ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সাক্ষী আবু তাহেরের জবানবন্দী

লাখাইয়ের লিয়াকত রঙ্গুমিয়াকে গুলিতে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৪ জুন ২০১৭

লাখাইয়ের লিয়াকত রঙ্গুমিয়াকে গুলিতে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হবিগঞ্জের দুই রাজাকার লাখাই থানা রাজাকার কমান্ডার মোঃ লিয়াকত আলী ও আলবদর কমান্ডার আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীর বিরুদ্ধে সপ্তম সাক্ষী আবু তাহের ওরফে আসু জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আসামি মোঃ লিয়াকত আলী আমার ফুফাত ভাই বাচ্চু মিয়া ও রঙ্গুমিয়াকে আটক করে। নাসিরনগর ডাকবাংলোর কাছে দত্ত বাড়ির খালের কাছে নিয়ে রঙ্গুমিয়াকে চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করে। এরপর লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে নৌকা যোগে চলে যায়। রঙ্গুমিয়ার ছেলে জুম্মন তাকে এ ঘটনাটি জানিয়েছে। অন্যদিকে আমার ফুফাত ভাই বাচ্চুমিয়াকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এ ছাড়া আসামিদ্বয় অষ্টগ্রাম থেকে পাকিস্তানী আর্মি নিয়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী হিন্দু অধ্যুষিত চ-ীপুরসহ চারটি গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে শতাধিক হিন্দুকে হত্যা করে শুনেছি। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে আংশিক জেরা করেছে। পরবর্তী জেরার জন্য আজ বুধবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার শেখ মোঃ আবদুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানাসহ ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী মোঃ আইয়ুব আলীর জেরা শেষ করেছে আসামিপক্ষ। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৯ জুন দিন নির্ধারণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃতে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশগুলো দিয়েছেন। এ সময় প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম, মুখলেসুর রহমান বাদল, সাবিনা ইযাসমিন খান মুন্নি ও রানা দাশগুপ্ত। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম আবু তাহের মিয়া ওরফে আসু। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭৪ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- ফান্দাউক, থানা- নাসিরনগর, জেলা-ব্রাক্ষণবাড়িয়া। আমি দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন তথ্য প্রদান ও সাহায্য-সহযোগিতা করতাম। আমাদের ফান্দাউক গ্রামের রঙ্গুমিয়া, আমার ফুফাত ভাই বাচ্চু মিয়াসহ আরও অনেক লোক স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে। ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহে কোন একদিন সকাল আনুমানিক ১০টার সময় আমি ও আমার বাড়ির খলিল মিয়া ফান্দাউক বাজারের পোস্ট অফিসের সামনে নারায়ণ মালাকারের চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলাম। এই সময় হঠাৎ আসামি মোঃ লিয়াকত আলী ও আসামি আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী তাদের সঙ্গীয় ১০-১২ জন রাজাকার ফান্দাউক পোস্ট অফিসের সম্মুখে রঙ্গুমিয়ার পান দোকানের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা আমার ফুফাত ভাই বাচ্চু মিয়াকে আটক করে। এরপর রঙ্গুমিয়াকে তার পানের দোকান থেকে আটক করে। দুইজনকেই ফান্দাউক বাজারের পূর্বদিকে কমিউনিটি সেন্টারে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখে। আমি বাড়িতে গিয়ে বাবাকে ঘটনাটি বলার পর দুপুর ১২টার দিকে আমার বাবা তার ভাগিনা বাচ্চুমিয়াকে ছাড়িয়ে আনার জন্য ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নাসিরনগর থানার উদ্দেশে রওনা দেয়। ওই দিন বিকেল আনুমানিক সাড়ে তিনটা-চারটার দিকে হঠাৎ করে রঙ্গুমিয়ার বাড়ি থেকে কান্নার শব্দ পেয়ে তার বাড়িতে যাই। সেখানে রঙ্গুমিয়ার ছেলে জুম্মন মিয়া ও তার আত্মীয় খেলূ মিয়াকে (বর্তমানে মৃত) কান্নাকাটি করতে দেখি। জুম্মন মিয়া কাঁদতে কাঁদতে তার বাবাকে রাজাকার ক্যাম্প থেকে নৌকায় তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বলে। সে আরও জানায়, তার বাবাকে যখন আসামি ও রাজাকাররা নৌকায় করে তুলে নিয়ে যায় তখন সে ও খেলু মিয়া তার বাবার খোঁজে নাসিরনগর থানার উদ্দেশে রওনা করে নাসিরনগর ডাকবাংলোর কাছে দত্তবাড়ির খালের কাছে পৌঁছলে রঙ্গুমিয়াকে বহনকারী নৌকাটিকে দেখতে পায়। সে আরও জানায়, দুইজন রাজাকার তার বাবাকে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় নৌকার ওপর দাঁড় করায় ও আসামি লিয়াকত আলী তার হাতের অস্ত্র দিয়ে তার বাবাকে গুলি করে লাশ ওই খালে ফেলে দেয়। এরপর আসামি ও রাজাকাররা নৌকা নিয়ে চলে যায়। জুম্মন মিয়া তার বাবার লাশ খোঁজে, কিন্তু খালে স্রোত থাকায় তার লাশ খুঁজে না পেয়ে কান্নাকাটি করে বাড়ি চলে আসে।
×