ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

বৃষ্টি বাদল উপেক্ষা করে মার্কেট শপিংমলে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৫ জুন ২০১৭

বৃষ্টি বাদল উপেক্ষা করে মার্কেট শপিংমলে উপচেপড়া ভিড়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাতা মাথায় দিয়েই নগরবাসী ছুটে যাচ্ছেন মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলে। একদিকে বৃষ্টি অপরিদকে গরমÑসবই যেন তুচ্ছ। ঈদ উৎসবের আনন্দের কাছে হার মেনেছে প্রতিকূল আবহাওয়া। কারণ কেনাকাটা শুরু হয়েছে পুরোদমে। ভাল ডিজাইনের জামা, শাড়ি ও জুতা কিনতে ক্রেতাদের ভিড় এখন মার্কেটগুলোতে। জৈষ্ঠ্যের শেষ বিকেলেই আষাঢ়ের বৃষ্টি। ছিল মেঘের গর্জন। রাজধানীর কোন কোন রাস্তায় পানি জমেছে। ছিল পরিবহন সঙ্কট। এ অবস্থায় রিক্সা ও অটোরিক্সা ভাড়া দিগুণ দিতে হয়েছে। তারপরও ঈদ বলে কথা! বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়েই এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে ঢুঁ মেরেছেন ক্রেতারা। ঈদ শপিংয়ে বের হওয়া মানুষজন ভিড় এড়াতে সন্ধ্যায় মার্কেটের সামনে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ইফতার সেরে নেন। তবে বেচাকেনা জমে উঠায় খুশি বিক্রেতারা। এদিকে বুধবার বিকেল থেকেই বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এই বৃষ্টির মধ্যেও মার্কেটগুলো জমে উঠে। ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা ত্রিপল ও চাদোয়া টানিয়ে বৃষ্টির মধ্যে বেচাবিক্রি করেছেন। তাদের বিক্রি-বাট্টাও ভাল হচ্ছে। রামপুরা থেকে গাউছিয়ায় শপিং করতে এসেছেন মনির হোসেন। আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ তিনি গ্রামের বাড়ি বগুড়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। সে জন্য তিনি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঈদ শপিং করতে এসেছেন। পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করতে পেরে তিনি খুব খুশি। সরেজমিনে বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে দেখা যায় বৃষ্টির মধ্যে মার্কেট করতে এসে ক্রেতারা যতটা না ভোগান্তির শিকার হয়েছেন তার চেয়ে আনন্দ করেছেন অনেক বেশি। শেষ বিকেলের বৃষ্টিতে অনেক তরুণ-তরুণীকে ভিজতে দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে নিউমার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী বোরহান জনকণ্ঠকে বলেন, বৃষ্টিতে তাদের বেচাবিক্রিতে কোন বাদসাধতে পারেনি। অন্যদিনের মতো বেচাকেনা ভাল হয়েছে। ক্রেতাদের আনাগোনাও কম ছিল না। তিনি বলেন, ঈদের কেনাকাটা বলে কথা। এখানে বৈরী আবহাওয়া কোন বিষয় নয়। সবাই আপনজনদের জন্য কেনাকাটা করতে মার্কেটে ছুটে এসেছেন। এদিকে ঈদের ১১-১২ দিন বাকি থাকতে কেনাকাটার জন্য শাড়ি, জামা, জুতা ও পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে উল্লেখযোগ্য ভিড় লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে যারা নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবেন তারা সবাই আগেভাগেই পোশাক-আশাক কিনে রাখছেন। ফুটপাথের অনেক দোকানদার তাদের ব্যবসা সাময়িক পরিবর্তন করেছেন। বিক্রি করছেন পাঞ্জাবি। গুলিস্তান জিপিওর সামনের ফুটপাথে সারা বছর কোট-টাই, স্যুট-সাফারি বিক্রি হলেও ওই ব্যবসায়ীরা এখন পাঞ্জাবির পসরা সাজিয়েছেন। ওখানকার দুই শতাধিক ব্যবসায়ী এখন পাঞ্জাবি-পায়জামা ও টুপি বিক্রি করছেন। বৃষ্টির মধ্যেও তাদের বিক্রি-বাট্টা ভাল হয়েছে। পাঞ্জাবি বিক্রেতা মোঃ রিয়াজউদ্দিন বলেন, বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া তাদের বেচাকেনায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের কাছে পাঞ্জাবি, পায়জামা, টুপি, ট্রাউজারসহ বিভিন্ন পোশাক কিনতে আসছেন। ঈদ সামনে রেখে বেচাবিক্রিও ভাল হচ্ছে। তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে এখানে ৩০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকার পাঞ্জাবি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ৩০০-৩৫০ টাকার পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ঈদের চাঁদ রাত পর্যন্ত এখানে ভাল বেচাবিক্রি হবে বলেও তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে যথেষ্ট পরিমাণ পায়জামা-পাঞ্জাবি তোলা হয়েছে প্রতিটি দোকানে। তবে গতবারের চেয়ে এ বছর পোশাকের দাম একটু বেশি। পোশাকের পাশাপাশি বিভিন্ন কসমেটিক্স বিক্রি হচ্ছে ফুটপাথে। এছাড়া লিপস্টিক, কানের দুল আইশোডা, চুলের ব্যান্ড, চুড়ি, হাতের ব্রেসলেট, মেকআপ বক্সসহ সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাথে। যারা গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে যাবেন তারা ঈদ পণ্যের সঙ্গে ফুটপাথ থেকে চার্জার লাইট কিনছেন। যদিও সিটি কর্পোরেশন বেলা তিনটার পর ফুটপাথে দোকান বসানোর সুযোগ দিচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুটপাথেও অনেক ভাল জিনিস বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে পোশাকের পাইকারি বাজার থেকে অনেক শার্ট-প্যান্ট চলে আসছে ফুটপাথে। এছাড়া গার্মেন্টস রফতানিকারকদের অর্ডার ও শিপমেন্ট বাতিল হলেও অনেক সময় সেসব পোশাক ফুটপাথে চলে আসে। এদিকে বিত্তশালীরা কেনাকাটার সময় হিসেবে বেছে নিচ্ছেন রাতের বেলাকে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে গাড়ি হাঁকিয়ে মার্কেটে চলে আসছেন উচ্চবিত্তের ক্রেতারা। গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা জোনের মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতানে চলছে গভীর রাতে কেনাকাটা। এ কারণে ওসব এলাকায় মধ্যরাত পর্যন্ত যানজট লেগে থাকছে।
×