে তামিমকে নিয়ে বিশেষ আশা করা যায়। এরপর সৌম্য সরকার আছেন। যিনি এখন পর্যন্ত উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারেননি। সৌম্যকে নিয়েও আছে ভরসা। সাব্বির রহমান রুম্মন যদি খেলেন। তার কাছ থেকে একটা ইনিংস পাওনা আছে। সেটি আজ হয়েও যেতে পারে। এরপর মুশফিকুর রহীম, গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তো আছেনই। তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত তো দুর্দান্ত খেলছেন। তার মানে খেলা বাংলাদেশ বোলার বনাম ভারত ব্যাটিং হলেও বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদেরও আমলে রাখতে হবে। ভারত তা রাখছেও। তাই তো ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেছেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ সেরা চারে খেলছে। আট দল থেকে সেরা চার দল হয়েছে। তার মানে ভাল খেলেই এসেছে। বাংলাদেশ বিপজ্জনক দল।’ তার মানে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতেরও আছে ভয়। সেই ভয় এখন জয় করতে পারলেই হলো। যে যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব মাঠের লড়াইয়ে হবে সেটি জয় করে নিতে পারলেই হলো।
×