ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাশ্মীর কি আবার অশান্ত হয়ে উঠছে

প্রকাশিত: ০৭:১০, ১৪ জুন ২০১৭

কাশ্মীর কি আবার অশান্ত হয়ে উঠছে

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকা আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সেখানে মোতায়েন সৈন্যদের প্রতি বিক্ষুব্ধ জনতার ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা অহরহ ঘটছে। লোকসভার উপনির্বাচন উপলক্ষে রাজ্যের মুসলিম প্রধান এলাকাটিতে সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। কাশ্মীর উপত্যকায় ভারত সরকারের প্রতি কাশ্মীরীদের বিরোধিতা এতই তীব্র যে উপনির্বাচনে মাত্র ৭ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে। কাশ্মীরীদের বিক্ষোভ ভারত সরকার কিছুতেই দমাতে পারছে না। গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে একটু দম ফেলানোর চেষ্টায় সরকার সামাজিক মিডিয়া ও মোবাইল ফোন ড্যাটা সার্ভিসগুলোর ওপর মাসব্যাপী ব্লকেড দেয় যাতে করে সেগুলো ভিডিও আপলোড করার কাজে ব্যবহৃত না হতে পারে। কাশ্মীরের সাম্প্রতিক বিক্ষোভের আগে এই রাজ্যে পরিচালিত বিদ্রোহী তৎপরতা থেকে ভিন্ন। ১৯৯০-এর দশকের শেষ ভাগ ও ২০০০ এর দশকের প্রথমভাগে কাশ্মীরীদের বিদ্রোহী তৎপরতায় সাহায্যার্থে পাকিস্তান সশস্ত্র জিহাদীদের পাঠায়। ভারত নিষ্ঠুরভাবে তা দমন করে। লড়াইয়ে রক্ষণশীল হিসেবে প্রায় ৪০ হাজার নিহত হয়। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর খ-যুদ্ধ এখনও মাঝে মধ্যেই চলে। তবে কাশ্মীর উপত্যকায় গেরিলা যুদ্ধ কমে এসেছে। অবশ্য গত বছরের জুলাই থেকে সেখানে শুরু হয় আরেক গোলযোগ। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এক গেরিলা নেতার হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শত শত বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। এপ্রিল মাসে সৈন্য ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসগুলোতে। সরকার বিক্ষোভ দমনে চরম সহিংস পন্থার আশ্রয় নেয়। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর ছররা বুলেট ছুড়ে। এতে কয়েক ডজন লোক নিহত ও আহত হয়। আহতদের অনেকে অন্ধ হয়ে যায়। উপত্যকায় গেরিলারা এখনও আছে। তবে আগে যেখানে ওদের সংখ্যা ছিল কয়েক হাজার এখন তা কয়েক শতকে নেমে এসেছে। বেশির ভাগই তরুণ। এরা রাইফেল চুরি করে বা ছিনিয়ে নিয়ে অরণ্যময় পাহাড়ী অঞ্চলে আত্মগোপন করে আছে। সেখান থেকে তারা সমাজিক মাধ্যমগুলোতে তাদের বক্তব্য প্রচার করে। মাঝে মধ্যে সৈন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে মারাও যায়। কাশ্মীর উপত্যকার বিশেষ করে এর দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের মধ্যে এদের প্রতি প্রবল সহানুভূতি আছে। কেন্দ্র সরকার এতে সঙ্গতভাবেই উদ্বিগ্ন। তাই বলে বিক্ষোভকারীরা আজাদী বা স্বাধীনতার দাবি তুললেই সেটাকে সহিংসতার সমার্থক বলে গণ্য করা ঠিক নয়। হুরিয়াত কনফারেন্স নামে প্রায় ৩০টি দলের একটি কোয়ালিশন আছে যেটি ভারত থেকে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতা চায়। তবে সেটা শান্তিপূর্ণ পন্থায়। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন বেড়ে গেছে। সেই নির্বাচনে অনেক কাশ্মীরী পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বা পিডিপি নামে স্বাধীনতাকামী একটি দলকে ভোট দেয়। পিডিপি কাশ্মীর উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। কিন্তু কর্মী সমর্থকদের হতাশ করে দলটি হিন্দু প্রধান জম্মুতে বিপুল ভোটে বিজয়ী বিজেপির সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। এর ফলে ভোটারদের অনেকে পিডিপির ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পিডিপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমানে কাশ্মীরের অর্থমন্ত্রী হাসিব দ্রাবু বিজেপির সঙ্গে কোয়ালিশন গঠনে দলীয় সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেছেন কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চেয়ে ভাল অবস্থায় এখন আর কারোরই নেই। কিন্তু হুরিয়াত ও অন্যান্য স্বাধীনতাপন্থী দলের সঙ্গে সরকারের আলোচনায় বসার আশ্বাসসহ যত ধরনের আশ্বাস বিজেপি হাসিব দ্রাবুকে দিয়েছে উপত্যকায় ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মধ্যে তার সবই এখন শিকেয় তুলে রাখা হয়েছে। কাশ্মীরী জনগণের দাবি দাওয়ার প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল না হলে বিক্ষোভ প্রশমিত হওয়া তো দূরের কথা বরং তা দাবানলের আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×