ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ছকে নাশকতার পরিকল্পনা

জেএমবির মাস্টারমাইন্ড হাতকাটা মাহফুজকে খুঁজছে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৫ জুন ২০১৭

জেএমবির মাস্টারমাইন্ড হাতকাটা মাহফুজকে খুঁজছে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ গ্রামে গ্রামে সংগঠিত হয়ে নতুন ছকে রাজশাহী অঞ্চলে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে জঙ্গীরা। বিভিন্ন টার্গেট ও পরিকল্পনা নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলে গোলাবারুদও মজুদ করেছে তারা। এসব পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড নব্য জেএমবির নেতা সোহেল মাহাফুজ ওরফে হাতকাটা মাহাফুজ। সে বর্তমানে আত্মগোপনে থেকে রাজশাহী অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার। পুলিশ তাকে খুঁজছে। যে কোন সময় সে ধরা পড়বে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি খুরশীদ হোসেন জানান, সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার ‘জঙ্গী আস্তানা’ থেকে যে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে তা মাহাফুজের মজুদ করা। তবে ইতোমধ্যেই এ অঞ্চলে মজুদ করা জেএমবির অধিকাংশ অস্ত্র ও বিস্ফোরণ পুলিশ উদ্ধার করেছে। তাকে (মাহাফুজ) গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি টিম কাজ করছে। যে কোন সময় মাহাফুজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়বে বলে জানান ডিআইজি খুরশীদ হোসেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এবং নাচোলের কয়েকটি আস্তানা থেকে নব্য জেএমবির বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরণ উদ্ধার করে পুলিশ। এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরকের সঙ্গে সব মিল পাওয়া গেছে। ডিআইজি খুরশীদ হোসেন বলেন, জেএমবির নাশকতার স্থান ও সময় নিশ্চিত হওয়া না গেলেও রমজান মাসে তাদের কর্মকা- বেড়ে যায়। গত রমজান মাসে এবং ঈদের দিনে বড় ধরনের নাশকতা তারা চালিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ডিআইজি আরও বলেন, তানোরের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ‘জঙ্গী আস্তানায়’ গ্রেফতার ইব্রাহীম, ইসরাফিল ও রবিউল নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। আর তাদের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন, হারেছা খাতুন ও হাওয়া খাতুন জেএমবির প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলেন। ওই বাড়ির মালিক স্কুলশিক্ষক রমজান আলী ও তার স্ত্রী আয়শা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে জানান ডিআইজি। তিনি আরও বলেন, ওই আস্তানা (ডাঙ্গাপাড়া) থেকে সুইসাইডাল ভেস্টসহ যে অস্ত্র ও বিস্ফোরণ পাওয়া গেছে তার সোহেল মাহাফুজ ওরফে হাতকাটা মাহাফুজের সরবরাহ করা। এক সপ্তাহ আগে ইসরাফিল ও রবিউল একটি ব্যাগে করে সেগুলো তাদের বাড়িতে নিয়ে যায় বলে জানান ডিআইজি খুরশীদ হোসেন। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশেষ একটি ব্যাগের সূত্র ধরে তানোরের ডাঙ্গাপাড়া ‘জঙ্গী আস্তানা’র সন্ধান পায় পুলিশ। যে ব্যাগে অস্ত্র ও বিস্ফোরণ বহন করে বাড়ি নিয়ে যায় গ্রেফতার ইসরাফিল ও রবিউল। সাধারণত তারা এ ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করে না। পুলিশের সূত্র মতে, আসছে ঈদের মধ্যে জেএমবির বড় ধরনের নাশকতার টার্গেট নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় অস্ত্র ও বিস্ফোরণ মজুদ করেছে। জঙ্গীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদের নামাজ পড়ে। সৌদি আরবের একদিন পর যারা রোজা ও ঈদের নামাজ পড়েন তাদের পছন্দ করে না জঙ্গীরা। সে দৃষ্টিকোণ থেকে ঈদের জামাতে নাশকতার পরিকল্পনা করেছে জেএমবির জঙ্গীরা। তানোর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে রমজান আলী সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদের নামাজ পড়ে আসছে। তবে তার দুই ছেলে ইব্রাহীম ও ইসরাফিল এবং জামাতা রবিউল ইসলাম প্রায় এক বছর ধরে জেএমবির কর্মকা-ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে এক বছর আগে ইসরাফিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়াগোলা গ্রামের বিয়ের পর থেকে তারা জেএমবির কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে। ইসরাফিলের স্ত্রীর বড় ভাইরা জেএমবির সক্রিয় সদস্য বলে জানান ওসি। প্রসঙ্গত, গত রবিবার গভীর রাতে পুলিশ তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে রমজানের বাড়ি ঘিরে অভিযান চালায়। সেখান থেকে চার শিশুসহ ১২ জনকে আটক করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
×