ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেলবোর্নের প্রতিশোধ বার্মিংহ্যামে নেয়া যাবে?

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৪ জুন ২০১৭

মেলবোর্নের প্রতিশোধ বার্মিংহ্যামে নেয়া যাবে?

সবার মনে একটিই প্রশ্ন, মেলবোর্নের প্রতিশোধ কী বার্মিংহ্যামে নেয়া যাবে? বাংলাদেশ কী পারবে বৃহস্পতিবার বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়ে দিতে? হারিয়ে দিলেই যে প্রতিশোধ নেয়া হয়ে যায়। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। দুইবছর আগে কথা। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে বিশ্বকাপ হলো। সেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। মেলবোর্নে ১৯ মার্চ ভারতের বিপক্ষে লড়াই হলো। কিন্তু বিশ্ব সেদিন দেখল শুধু এগারোজন নয়, আরও অনেকেই সেদিন ভারতের হয়ে খেললেন। আর তাতে করে বাংলাদেশ হারল। কিন্তু সেই ক্ষত কোনভাবেই ক্রিকেটারদের মন থেকে মোছার কথা নয়। আসলে কারও মন থেকেই মোছার কথা নয়। এবার আরেকটি বিশ্বমঞ্চ। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মঞ্চ। এটিও ওয়ানডে ফরমেটের খেলাই। আর তাই সবার মনেই মেলবোর্নের স্মৃতি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। সেদিন কী হয়েছিল? বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটিতে আম্পায়ার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। তাতেই পুরো জাতি যেন রেগে ক্ষেপে গিয়েছিল। যাওয়ারই কথা। ভারতের ইনিংসে বিতর্কিত নো বল থেকে শুরু করে মাহমুদুল্লাহর আউট হওয়াসহ আম্পায়ারদের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি, ম্যাচ যে ভারত শেষ পর্যন্ত জিতে নিয়েছে। সেমিফাইনালে উঠে গেছে। মেলবোর্নের এমএসজি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি হয়েছিল। ভারত যখন ব্যাট করছে তখন রুবেলের ফুলটস বলে ইমরুল কায়েসের হাতে রোহিত শর্মা ধরা পড়েন। কিন্তু কোমরের ওপরে বল উঠেছে দাবি করে ‘নো বল’ ডাকেন আম্পায়াররা। ইংল্যান্ডের আম্পায়ার ইয়ান গোল্ডের এই সিদ্ধান্তে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা। তখন ধারাভাষ্য দিতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বসেরা সাবেক স্পিনার, কিংবদন্তি শেন ওয়ার্নও বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলটি খেলার সময় রোহিত ঝুঁকে ছিলেন উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেন, ‘নো বল দেয়ার মতো যথেষ্ট উঁচুতে ছিল না বলটি।’ এমনও বলেন শেন ওয়ার্ন। এমন সময় রোহিত ‘নতুন জীবন’ পান, যখন ভারতের রান ৩ উইকেটে ১৯৬, রোহিতের রান ৯০। সেই রোহিত শেষ পর্যন্ত ১৩৭ রান করেন। ভারত ৩০২ রান করে ফেলে। সবচেয়ে মজার বিষয় নো বল ডাকেন আসলে স্কয়ার লেগে থাকা আম্পায়ার। আলিম দার ছিলেন সেখানে। কিন্তু ‘নো’ ডাকলেন গোল্ড। এটিই সবাইকে এ ‘নো’ নিয়ে বিতর্কে ভাসিয়েছে। আবার সুরেশ রায়নার এলবিডাবলিউ নিয়েও আছে বিতর্ক। শুধু রোহিতের আউটটিই নয়, বাংলাদেশ ইনিংসেও আম্পায়াররা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেন। আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহর আউটের সিদ্ধান্তও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দিনটিতেও মাহমুদুল্লাহ দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ শামির বলে মাঠের যে চারপাশের দড়ি (রোপ) থাকে, সেই দড়ির একেবারে কাছ থেকে ক্যাচ ধরেন শেখর ধাওয়ান। বোঝাই যাচ্ছিল, ধাওয়ানের পা দড়িতে লেগেছে। কিন্তু আউটের সিদ্ধান্তই দেয়া হয়েছে। তখন মাহমুদুল্লাহ ২১ রানে ছিলেন। বাংলাদেশ দল ৭৩ রানে ছিল। সবাই এ আউট দেয়া নিয়ে হতভাগ হয়ে যায়। কেউ নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সবাই যেখানে বুঝতে পেরেছে ধাওয়ানের পা দড়ি ছুঁয়েছে, সেখানে থার্ড আম্পায়ার বারবার দেখেও তা বুঝলেন না। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা যেন এবার ভেঙ্গেই পড়লেন। আর তাতে করে ১৯৩ রানেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। ‘দিনে দুপুরে ডাকাতি’র মতো অবস্থা হয়েছিল। রোহিতের সময় ‘নো’ বল ডাকা, রায়নার এলবিডাবলিউ না দেয়ার সঙ্গে মাহমুদুল্লাহর আউট দেয়া; সেই সময় চরম বিতর্ক তৈরি করেছিল। বিশ্বের সাবেক ক্রিকেটাররা ‘নো’ বলটি যে হয়নি, সেদিকটি নিয়েই বেশি সমালোচনা করেছেন। এরপর আবার বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে কখনই কোন দলের বিজ্ঞাপন জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হয় না। কিন্তু সেদিন, ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’ ভেসে ওঠে। আর তাতেই আসলে আইসিসির সমর্থনের বিষয়টিও সবার সমালোচনায় সঙ্গী হয়। তাইতো বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সেদিন বলেছিলেন, ‘মাঠে যা হয়েছে, তা তো আপনারা দেখেছেনই।’ চরম ক্ষোভ ও কষ্ট নিয়ে এমন কথা বলেছিলেন মাশরাফি। দলের ক্রিকেটাররা যে ভেঙ্গে পড়েছিলেন, তা বোঝাও গেছে। তবে আবার যখনই ভারতের বিপক্ষে লড়াই হবে, প্রতিশোধ নেয়ার একটা জেদও নিশ্চয়ই সেদিন মাথায় চড়ে বসেছিল। তাইতো বিশ্বকাপের পর ভারতকে পেয়েই সিরিজ হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। মনের ক্ষুধা মিটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। আনন্দে মেতেছে দেশ ও দেশের মানুষ। কিন্তু প্রতিশোধ কি নেয়া হয়েছে? হয়নি। সেই প্রতিশোধ নেয়া যেন এখনও বাকি আছে। কারণ সিরিজে হারানো গেলেও, বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে যে ভারতকে হারানো যায়নি। টি২০ বিশ্বকাপে সুযোগ এসেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। এবার আরেকটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে নকআউট পর্বে ভারতের বিপক্ষে খেলার সুযোগ ধরা দিয়েছে। ভারতকে হারিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগও ধরা দিয়েছে। পারবে বাংলাদেশ হারাতে? হারিয়ে প্রতিশোধ নিতে? ক্রিকেটারদের প্রতিশোধের কথা বললেই সবার মুখে একটা কথাই শোনা যায়, ক্রিকেট খেলায় প্রতিশোধ বলে কোন কথা নেই। আসলেই কী তাই? ক্রিকেটাররা আসলেই প্রতিশোধ নিয়ে কিছু ভাবেন না। তারা ভাবেন কিভাবে ম্যাচটা জেতা যাবে, সেটা নিয়ে। নিজে পারফর্মেন্স করে দলকে জেতাতে চান। তবে দেশবাসী কিংবা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা কিন্তু এখনও সেই ম্যাচটির কথা মনে রেখেছে। ভারতকে যদি হারিয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠে যায় বাংলাদেশ তাহলে দেশবাসী আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে। প্রতিশোধ নেয়ার উৎসবও হবে। এবার অবশ্য ভারতের পক্ষ নেয়ার মতো লোকও নেই বলা চলে। মাঠের ক্রিকেটটা ভাল মতো খেলেই ভারতকে জিততে হবে। সাধারণ হিসেবেই ভারত শক্তিশালী দল। বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই ভারতের চেয়ে এ রকম বৈশ্বিক আসরে পিছিয়ে থাকা দল। বিশেষ করে নকআউট পর্বের ম্যাচে তো আর বাংলাদেশ বারবার খেলে না। ভারত খেলে। তবে এবার ভারতকে বাংলাদেশের চেয়ে ভাল খেলেই জিততে হবে। এবার আর আইসিসি কিংবা আম্পায়ারদের কাছ থেকে কোন বিতর্কিত সুবিধা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আইসিসিতে ভারত এখন চাপে আছে। কয়েকদিন আগেই অর্থ বণ্টন নিয়ে ভারত ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) পড়েছে বিপাকে। তাই ভারত দলটি এবার মাঠের বাইরের কোন সুবিধাই ভোগ করতে পারবে না, বোঝাই যাচ্ছে। এ সুযোগ এখন বাংলাদেশ নিয়ে নিতে পারলেই হলো। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে রকম সাহস দেখিয়ে জয় তুলে নিয়েছে। সেমিফাইনালে এবার ভারতকেও হারিয়ে দেয়া গেলেই হলো। তাহলেই মেলবোর্নের প্রতিশোধ বার্মিংহ্যামে নেয়া হয়ে যাবে। পারবে বাংলাদেশ প্রতিশোধ নিতে?
×