ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদে ঘরে ফেরা

বাস-ট্রেনের অগ্রিম টিকেট শেষ! লঞ্চের টিকেট বিক্রি শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৫ জুন ২০১৭

বাস-ট্রেনের অগ্রিম টিকেট শেষ! লঞ্চের টিকেট বিক্রি শুরু আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের চাহিদা মেটাতে কমলাপুরে অগ্রিম ট্রেনের টিকেটের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বুধবার তৃতীয় দিনের মতো বিক্রি হয়েছে ২৩ জুনের টিকেট। এ দিন ট্রেনের দুটি স্পেশাল সার্ভিস রয়েছে। এজন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ টিকেটের সংখ্যা বাড়িয়েছে। তাই বেশিরভাগ যাত্রী টিকেট হাতে পেয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরেছেন। তবে এসি বাথ ও চেয়ারের টিকেট চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দিতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অল্প সময়ের ব্যবধানে ট্রেনের টিকেট বিক্রি শেষ হওয়ার অভিযোগ করেছেন কোন কোন অঞ্চলের যাত্রীরা। এদিকে তৃতীয় দিনে বাস কাউন্টারগুলো ছিল কার্যত ফাঁকা। প্রথম দিনেই বেশিরভাগ অগ্রিম টিকেট শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় দিন কিছু পাওয়া গেলেও তৃতীয় দিনে না পাওয়ার অভিযোগ বেশি মানুষের। আজ ১৫ জুন থেকে বিক্রি হবে লঞ্চের অগ্রিম টিকেট। টিকেট প্রত্যাশীরা জানিয়েছেন, অন্যবারের তুলনায় এ বছর ট্রেনের টিকেট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য কম। সার্বিক ব্যবস্থাপনাও ভাল। কষ্ট হলেও টিকেট পাচ্ছেন বেশিরভাগ মানুষ। নারীদের জন্য পৃথক দুটি বুথের ব্যবস্থা থাকায় তাদের দুর্ভোগ কমেছে। টিকেট পেতে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকে। হাসি, আড্ডা আর তাস খেলে সময় কেটেছে তাদের। শত কষ্টের পর টিকেট হাতে পেতে নিশ্চিত হয়েছে নিরাপদ ঘরে ফেরা। এতেই যেন খুশি আর সন্তুষ্টির শেষ নেই। রাজশাহীগামী যাত্রী কামরুন নাহার বলেন, ইউনিভার্সিটি বন্ধ হয়েছে। বাড়িতে সবার সঙ্গে ঈদ করব। তাই সকালে এসেই লাইনে দাঁড়িয়েছি। যে পরিমাণ উপস্থিতি দেখছি মনে হচ্ছে টিকেট পাব না। কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে টিকেট পাওয়ার পর কাউন্টার বলছে এখনও ৬০ শতাংশ টিকেট রয়েছে। তখন বুঝে নিলাম সবাই টিকেট পাবে। খুলনার এসি টিকেট পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন ব্যাংকার নিশাত। বললেন, ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। টিকেট পেলাম। এবার নিশ্চিন্ত। বুধবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনের মতো ২৩ কাউন্টার থেকে ২৩ জুন শুক্রবারের টিকেট বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে ঈদের ছুটির শুরুর দিন হওয়ায় এদিন টিকেটের চাহিদা বেশি। লাইন অনেক দীর্ঘ। কাউন্টারের থেকে শুরু করে সিঁড়ি পেরিয়ে রাস্তা পর্যন্ত লাইনের পরিধি। তবে এসি টিকেট না পাওয়ায় যাত্রীরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য ২২ হাজার ১২২ টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। মেইল-লোকাল মিলে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫৫ হাজার টিকেট। তবে ২৩ জুন দুটি স্পেশাল সার্ভিস যুক্ত হওয়ায় টিকেটের সংখ্যাও বেড়েছে। এ দুটি সার্ভিসের জন্য দুই হাজার ৪৮৬ টিকেট বাড়ানো হয়েছে। সব মিলয়ে টিকেট দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৬০৮। জানতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের হাতে পর্যাপ্ত টিকেট রয়েছে। অনেকেই না বুঝে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। দুপুরের পর আর যাত্রী তেমন একটা থাকে না। টিকেটও প্রায় শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া এসি টিকেটের চাহিদা বেশি। সবাইকে তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত এসি টিকেট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় অনেকেই নানা অভিযোগ করছেন। তিনি বলেন, আমাদের হাতে যতক্ষণ টিকেট থাকবে যাত্রীরা পাবেন। এতে কোন সন্দেহ নেই। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। এ বছর কালোবাজারির কোন অভিযোগ মেলেনি। তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হলো টিকেট কালোবাজারি রোধে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দেয়া হবে ২৪ তারিখের অগ্রিম টিকেট। যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট সকাল পৌনে ১০টায় শেষ হয়ে গেছে বলে কাউন্টার থেকে বলা হলো। আর দেখা গেছে, প্রথম ৫ জনের পরে এ ট্রেনের এসি টিকেটও কেউ পাননি’। সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনেরও সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। শুধু ময়মনসিংহ পর্যন্ত কয়েকটি টিকেট ছিল তখন পর্যন্ত। টিকেট প্রত্যাশীদের প্রশ্ন, আধঘণ্টায় কি করে একটি ট্রেনের সব টিকেট শেষ হয়ে যায়? তা যদি ৬৫ শতাংশও হয়। রেলস্টেশনে টাঙানো তিস্তা ট্রেনের আসন বিন্যাসে দেখা গেছে, ১৮ কোচের তিস্তায় আসন ৬২৫। এ ট্রেনের জামালপুর স্টেশন পর্যন্ত যাওয়ার টিকেট দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ২৫৯। বাকি ৭ স্টেশন পর্যন্ত যেতে ৪০ থেকে ৫০টি করে টিকেট বরাদ্দ। এসব হিসেব দেখেও অনেকে বলেছেন, এত দ্রুত টিকেট শেষ হওয়ার কথা নয়। আগেরদিন বিকেল থেকে লাইনে ৫০ এর মধ্যে থেকেও তিস্তার টিকেট পাননি রাশেদ হাসান। সুবর্ণ এক্সপ্রেসের লাইনে বিশের মধ্যে সিরিয়ালে থাকার পরও টিকেট না পেয়ে স্টেশন ম্যানেজারের রুমে এসেছিলে সেলিম। তিনি জানান, তার সিরিয়াল নম্বর ১৯। এগোতে এগোতে সকাল ৯টার দিকে কাউন্টরের সামনে যেতেই শুনতে পান, শেষ হয়ে গেছে টিকেট। রেলস্টেশন ম্যানেজার শীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সব স্টেশনের জন্য টিকেট সমান নয়। কোন স্টেশনের টিকেট কম, কোনটির বেশি। তার ওপর কোটাও আছে। ফলে সবাইকে কাক্সিক্ষত টিকেট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। টিকেট না পেয়ে কমলাপুর স্টেশনে বেশ কয়েকবার চিৎকার-শোরগোলও হয়েছে। আজ থেকে লঞ্চের অগ্রিম টিকেট আসন্ন ঈদ-উল ফিতরে নৌ পথে যাত্রীরা যেন নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। বুধবার ঢাকা নদী বন্দর (সদরঘাট) পার্কিং ইয়ার্ডে নদী বন্দর সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। শাজাহান খান বলেন, ঈদের আগাম ও ফিরতি যাত্রা যেন নিরাপদ ও আরামদায়ক হয়, সেজন্য আমাদের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, যাত্রীদের যাতায়াত যেন আরও সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে হয়, সেজন্য ঢাকা নদী বন্দরে ইজারা প্রথা বাতিল করা হয়েছে। এই ইজারাদাররাই সদরঘাটে ছিনতাইকারীদের নিয়ে আসত বলে অভিযোগ রয়েছে। নৌ দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ঈদের পাঁচদিন আগে এবং পরে রাতের বেলা যাত্রীবাহী যান চলাচলের রুটগুলোতে বালুবাহী কার্গোসহ কোন ধরনের কার্গো চলাচল করতে পারবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেসব নৌপথ দিয়ে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করে ওসব নৌপথে আর রাতের বেলায় কার্গো চলাচল করতে পারবে না। মন্ত্রণালয়ের তৎপরতার পরিধি বাড়ানোর কাজ চলছে জানিয়ে নৌমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক কাজে নৌযান ব্যবহার করা হয়। সেগুলোর সব আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সেক্ষেত্রে কিছু কিছু নৌ দুর্ঘটনা হয়ে থাকতে পারে। তবে আমরা ওইসব নৌযানকেও আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ করছি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটি) চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক জানান, আজ বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা নদী বন্দরে নৌপথে চলাচলের ঈদকেন্দ্রিক অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে। সকাল থেকে নতুন টার্মিনাল ভবনে যাত্রীরা ঈদের আগাম টিকেট কিনতে পারবেন। এ সময় নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব আশোক মাধব রায়সহ মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাসের টিকেট উধাও বুধবার গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, হানিফ কাউন্টারে মানুষের প্রচুর ভিড়। কিন্তু কাক্সিক্ষত তারিখের টিকেট মিলছে না বলে যাত্রীরা বেশিক্ষণ অপেক্ষা করছেন না। সবাই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। দু’একজন বাধ্য হয়ে আগে-পরের তারিখের টিকেট নিচ্ছেন। কেউবা অন্য পরিবহনে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। টিকেট-প্রত্যাশীদের বিভিন্ন কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ঈগল, হানিফ, সোহাগ, শ্যামলী, এস আলমসহ বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারের সামনে টিকেট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। চাহিদ বেশি থাকায় ঈদের তিনদিন আগের টিকেট দ্রুতই শেষ হয়ে গেছে বলে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার চৌধুরী আলম জানান। তিনি বলেন, আমরা টিকেট বিক্রি শুরু করেছি সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায়। প্রথম দুই ঘণ্টাতেই ২২-২৩ তারিখের রাতের বেশিরভাগ টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে অন্যান্য দিনের টিকেট এখনও আছে।
×