ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ কি আরেকটি ঐতিহাসিক দিন গড়বে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৫ জুন ২০১৭

আজ কি আরেকটি ঐতিহাসিক দিন গড়বে বাংলাদেশ?

যতদিন গড়াচ্ছে বাংলাদেশ একটি করে ঐতিহাসিক দিনের উপহার দিচ্ছে। আজও কী বিরাট কোহলির ভারতকে সেমিফাইনালে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে, তাহলে আরেকটি ঐতিহাসিক দিনের রচনা করবে বাংলাদেশ, মাশরাফি বিন মর্তুজার বাংলাদেশ? নিজেদের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাওয়াতেই ঐতিহাসিক জয়ের দিন উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠেছে। বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টেই প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছে। এখন বাংলাদেশের সামনে ফাইনালে ওঠার সুযোগও রয়েছে। এ জন্য ভারতকে হারাতে পারলেই হয়। তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা অর্জনও হবে। আরেকটি ইতিহাস রচনা করার দিনও মিলবে। ১৯৮৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশ। সেই সময় ক্রিকেটে বাংলাদেশ জিতবে এটি যেন দুরূহ ব্যাপারই ছিল। তখন বড় ব্যবধানে যেন হার না হয় সেটিই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। দিন গড়াতে থাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও পরিবর্তন হতে থাকে। ধীরে ধীরে উন্নতি করতে থাকে। একটা সময় দুর্বোধ্য দল থাকা কেনিয়াকে দিয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে জয় শুরু। বড় দল হিসেবে কেনিয়াকেই প্রথমে হারায় বাংলাদেশ। ১৯৮৬ সালের মার্চ থেকে ১৯৯৮ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ দল টানা ২২ ম্যাচে জয় পায়নি। অবশেষে ১৯৯৮ সালের ১৭ মে কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথম জয় পায়। তখনকার সময়ে এই জয়টিই ছিল ইতিহাস রঞ্জিত। এরআগে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে যে ৪ এপ্রিল হল্যান্ডের সঙ্গে জেতার পর সেমিফাইনালে ৯ এপ্রিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা ও ফাইনালে ১৩ এপ্রিল কেনিয়াকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, সেটি তো ইতিহাসের পাতাতে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, থাকবে। এরপর বাংলাদেশ দল যে পরিবর্তন হচ্ছে তা বোঝা যায় ১৯৯৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। টেস্ট খেলুড়ে দল পাকিস্তানকে ৩১ মে হারিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস রচনা করে। দিন যেতে থাকে। বাংলাদেশ নতুন নতুন ইতিহাস তৈরি করতে থাকে। ২০০৪ সালের ১০ মার্চ জিম্বাবুইয়েকে প্রথমবার হারায়। একই বছর ২৬ ডিসেম্বর ভারতকে প্রথমবারের মতো হারায়। ২০০৫ সালের ৩১ জানুয়ারি জিম্বাবুইয়েকে দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজে হারায়। ২০০৫ সালের ১৮ জুন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকে আগমনী বার্তা জানিয়ে দেয়। ২০০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কাকে হারায়। একই বছর ২৫ মার্চ কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোন দলকে হোয়াইটওয়াশ করে। একই বছর ১৫ আগস্ট কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে কোন দলকে হোয়াইটওয়াশ করে। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে ওঠে। কয়েকদিন পরই ৭ এপ্রিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবারের মতো হারায়। ২০০৮ সালের ৯ অক্টোবর প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে হারায়। ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে টেস্ট খেলুড়ে কোন দলকে বিদেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করে। ২০১০ সালের ১০ জুলাই ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো হারায়। একই বছর ১৭ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মত পূর্ণ শক্তির কোন টেস্ট খেলুড়ে দলকে হোয়াইটওয়াশ করে। ২০১৫ সালের ৯ মার্চ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে। একই বছর ১৯ এপ্রিল পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো সিরিজে হারানোর পর ২২ এপ্রিল হোয়াইটওয়াশ করে। ২১ জুন ভারতকে হারিয়ে সিরিজে জেতে। ১৫ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সিরিজ জেতে। কয়েকদিন আগে ৯ জুন নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা তৈরি করে এবং সেমিফাইনালে খেলে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ঐতিহাসিক দিনগুলো আসে। আজ তাহলে আরেকটি ঐতিহাসিক অপেক্ষা করছে? ইতিহাস সাক্ষী, যখনই বাংলাদেশের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় কিংবা ভাল একটি ‘রিদমে’ থাকে তখন কোন প্রতিপক্ষই বাংলাদেশের সামনে টিকতে পারে না। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারত পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকাও পারেনি। ২০০৭ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পারেনি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার পর লজ্জা মিলেছে, সেই লজ্জা নিবারণের জন্য বড় একটি দলকে হারানো খুব দরকার। একটি জয় খুবই দরকার। তখন ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে ভারতকে হারানোর পর এমনই ‘রিদমে’ ছিল বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাকেও হারিয়ে ফাইনালে খেলেছে। শিরোপাও হাতের মুঠোয় ছিল। শেষ মুহূর্তে ৩ রান করা যায়নি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে যখন কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে ইংল্যান্ডকে হারানোর কোন বিকল্প ছিল না তখন ইংলিশদের হারিয়েছে। এরপর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থাকা দরকার। না হলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা হবে না। বাংলাদেশ দল যেভাবে উন্নতির রেখার শিখরে পৌঁছাচ্ছে, তাতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা দরকার। সেটি সম্ভব র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থাকলে। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ টি২০তেও একই দশা দেখা গেছে। যেই বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিল, এরপর পাকিস্তানকেও হারিয়ে ফাইনালে খেলে। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যখন বিদায় ঘণ্টা বাজতে বাজতে বেঁচে গেল বাংলাদেশ এবং সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা দেখা দিল। তারজন্য নিউজিল্যান্ডকে হারাতেই হবে। তখন ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও জিতেছে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এ মুহূর্তে যে কোন দলের চেয়ে ‘রিদমে’ আছে বাংলাদেশ। আর এই বাংলাদেশ এমন ‘রিদমে’ থাকা মানে ভারতও হারতে পারে। সেই হার হয়ে গেলেই হয়। বাংলাদেশ ফাইনালে খেলবে। আজ ভারতকে হারালেই সেই স্বপ্নের ফাইনালে উঠে যাবে বাংলাদেশ। ১৫ জুন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের পাতাতেও স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ঐতিহাসিক একটি দিনের দেখা মিলবে। আজ কী সেই ঐতিহাসিক দিন?
×