স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘœ যাতায়াত নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে আয়োজিত এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি নৌ-পথের নিরাপত্তায় দেশের ২৫টি স্পর্শকাতর স্থানে মনিটরিং জোরদার করারও দাবি জানানো হয়েছে। নৌ-রুটে স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী, চরগজারিয়া পাইলট স্টেশন, কাপ্তাই হ্রদ এলাকা, চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, কাউখালী পাইলট স্টেশন, খুলনা, মংলা পাইলট স্টেশন, আংটিহারা/শেকবাড়িয়া পাইলট স্টেশন, মাওয়া-কাওড়াকান্দি, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, বাগাবাড়ি বন্দর, সদরঘাট নদী বন্দর, নারায়ণগঞ্জ, মীরকাদিম, টঙ্গী-আশুলিয়া-ডেমরা, ভৈরববাজার/আশুগঞ্জ, চামড়াঘাট, ছাতক, লেপসিয়া, খালিয়াজুড়ি, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াপাড় প্রভৃতি।
সংগঠনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়ার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। এ সময় তিনি নৌ, সড়ক ও রেলপথে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতকরণে আটটি জরুরী সুপারিশ উত্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, সরকার নানা ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করলেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। প্রতিনিয়ত সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি ঠেকাতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ঘরে-বাইরে তীব্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বিআইডব্লিউটিএ সাবেক পরিচালক এমদাদুল হক বাদশা বলেন, পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়। এ কারণে নৌ ও সড়কপথে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ হচ্ছে না। মিহির বিশ্বাস বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর বিধি-বিধানগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ না করায় নৌ দুর্ঘটনা সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা যাচ্ছে না। সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ শহীদ মিয়া বলেন, ঈদের এখনও ১০-১২ দিন বাকি আছে। কিন্তু চারদিকে যে আলামত দেখা যাচ্ছে, তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সরকারকে এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
জাতীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মুর্শিকুল ইসলাম শিমুলের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে সিটিজেন্স রাইট্স মুভমেন্টের মহাসচিব তুসার রেহমান, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল, জাতীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জসি সিকদার এবং সদস্য রাজন ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে উত্থাপিত আট দফা জরুরী সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশনসহ রাজধানীর সকল বাস টার্মিনালে সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। লঞ্চ, বাস ও ট্রেনের ছাদে যাত্রী পরিবহন এবং অনিবন্ধিত, ত্রুটিপূর্ণ, ফিটনেসের মেয়াদোত্তীর্ণ ও রুট পারমিটবিহীন লঞ্চ-বাস চলাচল বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের নির্বিঘœ সড়ক যোগাযোগের স্বার্থে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে নিরবচ্ছিন্ন ফেরি চলাচলে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চসহ ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষুদ্র নৌযান চলাচল বন্ধ, জনদুর্ভোগ এড়াতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল ও আরিচা মহাসড়কের যানজট রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, নৌপথে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য উপকূলীয় বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব প্রদান, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের পাশাপাশি উপকূলীয় জেলাগুলোর পুলিশ প্রশাসনকে নৌ নিরাপত্তায় সম্পৃক্তকরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে প্রতিঘণ্টায় টেলিভিশন-বেতারে ও সকল টার্মিনালে লাউড স্পীকারে আবহাওয়া বার্তা প্রচার এবং লঞ্চগুলোকে আবহাওয়া বার্তা মেনে চলাচলে বাধ্য করা।