ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে ঘরে ফেরা

বাসের টিকেটের জন্য হাহাকার, বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৪ জুন ২০১৭

বাসের টিকেটের জন্য হাহাকার, বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অগ্রিম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয়দিনে ট্রেনের টিকেট পেয়েছেন বেশিরভাগ সাধারণ যাত্রী। তবে এসি কেবিন ও চেয়ারের টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ ছিল অনেকের। এমন বাস্তবতায় যাত্রীরা বারবার বলছিলেন, এসি টিকেট গেল কই? রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এসি টিকেট কম থাকায় সঙ্কট। তবে সাধারণ টিকেট পেয়েছেন যাত্রীরা। বাসে দ্বিতীয়দিনে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন বেশিরভাগ যাত্রী। অনেক কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি শেষ হওয়ার কথা জানানো হয় দুপুরের মধ্যেই। অর্থাৎ ২২-২৫ জুন পর্যন্ত টিকেট বিক্রি শেষ হওয়ার খবর পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন যাত্রীরা। ট্রেনের এসি কেবিন ও চেয়ারের টিকেট সঙ্কট ॥ রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন এলাকায় এসি কেবিন ও চেয়ারের টিকেট না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে অনেককেই। তবে সাধারণ টিকেট ও শোভন চেয়ার যারা চেয়েছিলেন তাদের অনেকেই পেয়েছেন। বাড়ি ফিরেছেন হাসিমুখে। ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয়দিনে কমলাপুর রেলস্টেশনে এমন চিত্র দেখা গেছে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ কাটানো মানেই ঘরে ফিরতে হবে। এ জন্য বাস কিংবা ট্রেন টিকেট চাই-ই-চাই। তাইতো মধ্যরাত থেকে ট্রেনের টিকেটের জন্য অনেকেই কমলাপুরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। সকালে দীর্ঘ লাইনের বহর জানান দিচ্ছিল ২২ জুনের টিকেটের চাহিদা অনেক বেশি। বেলা ১১টার দিকে প্লাট ফরম ছাপিয়ে লাইন আসে মূল সড়কের কাছাকাছি। তবে আজ আকাশে ছিল রোদের ঝিলিক। গরমের তীব্রতাও খুব একটা ছিল না। তাইতো টিকেট হাতে পেতে সময় লাগলেও গরমের বিড়ম্বনা খুব একটা ছিল না। ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকেট বিক্রির জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে ২৩টি কাউন্টার খোলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মহিলাদের জন্য। সকাল আটটা থেকে শুরু হয় টিকেট বিক্রি। ২৬ জুন ঈদ ধরে ১২ জুন থেকে পাঁচ দিনব্যাপী টিকেট বিক্রি শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকেট পাবেন। যা গতবার ছিল পাঁচে। কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ঈদ উপলক্ষে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ৫৫ হাজার টিকেট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ৩১টি আন্তঃনগর ট্রেনের ২২ হাজার ১২২টি টিকেট দেয়া হচ্ছে যাত্রীদের। তবে চাহিদা বেশি থাকায় সবাইকে টিকেট দেয়া সম্ভব হয় না। তিনি জানান, এসি কেবিন ও চেয়ারের টিকেটের চাহিদা অনেক বেশি। তাই হয়ত কেউ কেউ না পেয়ে অভিযোগ করছেন। বাস্তবতা হলোÑ স্বল্পতার কারণে সবাইকে তো এসি টিকেট দেয়া সম্ভব নয়। তবে সাধারণ টিকেট যতক্ষণ আমাদের হাতে থাকবে ততক্ষণ যাত্রীরা পাবেন বলে জানান তিনি। প্রতিবছরের মতো এবছরও সাধারণ যাত্রীদের জন্য ট্রেনের টিকেট বরাদ্দ আছে ৬৫ ভাগ। এর মধ্যে ২৫ ভাগ টিকেট অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাকি ১০ ভাগের মধ্যে ৫ ভাগ ভিআইপি কোটা ও পাঁচ ভাগ রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ। রেলসূত্রগুলো বলছে, কোটার অনেক বেশি ভিআইপি চাহিদা থাকে। সঙ্গত কারণেই এসি কেবিন ও চেয়ারের টিকেট খুব কম যাত্রীই পান। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুট ও খুলনার ট্রেনের টিকেটের প্রত্যাশীদের ভিড় ছিল বেশি। চট্টগ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের টিকেটের চাহিদা কম। অনেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (অনেকে এসি) বগির টিকেটের আশায় থাকলেও কাউন্টার খোলার পরপরই বিক্রি শেষ হয়ে যায় বলে অভিযোগ শোনা যায়। সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরুর পর ১০টার মধ্যে রাজশাহী রুটের সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট শেষ হওয়ার কথা কাউন্টার থেকে জানানো হয়। এনিয়ে যাত্রী ও কাউন্টার মাস্টারের মধ্যে বাগবিত-ার ঘটনাও ঘটেছে। খুলনার টিকেটের জন্য আগের দিন রাত তিনটায় স্টেশনে আসেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শাহাজান মিয়া। তিনি জানান, এসি কেবিন অথবা চেয়ার কোনটাই পাইনি। কাউন্টার থেকে বলা হলো টিকেট নেই। বিক্রি হয়ে গেছে। তাই চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। রাজশাহীর টিকেটের জন্য অফিস শেষে সোমবার বিকেলে সোজা স্টেশনে আসেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা নাজমুল আলম। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় টিকেট পেয়েছেন। এখান থেকেই আবার অফিসে যাবেন তিনি। টিকেটের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। হাতে পেয়ে অনেক ভাল লাগছে। চট্টগ্রামের চারটি টিকেট পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন তামান্না রহমান। তিনি জানান, ভোরে এসে লাইনে দাঁড়াই। বেলা ১১টায় হাতে টিকেট পাওয়ার পর সব কষ্ট মিটে গেছে। টিকেট প্রত্যাশীরা জানান, রাজশাহীতে প্রতিদিন চারটি করে ট্রেন, প্রতিটি ট্রেনে দুটি করে ৮টি এসি বগি। ৯২টি করে হিসাব করলে ৭৩৬টি আসন থাকে। কিন্তু আমার আগে ২৫ জন টিকেট নিয়েছেন। তারা সবাই ৪টা করে এসি টিকেট কিনলেও তো সব টিকেট শেষ হওয়ার কথা নয়। এসি টিকেটগুলো গেল কই? নাটোরের যাত্রী লালমনি এক্সপ্রেসের এসি টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ করলেন মোঃ রইস উদ্দিন নামে আরেকজন। তিনি বলেন, আমার সিরিয়াল ৯৭। আমাদের এ কাউন্টারে টিকেট বিক্রি শুরু হওয়ার পর ৪ জন এসি টিকেট কিনেছে। এরপরই বলছে, টিকেট নাইÑ এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? একটা ট্রেনে কি এত কম টিকেট থাকে। এ বিষয়ে ১০ নম্বর কাউন্টারের বিক্রেতা বলেন, চারটা কাউন্টার থেকে টিকেট দেয়া হয়। এ কারণে টিকেট শেষ। রাজশাহীর পদ্মা ও সিল্কসিটি ট্রেনের সব টিকেট বিক্রি সকাল ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এরপর শুধু ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকেট দেয়া হয় যাত্রীদের। কমলাপুর স্টেশনে টিকেট বিক্রি কার্যক্রম ঘুরে দেখে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, টিকেট বিক্রি শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। টিকেট প্রত্যাশী কেউ তার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। যাত্রীদের অনেক ভিড় আছে। তাদের জিজ্ঞেস করলাম, কোন অভিযোগ আছে কি না, তারা বলেছেন কোন অসুবিধা নাই। যাত্রীরা যেন ঠিকমতো বাড়ি যেতে পারে সে জন্য আমাদের সব কর্মসূচী সঠিকভাবে নেয়া আছে। এসি কোচের টিকেট না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী বলে, এসি কামরার টিকেট সংখ্যা সীমিত হওয়ায় সবাইকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় পার্বতীপুর এবং রাজশাহী স্পেশাল নামে ঈদের বিশেষ দুটি ট্রেন ২৩ জুনের পরিবর্তে ২২ জুন থেকে চলবে বলে জানান মন্ত্রী। রেলমন্ত্রী এ সময় বলেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে এবার ২৩টি টিকেট কাউন্টার খোলা হয়েছে যার মধ্যে ২টি মহিলা কাউন্টার। কালোবাজারী রোধে জিআরপি, আরএনবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে। তাছাড়া রেল মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন যাতে টিকেট বিক্রিতে কোন অনিয়ম না হয়। বাসের টিকেট মিলছে না বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয়দিনে অধিকাংশ যাত্রী কাক্সিক্ষত টিকেট না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বিশেষ করে ২২, ২৩ ও ২৪ জুনের টিকেটের চাহিদা খুবই বেশি। তাছাড়া এসি বাসের টিকেটের চাহিদা তো বলার কিছু নেই। এক কথায় এসি টিকেট নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি চলছে। অনেকেই ফিরে গেলেও কেউ কেই আবার অন্য দিনের টিকেট কেটে নিয়ে গেছেন। আবার দ্বিতীয়দিন শেষ হতে না হতেই পাঁচদিনের সব টিকেট শেষ হয়ে গেছে বলে জানাচ্ছে কাউন্টার কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দুপুরের আগেই ২২, ২৩ এ ২৪ তারিখের টিকেট নেই বলে জানানো হয়। কিন্তু এর তিন ঘণ্টা যেতে না যেতেই ২১ ও ২৫ তারিখের টিকেটও শেষ হয়ে গেছে। তবে দুপুরের পর কাউন্টারগুলোতে খুব একটা ভিড় দেখা যায়নি। এদিকে কাউন্টার কর্তৃপক্ষ সিন্ডকেট করে টিকেট আটকে রাখছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তারা বলছেন, কাউন্টার থেকে টিকেট আটকে রাখা হচ্ছে। যে দিনের টিকেটের চাহিদা বেশি, সেই দিনের টিকেট আটকে রাখছেন তারা। পরে বেশি দামে বিক্রি করছেন। আবার বেশি দামে টিকেট বিক্রিরও অভিযোগ মিলেছে। স্বপন নামের জয়পুরহাটের টিকেট কিনতে আসা এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি হানিফ কাউন্টারে টিকেট নিতে এসেছি। এখান থেকে বলা হচ্ছে ২১-২৫ তারিখের কোন টিকেট নেই। ঈগল, জেআর, রয়েল সব বাস কাউন্টার থেকেই বলা হচ্ছে ২২-২৪ তারিখের কোন টিকেট নেই। এছাড়া হানিফ কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে ২১-২৫ কোন টিকেট নেই। হানিফ কাউন্টারের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, হঠাৎ করে একটু চাপ বেড়েছে। এ জন্য টিকেট বিক্রি বেশি হয়েছে। টিকেট আটকে রাখার অভিযোগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ রকম কিছু ঘটছে না। আর যদি এমন কিছু দেখি তাহলে দায়ীকে বহিষ্কার করা হবে।’
×