ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাহাড়ে মর্মান্তিক বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৫ জুন ২০১৭

পাহাড়ে মর্মান্তিক বিপর্যয়

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্ন চাপের কারণে গত রবিবার থেকে দেশব্যাপী মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণে সার্বিকভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও সর্বাধিক ক্ষতি হয়েছে পার্বত্য তিন জেলায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাঙ্গামাটিতে। সেখানে পাহাড়ী ঢল ও পাহাড় ধসে নিহতের সংখ্যা দু’শ’ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বান্দরবান এবং চট্টগ্রামের জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়। সব মিলিয়ে পাহাড় ধস, মাটি ও দেয়াল চাপায় মৃতের সংখ্যা তিন শতাধিক হতে পারে, যাদের মধ্যে রয়েছে অনেক নারী ও শিশু। উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে কয়েকজন সেনা সদস্যের মৃত্যুর খবরও আছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, পাহাড় ধস ও দেয়াল চাপায় এসব মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণ অনেকটা মনুষ্যসৃষ্ট। মূলত এসব পাহাড় আগ্নেয়শিলা দ্বারা গঠিত নয়, বরং অধিকাংশই মাটির টিলা। তদপুরি প্রায় গাছপালা ও বনজঙ্গলবিহীন। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা-ঘাট নির্মাণসহ অত্যধিক মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করার তাগিদে পাহাড়ের গাছপালা নির্মমভাবে নির্মূল করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মাটির প্রয়োজনে অবিরাম পাহাড় কাটা তো আছেই। অতঃপর প্রবল বর্ষণসহ ঢল নামলে বৃক্ষহীন ও ন্যাড়া পাহাড়গুলোর মাটি আলগা হয়ে ধসে পড়ে পাদদেশে বসবাসকারী মানুষের বসতভিটার ওপর। এই অঞ্চলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ও দেয়াল ধসে একাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটে থাকে। ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড়, দেয়াল ও ভূমি ধসে প্রাণহানি ঘটে ১২৭ জনের। স্থানীয় প্রশাসন পাহাড়ের ঢালে বসবাসরতদের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ তাদের সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিলেও কার্যত তা ব্যর্থ হয়েছে। এর বাইরেও চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন থেকে চলছে জলাবদ্ধতা সঙ্কট। চট্টগ্রামের দুঃখ চাক্তাই খাল সংস্কারসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি হলেও বরাবরই তা থেকে গেছে উপেক্ষিত। নির্বাচিত সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং নির্বাচিত মেয়রসহ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নগরবাসীর এই চাওয়া-পাওয়া পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন পুরোপুরি। এর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার অবস্থাই কী আদৌ ভাল বলা যাবে? দু’দিনের প্রবল বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে সৃষ্ট হয়েছে ভয়াবহ পরিস্থিতি। হাটবাজার, সুপার মার্কেটও বাদ যায়নি জলাবদ্ধতা থেকে। বিভিন্ন স্থানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও ফ্লাইওভার নির্মিত হওয়ার কারণে পরিস্থিতি হয়েছে আরও শোচনীয়, এমনকি ভয়াবহ। দুর্ঘটনার খবরও আছে বৈকি। দীর্ঘ সময়ব্যাপী যানবাহন সঙ্কটের পাশাপাশি অসহনীয় যানজটে রীতিমতো নাকাল হতে হয়েছে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষকে। আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে যে বা যারা ট্রেন-বাস-লঞ্চের টিকেট সংগ্রহ করতে রাতভর ছুটে গেছেন টার্মিনালগুলোতে, তাদের ভোগান্তি হয়েছে অবর্ণনীয়, অকহতব্য। রাজধানী হোক কিংবা হোক না বন্দরনগরীÑ বছরের পর বছর ধরে জনজীবন এভাবে চলতে পারে না কিছুতেই। সরকার আসে, সরকার যায়। তবে বাস্তবে মানুষের দুর্ভোগ কমে না আদৌ, বরং আরও বেড়ে যায়। অথচ বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এমনটি হওয়ার কথা নয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সরকারের আমলে নেয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা, মিলেছে নানা প্রতিশ্রুতি। বলা হয়েছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থার আমূল সংস্কারসহ উন্নয়নে নেয়া হবে নানা পদক্ষেপ। বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর খালগুলো এবং চট্টগ্রামের চাক্তাই ও অন্যান্য নালা পুনরুদ্ধার এবং নাব্য রাখার ব্যবস্থা করা হবে। বাস্তবে কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হলেও জনজীবন একটু হলেও সান্ত¡না পেত। কিন্তু হা হতোস্মি! মানুষকে এখনও পানিতে ডুবে অথবা পাহাড় চাপায় অসহায় মরতে হয় যৎসামান্য প্রাকৃতিক বিড়ম্বনায়? প্রশ্ন হলো, যে দেশটিতে পদ্মা সেতুর মতো সুবিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হচ্ছে প্রায় স্বউদ্যোগে, সেখানে কী প্রতিরোধ করা যায় না জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধস?
×