ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ॥ ৫ হাজার গাছের ভাগ্য

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৫ জুন ২০১৭

মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ॥ ৫ হাজার গাছের ভাগ্য

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ দুটি মহাসড়কের পাশের শতবর্ষীসহ ছোট বড় ৪ হাজার ৮৬৭টি গাছ কাটতে চায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর-বেনাপোল ও যশোর-খুলনা জাতীয় সড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্ততার উন্নীতকরণের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ওইসব গাছ কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে গাছের মালিকানা নিয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ও জেলা পরিষদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। দুই সংস্থায় জমি ও গাছের মালিকানা দাবি করছে। মালিকানা নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুটি সংস্থা। আন্তঃমন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে গাছের ভাগ্য। প্রকল্প বাস্তবায়নে গাছ টাকার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছে সওজ বিভাগ। পরিবেশবাদীরা বলছেন, গাছ রেখেই মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজ সম্ভব। আর সেটি না করা হলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২১ মার্চ একনেকের সভায় ৩২৮ কোটি টাকা ৯০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে যশোর-বেনাপোল জাতীয় সড়কের (দড়াটানা-বেনাপোল পর্যন্ত) ৩৮ কিলোমিটার যথাযথ মান ও প্রশস্ততার উন্নীতকরণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এ সড়কের উভয়পাশে শতবর্ষীসহ বিভিন্ন বয়সী ২ হাজার ৩১২টি গাছ রয়েছে। অপরদিকে চলতি বছরের ১৪ মার্চ একনেকের সভায় ৩২১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে যশোর-খুলনা (পালবাড়ি-নওয়াপাড়ার রাজঘাট) পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ মহাসড়কের দুই পাশে ২ হাজার ৫৫৫টি বিভিন্ন বয়সী গাছ রয়েছে। উভয় প্রকল্পের নক্সা অনুযায়ী ‘মহাসড়কের প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার থেকে বৃদ্ধি করে ১০ দশমিক ৩ মিটার করা হবে। একইসঙ্গে সড়কের উভয়পাশে ১ মিটার করে মাটির জায়গা রাখা হবে। এতে সড়কের প্রস্থ দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৩ মিটার। সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে মহাসড়কের উভয় পাশের মোট ৪ হাজার ৮৬৭টি গাছ কাটতে হবে। তবে ওই গাছ ও ভূমির মালিকানা নিয়ে সওজ ও জেলা পরিষদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। এদিকে, চলতি বছরের ১৮ মার্চ জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় গাছ ও ভূমি মালিকানা বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়। সওজ হাইওয়ে এ্যাক্ট অনুযায়ী ওই জমি ও গাছের মালিকানা দাবি করে। অপরপক্ষে জেলা পরিষদের প্রতিনিধি সওজের দাবির বিরোধিতা করেন। তারা দাবি করেন, ২০১১ সালের ২ মার্চ আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভূমির নিরঙ্কুশ মালিক জেলা পরিষদ। চলতি বছরের ২০ মার্চ জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য খুলনা বিভাগী কমিশনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ জমির মালিনার বিষয়টি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর ঝুলে আছে। এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মহাসড়কের দুই পাশের গাছ ও জমির মালিক সওজ। আমরা নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করেছি। ওই গাছগুলো না কেটে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জেলা পরিষদের মালিকানা দাবি সঠিক নয়। তারা মালিকানা দাবি করায় বিষয়টি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ। জানতে চাইলে যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, যশোর-খুলনা, যশোর-বেনাপোল ও যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের জমি যশোর জেলা পরিষদের মালিকানাধীন। ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমলে সড়কের যাবতীয় উন্নয়ন কাজ, বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের দায়িত্ব জেলা পরিষদ পালন করে আসছে। জেলা পরিষদ কখনও ওই মহাসড়কের জমি কিংবা গাছ হস্তান্তর করেনি। ফলে সওজের মালিকানা দাবি করার সুযোগ নেই।
×