ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৫ জুন ২০১৭

ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই

“ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোট সে তরী আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি”। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতার এ চরণগুলো মনে হলে ভাবি- জনসংখ্যা বাড়ার কারণেই কি- আজ চালের দাম বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশেই বেশি হয়ে গেল? ধান থেকে চাল হয়, ধানের উৎপাদন বাড়লেও জনসংখ্যার সঙ্গে সামাল দিতে পারছে না চাল। বাংলাদেশে আজ প্রধান সমস্যা হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এটা ঠেকাতে পারছে না বলেই ঢাকাসহ বড় বড় শহরে জনসংখ্যার চাপ কমানো যাচ্ছে না। কর্মসংস্থানের অভাব হয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই। জনসংখ্যার চাপে ফুটপাথেও আজ ঠাঁই হচ্ছে না বহু মানুষের। ফ্ল্যাট থেকে রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে মানুষ আর মানুষ...। পায়ে হেঁটে মানুষ যে চলবে একটু সতর্ক না হলেই ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে হয়। এর প্রধান কারণ হলো-জনসংখ্যা। দেশে ফ্যামিলি প্ল্যানিং নামে একটি দফতরও রয়েছে বহু বছর ধরে। তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে ব্যর্থ বলেই কি ৭ কোটি (১৯৭০) মানুষ থেকে আজ দেশে ১৬ কোটি মানুষ ? জনসংখ্যার এ চাপ আজ বাংলাদেশ সামাল দিতে পারছে না বলেই দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা আজ বেকার। একটা সময় গেছে, স্কুল-কলেজে ডেকে ডেকে ছেলে মেয়েদের ভর্তি করা হতো। আর স্কুলের সামনে ছিল খোলা মাঠ, বড় বড় দীঘি, ফুলের বাগান। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এতই বেড়েছে যে, প্রধান প্রধান স্কুল-কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের ঠাঁই দিতে পারছে না বলেই আজকে আবাসিক এলাকায় পর্যন্ত গড়ে উঠেছে স্কুল-কলেজ। সেখানে নেই পুকুর, বাগান, মাঠ এমনকি শহীদ মিনার, এ্যাসেম্বলির সামান্য মাঠটুকুও। অর্থাৎ ঢুকেই ক্লাস রুম। জনসংখ্যার চাপে ঢাকাসহ বড় বড় নগরীর আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা বহু স্কুল-কলেজ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ পরিবেশনও। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গেছে। ১৯৭০ সালে দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৩টি- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে কয়েক গুণ। তবুও কত না অসংখ্য শিক্ষার্থীর ঠাঁই মিলছে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে। আর চাকরি সে তো সোনার হরিণ। শুনি, লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও চাকরি জোটে না উচ্চ শিক্ষিতদের ভাগ্যে। চারদিকে আজ বেকার আর বেকার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই কোথাও ঠাঁই হচ্ছে না বলেই আজ জমি দখল, নদী ভরাট, খাল দখলের মহোৎসবও চলছে সমানে। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে এতদিনে কত অবৈধরা বাড়ি দখল করে রেখেছে- সে খবরও রাখার সময় নেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের। জনসংখ্যার চাপে আজ বাংলাদেশ যেন দিশেহারা। নতুন নতুন মার্কেট নির্মাণ করে ফুটপাথের হকারদের কতবার যে দোকান বরাদ্দ দেয়া হলো তার হিসাব নেই। অথচ তারপরেও দলে দলে নতুন নতুন হকারের আগমন ঘটছেই। এটা উর্ধগতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্যই হচ্ছে। প্রশ্ন, কে ঠেকাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। যাদের দায়িত্ব তারা যদি সচেতন না হন তাহলে দেশের ভবিষ্যত যে আরও ভয়াবহ হবে না তা কেইবা জানে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবার একটু নড়ে চড়ে উঠবেন কি? রূপনগর, ঢাকা থেকে
×