ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৪ জুন ২০১৭

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল গ্রেফতার

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ গৃহকর্মীকে নির্যাতন, শ্রমিক পাচার ও মজুরি চাওয়ায় হত্যার হুমকির অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদুল ইসলাম গ্রেফতার হয়েছেন। সোমবার নিউইয়র্কের পুলিশ তাকে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করার কয়েক ঘণ্টা পর কুইন্স সুপ্রীমকোর্টে হাজির করা হয়। বিচারক ড্যানিয়েল লুইস ৫০ হাজার ডলারের বন্ড বা নগদ ২৫ হাজার ডলারে তার জামিন ঠিক করে দেন। তার পাসপোর্ট জব্দ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে নিউইয়র্কেও বাংলাদেশ মিশন থেকে শাহেদুল ইসলামের জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে। কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট এ্যাটর্নি রিচার্ড ব্রাউন জানিয়েছেন, সীমিত কূটনৈতিক দায়মুক্তিসহ কনস্যুলার অফিসার হিসেবে দায়িত্বরত শাহেদুলের বিরুদ্ধে এক বিদেশীকে এনে তার কুইন্সের বাসায় রেখে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মে পর্যন্ত বিনা মজুরিতে জোরপূর্বক কাজ করানোর ঘটনায় শ্রম পাচার ও নির্যাতনসহ অভিযোগ ৩৩ ধরনের ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১২ সালের শেষ দিকে শাহেদুল বাংলাদেশ থেকে মোহাম্মদ আমিন নামে একজনকে গৃহকর্মী হিসেবে নিউইয়র্কে এনে তার পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জব্দ করেন। তাকে দিয়ে দৈনিক ১৮ ঘণ্টা কাজ করালেও বিনিময়ে একটি পয়সাও দেয়া হয়নি। তিনি জানান, মজুরি দাবি করলেই আমিনকে মারধর করা হতো। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে কাজ ছেড়ে দেয়ার কথা বললে আমিনকে হত্যার হুমকিÑ এমনকি বাংলাদেশে তার বৃদ্ধা মা ও ছেলে-মেয়েকেও হত্যার হুমকি দেন। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে গত বছরের মে মাসে আমিন পালিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিচার চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনী কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কূটনৈতিক মর্যাদায় বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে ডেপুটি কনসাল জেনারেল যে আচরণ করেছেন, তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদ- ও প্রায় চার বছরের ওভারটাইমসহ বেতন ও যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করতে হবে। জামিন পেলে মামলার শুনানির জন্য আগামী ২৮ জুন শাহেদুলকে আবার আদালতে হাজির হতে বলে জানান এ্যাটর্নি ব্রাউন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান জানিয়েছেন, তারা ৫০ হাজার ডলারের বন্ড সংগ্রহ করতে সক্ষম হলেও শাহেদুল ইসলামের মুক্তির আনুষ্ঠানিকতায় আরও ২৪ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, আমিন গত বছর বাসা থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা প্রচলিত রীতি অনুযায়ী স্টেট ডিপার্টমেন্টকে অবহিত করেছি। গৃহকর্মী নিয়োগ থেকে পারিশ্রমিক-ভাতা ও ভ্রমণ ভাতার সবকিছুই ডেপুটি কনসাল জেনারেলের ব্যক্তিগতভাবে করার কথা। তাই বেতন একেবারেই পাননি বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি সত্য না মিথ্যা তা আমি বলতে পারব না। তা নিতান্তই শাহেদুলের ব্যাপার। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শাহেদুলের পাশে থাকবেন বলে জানান কনসাল জেনারেল। এর আগে ২০১৪ সালে একই ধরনের অভিযোগে নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলার নোটিস দেয়ার পর্যায়েই তিনি নিউইয়র্ক ছাড়েন। মামলাটি এখনও ঝুলে থাকলেও তার গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ গ্রিন কার্ড পেয়েছে।
×