ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রুমেল খান

পাতানো খেলা আর কত দিন?

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৪ জুন ২০১৭

পাতানো খেলা আর কত দিন?

দেশীয় ফুটবলের অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল। ভুটানের কাছে হেরে সেটা রসাতলেই চলে গেছে। এমনিতেই ফুটবলের অবস্থা করুণ, তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়া উঠেছে। আর সেই বিষফোঁড়ার নাম ‘পাতানো খেলা।’ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এই পাতানো ম্যাচের মূলোৎপাটন কোনকালেই করতে পারেনি। এখনও পারছে না। তবে মাঝে মধ্যে তারা একটু কঠোর হওয়ার চেষ্টা করে। গুটিকয়েক পাতানো খেলার হোতাদের শাস্তি-টাস্তি দেয়, আর বাকিরা রয়ে যায় আড়ালে। পার পেয়ে যায় আর কি। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে গত ২১ মে সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লীগের ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব লিমিটেড বনাম ফ্রেন্ডস সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের ম্যাচটি পাতানো হয়েছে বলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় (যদিও আর ৯টি ম্যাচ পাতানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল)। ফলে পাতানো ম্যাচের অভিযোগ উঠায় স্পন্সর প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানায়- কঠিন শাস্তি না হলে তারা স্পন্সরশিপ ফিরিয়ে নেবে। সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লীগের অচল চাকা সচল করতে চার বছরের জন্য পৃষ্ঠপোষকতার হাত বাড়িয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অবস্থিত ঢাকা মহানগরী ফুটবল লীগ কমিটির কার্যালয়টিও এ প্রতিষ্ঠানটি আধুনিকায়ন করে দিয়েছে। অতীতে পাতানো খেলা অনেক হয়েছে, কিছুর বিচারও হয়েছে, কিন্তু পাতানো খেলার কারণে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের সরে যাওয়ার হুমকি এটাই প্রথম। তাদের এই হুমকির প্রেক্ষিতেই নড়েচড়ে বসে বাফুফে। অভিযুক্ত পাতানো খেলা এবং অপরাধ চিহ্নিত করে সুপারিশ পেশ করার জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া) ও যুগ্ম সচিব দীন মোহাম্মদের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ইতোমধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগরী লীগ কমিটি গত ৫ জুন জরুরী এক সভায় মিলিত হয়। সে সভায় বিশদভাবে আলোচনা ও পর্যালোচনার পর লীগ কমিটির সদস্যদের খেলা দেখার মতামতের ভিত্তিতে ও তদন্ত কমিটির পেশকৃত সুপারিশ ও সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লীগের প্রণীত বাইলজের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী সর্বসম্মতিক্রমে যে সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয় তা বৃহস্পতিবার মহানগরী ফুটবল লীগ কমিটির অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী লীগ কমিটির চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ। সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে ১. গত ২১ মে অনুষ্ঠিত ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব লিমিটেড বনাম ফ্রেন্ডস সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের ম্যাচটি সন্দেহাতিতভাবে ন্যক্কারজনক পাতানো খেলা হিসেবে চিহ্নিত ও প্রমাণিত হওয়ায় বাইলজ মোতাবেক খেলাটি বাতিল বলে গণ্য করা হলো। ফলে কোন দলই এই খেলার পয়েন্ট পাবে না। অভিযুক্ত উভয়দলকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হলো, ২. অভিযুক্ত এই দুই দলকেই অবনমিত করে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে নামিয়ে দেয়া হলো, ৩. ইউনাইটেড ক্লাবের অধিনায়ক মশিউল কবির বাপ্পী এবং গোলরক্ষক নূর আলম আলীকে আগামী দুই ফুটবল মৌসুমের জন্য এবং একই ক্লাবের স্টপার দেওয়ান মোঃ জুয়েলকে আগামী এক ফুটবল মৌসুমের জন্য সকল প্রকার লীগ ও ফুটবল প্রতিযোগিতা এবং ফুটবল সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হলো, ৪. এএফসির বেতনভুক্ত এবং বাফুফের কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী পাতানো খেলার দায়ে অভিযুক্ত ফ্রেন্ডস সোশ্যাল ক্লাবের পক্ষে একটি টিভি চ্যানেলে বক্তব্য প্রদান করায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাফুফেকে অনুরোধ করা হলো। উল্লেখ্য, এবারের প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের শেষ দিনে স্বাধীনতা ক্রীড়াচক্র ১-১ গোলে পিডব্লিউডি’র সঙ্গে ড্র করে ১১ খেলায় ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা জেতে। অন্য ম্যাচে সাধারণ বীমা ২-০ গোলে বাংলাদেশ বয়েজকে হারিয়ে ১১ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে অবনমন এড়ায়। কিন্তু এ ম্যাচে হেরে গেলে অবনমনের কোপ পড়ত তাদের ওপরই। ৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে অবনমিত হয় বাড্ডা জাগরণী সংসদ। কিন্তু সাধারণ বীমার কল্যাণেই একটি পাতানো ম্যাচ সামনে চলে আসে। কমলাপুর স্টেডিয়ামে সেদিনের ম্যাচটি ছিল ঢাকা ইউনাইটেডের সঙ্গে ফ্রেন্ডস ওয়েলফেয়ারের। এই ম্যাচ চলাকালীন সাধারণ বীমার লোকজন ‘পাতানো ম্যাচ’ বলে হৈচৈ করেছিল। ঢাকা ইউনাইটেড যে গোল দু’টি হজম করে সেগুলোও সন্দেহজনক। একটি ম্যাচ নিয়ে হৈচৈ হলেও প্রথম বিভাগের বেশকিছু ম্যাচ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে পাতানো খেলা হয়েছে অনেকগুলো। কিন্তু লীগ কমিটির কর্তারা সেটা জেনেশুনেও আগ বাড়িয়ে খতিয়ে দেখেনি কি হচ্ছে কমলাপুর স্টেডিয়ামে। ফুটবল অঙ্গনে চাউর হয়েছে অন্তত ১০টা পাতানো খেলা হয়েছে। অথচ শাস্তি হলো মাত্র একটি ম্যাচের।
×