ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি বিভাগ থেকে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা

এলএনজির মূল্য নির্ধারণে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৪ জুন ২০১৭

এলএনজির মূল্য নির্ধারণে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ সরকারী পর্যালোচনায় ভরসা নেই এলএনজির মূল্য নির্ধারণে শেষ পর্যন্ত পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে জ্বালানি বিভাগ থেকে পেট্রোবাংলাকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী বছর শেষনাগাদ এলএনজি আমদানি শুরু হবে। দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে এলএনজি সংমিশ্রণে কি দাম হতে পারে তা এই প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হবে। এর আগে এলএনজি আমদানিতে সরকার গঠিত একটি কমিটি রাজস্বপুল গঠন করার সুপারিশ করেছিল। এলএনজি আমদানির ফলে দেশে গ্যাসের দর আগামী ১০ বছরে ৫ গুণ বেড়ে যাবে। সম্প্রতি ঘোষিত বাজেটে এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে কিছুটা কর অবকাশ সুবিধা দিয়ে দাম সহনীয় করার কথা বলা হচ্ছে। সরকারের জ্বালানি বিভাগ মনে করছে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করবে। এরপর ২০২৪ সালে আরও এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যোগ হবে। এই পরিমাণ এলএনজির সঙ্গে জাতীয় গ্রিডের গ্যাসের মূল্যহার সমন্বয় করলে দাম বেড়ে যাবে। একবারে উচ্চমূল্যের জ্বালানি ব্যবহার শুরু করলে দেশে বিদ্যুতের দামও বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। যা বড় আশঙ্কার বিষয় বলে মনে করছে সরকার। দেশে গ্যাসের মজুদ এবং ব্যবহারের হিসেব বিবেচনা করলে এলএনজি আমদানির কোন বিকল্প নেই। পেট্রোবাংলাই বলছে ২০২০-এর পর থেকে দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া না গেলে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে সকল খনির মজুদ একেবারে শেষের পথে থাকবে। সরকার এখন কেবলমাত্র বিদ্যমান খনিগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করে চলেছে। যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বড় রকমের হুমকি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মাহবুব মুরশেদকে প্রধান করে গঠিত পর্যালোচনা কমিটি এর আগে সুপারিশ দিয়েছে তাতে একটি রাজস্বপুল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি তাদের পর্যালোচনায় যে সুপারিশ দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, সরকার বছর ভিত্তিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে পারে। এখানের লভ্যাংশ এলএনজির ঘাটতি মেটাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে রাজস্বর সংস্থান করা যেতে পারে। এলএনজি স্ট্রিমের জন্য প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক এবং ভ্যাট সম্পূর্ণ রেয়াত করে এখান থেকে সংগৃহীত অর্থ রাজস্ব হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বাজেট বক্তৃতায় এলএনজি আমদানির ফলে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই দাম কি পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে তা পর্যালোচনার জন্যই অভিজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলাকে পরামর্শক নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে দেশে এখন গ্যাসের বিক্রয়মূল্য প্রতি হাজার ঘনফুটের দুই দমশমিক ১৭ ডলার। এখন সমপরিমাণ এলএনজি আমদানি মূল্য ৮ মার্কিন ডলার। এই সময়ে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করা দৈনিকের দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করলে রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জ, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যয় এবং সকল রকমের কর অন্তর্ভুক্ত করলে দাম পড়বে ৪ দশমিক ৩৫ ডলার। আর এলএনজি পৃথকভাবে বিক্রি করতে চাইলে দাম পড়বে ২৩ দশমিক ১১ ডলার। তবে সকল কর রেয়াত করলে এলএনজির দর পড়বে ১০ দশমিক ৪০ ডলার আর মিশ্রিত গ্যাসের দাম পড়বে ৪ দশমিক ১৪ ডলার। অর্থাৎ এখনই মিশ্রিত গ্যাসের দাম সরাসরি দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তবে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে এই দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে দেশে গ্যাসের সঙ্কট সামাল দিতে ক্রমান্বয়ে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। যত বেশি এলএনজি আমদানি হবে গ্যাসের দামও ততই বৃদ্ধি পাবে। জ্বালানি বিভাগ বলছে, ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর আমদানিকৃত এলএনজিকে রিগ্যাসিফিকেশন করে উৎপাদিত গ্যাস এবং দেশীয় গ্যাস ও এলএনজির মিশ্রণের ফলে মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) একজন সদস্যকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। এতে জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলা, বুয়েট এবং বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রতিনিধি ছিল। জ্বালানি বিভাগ গত ৩১ জানুয়ারি এলএনজি সংক্রান্ত একটি বৈঠকে প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে। দেশে এখন প্রতিদিনের গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ হয় সর্বোচ্চ দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সব সময় ঘাটতি থাকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ক্রমান্বয়ে এই ঘাটতির পরিমাণও বাড়তে থাকবে। সরকার প্রথম ধাপে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করছে। এছাড়া ভাসমান এবং স্থায়ী কয়েকটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চেষ্টা করছে। সরকার যত এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভর করতে তত জ্বালানির দাম বাড়বে।
×