ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙ্গাবালীতে টর্নেডো

তিন মিনিটে ৩ গ্রাম লণ্ড ভণ্ড

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৪ জুন ২০১৭

তিন মিনিটে ৩ গ্রাম লণ্ড ভণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ তিন মিনিটের টর্নেডোর আঘাতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সাগরপারের চরমোন্তাজ ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম ল-ভ- হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও সরকারী-বেসরকারী দফতরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ক্ষতির শিকার হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ঘটনার পর থেকে বহু মানুষ খোলা আকাশের নিচে সময় কাটাচ্ছে। অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনার পর পরই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং জরুরীভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে তিন মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাত পৌনে একটার দিকে টর্নেডো আঘাত হানে। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে ওঠার আগেই চরমোন্তাজ ইউনিয়নের স্লইসগেট বাজার থেকে শুরু করে উত্তরের বালিয়াবুনিয়া ও দাড়ভাঙ্গা গ্রাম তিনটি ল-ভ- হয়ে যায়। তিন মিনিট স্থায়ী টর্নেডোর আঘাতে গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চরমোন্তাজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হানিফ মিয়া জানান, দুই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ঘটনার পর থেকে বহু মানুষ খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। একজন মহিলা ও একজন শিশুসহ ১০ জন আহত হয়েছে। ঘরের নিচে চাপা পড়ে একটি গরু মারা গেছে। তিনি আরও জানান, টর্নেডোর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত চরমোন্তাজবাসীর জন্য দ্রুত সরকারী-বেসরকারী সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চরমোন্তাজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরে পড়েছে। বিদ্যালয়টির কম্পিউটার ও শিক্ষা সরঞ্জামসহ অন্যান্য সামগ্রীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন বিভাগের দফতর ও পুলিশ ক্যাম্পসহ কয়েকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দফতর বিধ্বস্ত হয়েছে। স্লুইসগেট বাজারের ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দাড়ভাঙ্গা বাজারের ১১টি ও বালিয়াবুনিয়া বাজারের ১৭টি দোকানঘরের চালা উড়ে গেছে। দাড়ভাঙ্গা বাজারের রেজাউলের মুদি দোকান ও সংলগ্ন বসতবাড়ির শুধু ভিটি পড়ে আছে। পুরো টিনের ঘর মাইলখানেক দূরে গিয়ে পড়েছে। টর্নেডোর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দাড়ভাঙ্গা গ্রামের রেজাউল হাওলাদারের স্ত্রী খালেদা বেগম বলেন, চোখের পলকে আমরা টিনের ঘরডা উড়াইয়া লইয়া গ্যাছে। এ্যাহোন মোগো থাহার কোন জায়গা নাই। খোলা আহাশের নিচেই থাকতে ওইবে। বাইলাবুনিয়া গ্রামের মিজান বয়াতী বলেন, টর্নেডো ৩ মিনিট ছিল। এর মধ্যে ঘরবাড়ি-দোকানপাট উড়িয়ে নিয়ে যায়। এতে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। কলাপাড়া নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া থেকে জানান, মাত্র চার মিনিটের প্রচ- ঝড়ো হাওয়ায় ল-ভ- হয়ে গেছে শ্রমজীবী রাসেলের গোছানো সংসার। বসতঘরটি প্রায় একশ’ ফুট দূরে পুকুরে পড়েছে। এখন পড়ে আছে খালি ভিটে। সোমবার রাত ১০টার দিকে রাসেলের এমন সর্বনাশ হয়ে গেছে। রাসেল বাড়ি ছিলেন না। ঢাকা শ্রমজীবীর কাজ করছেন। তার বাবা আলহাজ আনোয়ার হোসেন জানান, ঘুমিয়ে ছিলেন। আস্ত ঘরটি খুঁটিগুলোর মাঝখান দিয়ে ভেঙ্গে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। তারা সবাই পাটাতনের নিচে চাপা পড়েন। রাসেলের স্ত্রী মনিরা জখম হয়। তাদের দাবি টর্নেডো হয়েছে। বর্তমানে চারজনের এ পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে।
×