ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নওগাঁয় বাংলাভাইয়ের সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ

লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে ভুয়া ভিসায় মানব পাচার

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৪ জুন ২০১৭

লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে ভুয়া ভিসায় মানব পাচার

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ১৩ জুন ॥ রানীনগরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসায় মানব পাচারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ভা-ারা গ্রামের জেএমবি সদস্য এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে। প্রত্যেক যুবকের কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ওমানে ৩০ হাজার টাকা বেতনে কাজ পাইয়ে দেয়ার চুক্তিতে বিল্ডিং ভিসা প্রদান করেন স্থানীয় দালাল এমদাদুল। কিন্তু ওমানে গিয়ে সেখানকার দালালের মাধ্যমে জানতে পারে এসব বিল্ডিং ভিসা নয়, এগুলো মাজিরা ভিসা। যে ভিসার মাধ্যমে সেখানে কোন কাজ না পেয়ে দিনের পর দিন অনাহারে থেকে হাজতবাস করে অতিরিক্ত এক লাখ টাকা করে খরচ করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছে একই গ্রামের মোকছেদ আলী ও জামরুল হোসেন নামে দুই যুবক। আরেক যুবক এবাদুল এখনও ওমানের কারাগারে বন্দী অবস্থায় রয়েছে। জেএমবি সদস্যের দ্বারা প্রতারিত ভুক্তভোগী এই পরিবারগুলোতে আসন্ন ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। উপজেলার ভা-ারা গ্রামের দরিদ্র কৃষক শহীদুল ইসলাম মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, তার পুত্র মোকছেদ আলীকে ওমানে ৩০ হাজার টাকা বেতন পাইয়ে দেয়ার শর্তে গ্রামের এক সময়ের জেএমবি সদস্য (বাংলা ভাইয়ের ক্যাডার) এমদাদুল হক সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়ে একটি ভিসা ধরিয়ে দিয়ে বিদেশে পাঠায়। সেখানে গিয়ে তার ছেলে মোকছেদ ভুয়া ভিসায় কোন কাজ না পেয়ে সেখানে দালালের খপ্পরে পড়ে যায়। সেখানকার দালালরা তার সব কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে কারাগারে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে একটি মাইক্রোবাসে আটকে রাখে। সেই সঙ্গে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলে এক লাখ টাকা দাবি করে। সেখানে সপ্তাহ ধরে কিছু খেতে না দিয়ে মাইক্রোবাসের ভিতর তাকে আটকে রাখা হয়। কয়েকদিন অনাহারে থেকে তার জীবন সংশয় দেখা দেয়। পরে আরও ১ লাখ টাকা পাঠানোর পর সে দেশে ফিরে আসে। তার সঙ্গে যাওয়া একই গ্রামের জামরুল ইসলাম একই কারণে এক মাস ছয়দিন ওমানে জেল খেটে সম্প্রতি ফিরে এসেছে। আরেক যুবক এবাদুল এখনও ওমানের কারাগারে বন্দী জীবন যাপন করছে। ভুক্তভোগী মোকছেদ জানায়, দেশে ফিরে দালাল এমদাদুলকে ভুয়া ভিসার কথা এবং সেখানে তার কথা মত কাজ না পেয়ে অনাহারে বন্দী থাকার বিষয় জানিয়ে টাকা ফেরত চাইলে সে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। স্থ্ানীয় লোকজন জানায়, এমদাদুল হক বিগত ২০০৪ সালে এলাকায় বাংলাভাইয়ের তা-বের সময় জেএমবি সক্রিয় সদস্য ছিল। এলাকায় জেএমবির নারকীয় তা-বের পাশাপাশি মানুষের সম্পদ লুটপাটকারীদের একজন ছিল এই এমদাদুল। সে গ্রামের এসব সহজ-সরল যুবকদের বিদেশে পাঠানোর নামে স্থানীয় মসজিদে বসে টাকা নিয়েছে। জমি বেচে, ঋণ করে সন্তানকে বিদেশে পাঠাতে গিয়ে প্রতারিত হয়ে এই পরিবারগুলো আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে। তার প্রতারণার শিকার এসব যুবকদের পরিবারে আজ যেন ঈদের আনন্দ হারিয়ে গেছে। তারা জেএমবি সদস্য এমদাদুলের প্রতারণার বিচার দাবি করেছে।
×