অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) ব্যবহারে বেশকিছু নিয়ম করা হচ্ছে। প্রস্তাবনা অনুসারে যাদের বেতন (সরকারী চাকরি) ১৬ হাজার টাকার বেশি তাদের ক্ষেত্রে টিন নম্বর আবশ্যক।
একইভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক (যারা ১৬ হাজার টাকার বেশি বেতন পান) বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক কার্যক্রম, সুপারভাইজারি অবস্থান ও উৎপাদন পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের টিন নম্বর থাকতে হবে। কোন কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নেয়ার ক্ষেত্রেও টিন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক।
আসন্ন বাজেটে এ ধরনের রাষ্ট্রীয় ৩১ ধরনের খাতে টিন নম্বর বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এসব কাজ করতে গেলে ১২ অঙ্কের টিন নম্বর থাকতেই হবে। ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নেয়া কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিতে গেলেও টিন নম্বর লাগবে। এ ছাড়া আমদানির উদ্দেশে ঋণপত্র খোলা যাবে না টিন ছাড়া।
এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পেতে হলেও টিন নম্বর থাকতে হবে। আমদানি-রফতানির বিল অব এন্ট্রির ক্ষেত্রেও এটি লাগবে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার ভেতরে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে না টিন নম্বর ছাড়া।
জাতীয় রাজস্ব বোডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, সরকার সব শ্রেণীর মানুষকে টেক্সনেটের আওতায় আনতে চায়। এ জন্য টিনকে অনলাইন ও সহজ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে বাজেটে কিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
অর্থ আইনে (বিল) বলা আছে, ১২ অঙ্কের টিন নম্বর ছাড়া কোন দরপত্রে কেউ অংশ নিতে পারবে না। কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত কোন ক্লাবের সদস্য হতে গেলেও টিন লাগবে। সাধারণ বীমার জরিপ কর্তারও টিন নম্বর থাকতে হবে। সিটি কর্পোরেশন ও জেলা সদর পৌরসভায় জমি-বিল্ডিং বিক্রি, পাওয়ার অব এ্যাটর্নি, হস্তান্তর, দলিলসহ এক লাখ টাকার বেশি মূল্যের কোন চুক্তিনামা করতে গেলেই টিন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। বাস, প্রাইম মোভার, লরির মালিকানা পরিবর্তন কিংবা ফিটনেস নবায়ন করতেও টিন লাগবে।
এছাড়া চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্ট, আর্কিটেকচার, সার্ভেয়ারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য হতে গেলেও টিন লাগবে। কোন কোম্পানির পরিচালক ও স্পন্সর পরিচালক, মুসলিম বিবাহ ও ডিভোর্স আইনে নিকাহ রেজিস্ট্রার ও যে কোন ট্রে ডে বডির সদস্য হতেও টিন লাগবে। অর্থ আইন ২০১৭-এ বলা হয়েছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) এলাকার মধ্যে কোন ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে অনুমোদন নিতে হলে ১২ অঙ্কের টিন নম্বর থাকতে হবে। এছাড়া ড্রাগ লাইসেন্স, গ্যাসের বাণিজ্যিক সংযোগ, সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় বিদ্যুতের বাণিজ্যিক সংযোগ নেয়া, মোটর গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন করতেও টিন নম্বর অবশ্যই থাকতে হবে।
লঞ্চ, স্টিমার, ফিশিং ট্রলার, কার্গো কোস্টারসহ বিভিন্ন জলযানের জরিপ সনদ নেয়া, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নিবন্ধন ও নবায়ন, জেলা পরিবেশ কার্যালয় থেকে ইটভাটার অনুমোদন নেয়ার সময়ও অবশ্যই থাকতে হবে টিন নম্বর। এছাড়া উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে টিন থাকা বাধ্যতামূলক। সিটি কর্পোরেশন, জেলা শহর ও পৌরসভায় কোন শিক্ষার্থীকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা বিদেশী কারিকুলামে ভর্তি করতে হলেও এটি থাকতে হবে।
মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ীদেরও এটি থাকতে হবে। কোন কোম্পানি থেকে এ্যাডভাইজারি, কনসালটেন্সি, ক্যাটারিং, ম্যানেজমেন্ট, জনশক্তি সরবরাহ ও নিরাপত্তা সার্ভিসসহ বিভিন্ন সার্ভিস দিতে গেলেও টিন থাকতে হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: