ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন-প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায়

দৃশ্যটি ছিল ভয়াবহ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৫ জুন ২০১৭

দৃশ্যটি ছিল ভয়াবহ

‘এটি ছিল ভয়াবহ, পুরো ভবনে আগুন ধরে গেছে, ভবনটি সম্ভবত ধসে যাবে, ধসে পড়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র’ লন্ডনের ২৭ তালা গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন লাগার পর লোকজন এভাবেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিল। পশ্চিম লন্ডনের লাটিমার রোডের ওই ভবনে আগুন লাগার পর সেখানে বহু লোক আটকা পড়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। ইন্ডিপেন্ডেন্ট। আগুন নেভানোর জন্য দুই শতাধিক অগ্নি নির্বাপণকর্মীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। বুধবার স্থানীয় সময় রাত সোয়া একটার পর সেখানে আগুন লাগে। এতে নিঃশ্বাসের সমস্যাসহ লোকজন বিভিন্ন রকম সমস্যার শিকার হন। আহত লোকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরো ভবনটি ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। ভবন থেকে বের হওয়ার ধোঁয়া পুরো লন্ডন শহর থেকেই দেখা যায়। আগুন থেকে রক্ষা পেতে অনেকে জানালা দিয়ে নিচে ঝাঁপ দিয়েছে বলে সিএনএন খবর দিয়েছে। অভিনেতা ও লেখক টিম ডাউনি থাকেন ঘটনাস্থল থেকে ৬ শ’ মিটারের মধ্যেই। ভবনটি যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে বলে প্রেস এ্যাসোসিয়েশনের কাছে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দৃশ্যটি ছিল খুবই ভয়ানক। ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে পুরোভবন। এটি এখন যে কোন সময় ধসে যেতে পারে। আমার দেখা এটি সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য। আমি চাই, ভবনে আটকা পড়া প্রতিটি লোক বের করে আনা হোক।’ আগুন লাগার খরব কিভাবে জানতে পারলেন, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমি সাইরেন শুনতে পাই, এরপর দেখি একের পর এক হেলিকপ্টার আসছে। মানুষ চিৎকার করছে। দেখতে পেলাম পুরো ভবন ধোঁয়ায় ঢাকা পড়েছে। পানি, কাপড়-চোপড় হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই নিয়ে আশেপাশের লোকজন আগুন নেভাতে ছুটে আসছে।’ জোডি মার্টিন নামে আরেকজন বলছেন, ‘ফায়ার ব্রিগেডের শব্দ শুনেই আমি ছুটে আসি। ফায়ার ট্রাক থেকে একটি কুঠার নিয়ে আমি ওই ভবনের দিকে ছুটে যাই। কি করা উচিত, বুঝতে পারছিলাম না প্রথমে। ভবনের কাছে দৌড়ে গিয়ে ফায়ার এস্কেপগুলো খোঁজার চেষ্টা করলাম। লক্ষ্য করলাম পুরো ভবনে কোন ফায়ার এস্কেপ নেই। অগ্নিকা-ের ফলে ভবনের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশগুলো এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অনেক কষ্টে ভবনটির ভেতরে ঢুকে দোতলা পর্যন্ত উঠলাম। দেখলাম এমন ঘন ধোঁয়ায় চারপাশ ছেয়ে গেছে যে, সেখানে কারও পক্ষে নিঃশ্বাস নেয়াই রীতিমতো দুঃসাধ্য। ঘন ধোঁয়ায় ভবনের করিডরগুলোর মধ্যে চলাফেরা করাই কঠিন হয়ে পড়ে। চারেিদক মানুষের চিৎকার আর্তনাদ। লোকজন যে যেভাবে পারে ভবন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ জানাল দিয়ে লাফিয়ে নিচে নামে’ বিবিসি তিনি কথাগুলো বলেন। আগুন নেভাতে কেনসিংটন, নর্থ কেনসিংটন, হ্যামারস্মিথ, প্যাডিংটন ও পার্শ্ববর্তী এলাকার দমকল স্টেশন থেকে ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীর ছুটে আসে। অগ্নিকা-ের কারণ কী ছিল তা লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড জানাতে পারেনি। ফ্যাবিও বিবার নামে আরেকজন টুইটারে লিখেছেন, বহিস্থ প্যানেলগুলো দিয়ে আগুন খুব দ্রুত পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি লিখেছেন, ভবনের ভেতর থেকে বাঁচার জন্য যেভাবে মানুষ আর্তচিৎকার করেছে তা ছিল এক কথায় ভয়াবহ। জর্জ ক্লার্ক নামে ওই ভবনের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ‘আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ এ্যালার্মের বিপ শব্দ শুনতে পেলাম। ভাবলাম এটি কার এ্যালার্ম হতে পারে। মুহুর্তের মধ্যেই জানালার বাইরে অগ্নিশিখা দেখতে পেলাম। অতি দ্রুত দৌড়ে নিচে চলে আসি’ চ্যানেল ফোর টিভি ও রেডিও ফাইভকে তিনি একথা বলেন। লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের কমিশনার এ্যসিস্টেন্ট কমিশনার ড্যান ডেলি বলেন, ‘শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার যন্ত্রপাতি সম্বলিত পোশাক পরে অগ্নি নির্বাপণকর্মীরা ভবনে প্রবেশ করেন। কারণ আগুনের মধ্যে নিঃশ্বাস নেয়া তাদের পক্ষে কঠিন হতো।’ লন্ডনের মেয়র সাদেক খান, গ্রেনফেল টাওয়ার ও কেনসিংটনে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে স্থানীয় বাসিন্দাদের টুইটারে লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডকে অনুসরণ করতে হয়েছে।
×