ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্ধার কাজ চলছে

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৪ জুন ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্ধার কাজ চলছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসে চার সেনা সদস্যসহ ৩৯ ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সচিবালয়ে মঙ্গলবার পাহাড় ধসের পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, আরও দুইজন সেনা সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার কাজ চলছে। আজ বুধবার দুর্যোগমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম সেখানে পরিদর্শনে যাচ্ছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর চার সদস্য শাহাদাত বরণ করেছেন। দুই সেনা সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। এই পর্যন্ত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ৩৯ ব্যক্তি মারা গেছেন। আরও অনেকে হয়তো পাহাড়ের মাটিচাপায় রয়েছেন। পাহাড়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে গিয়ে সেনাবাহিনীর যে চার সদস্য শহীদ হয়েছেন তারা হলেনÑ মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, কর্পোরাল আজিজ ও সৈনিক শাহীন। বাংলাদেশে এটা প্রথম নজির যে উদ্ধার কাজ করতে গিয়ে ৪ বীর সৈনিক শহীদ হয়েছেন। উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জাতীয় বীর সৈনিক বন্ধুরা উদ্ধার কাজে এখন পর্যন্ত তৎপর রয়েছেন। এছাড়া ফায়ার ব্রিগেড, স্বেচ্ছাসেবক, দলীয় কর্মীরা উদ্ধার কাজে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেনাবাহিনীর ৬ সদস্য ছাড়া সেখানে বসবাসকারী আরও ৩৩ ব্যক্তি পাহাড় ধসে মারা গেছেন। সেখানে এখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও মৃদু বাতাস হচ্ছে। তার মধ্যেও উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ী এলাকায় ইতোমধ্যে ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খেলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চার থেকে সাড়ে চার হাজার মানুষকে উদ্ধার করে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে রেখেছি। সেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ঘরে ফিরে যাবে তত দিন তা অব্যাহত থাকবে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের (পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত) সাহায্যের জন্য ইতোমধ্যে আমরা ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছি। ১২ লাখ টাকা ইতোমধ্যে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করার জন্য দেয়া হয়েছে। ত্রাণমন্ত্রী বলেন, আপাতত প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে, আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ৩০ কেজি করে চাল ও শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। আমাদের খাদ্যের কোন অভাব নেই। সাহায্য করতে কোন কৃপণতা নেই। যখন যেটা যেখানে প্রয়োজন হবে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা সেটা করতে সক্ষম হব। একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না। তিনি বলেন, নিহতের পরিবারকে সান্ত¡না দেয়ার মতো আমাদের কোন ভাষা নেই। আল্লাহ যেন তাদের শোক সহ্য করার শক্তি দেন। বীর বাহাদুরসহ যেসব স্থানীয় এমপি সংসদে ছিলেন তারা এলাকায় চলে গেছেন উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করার জন্য। সরেজমিনে দেখতে আজ আমরা রাঙ্গামাটির উদ্দেশে রওনা হব। গিয়ে দেখব কীভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ভাইবোনকে উদ্ধার করতে পারি, সহযোগিতা করতে পারি। আমরা সেটা করব। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন। সে অনুযায়ী কাজ চলছে, একটি মানুষও যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেভাবে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৃষ্টি শুরুর সময় থেকে কি প্রস্তুতি ছিলÑ জানতে চাইলে মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী বলেন, যখন ৩ নম্বর সিগন্যাল থাকে প্রত্যেক জেলা প্রশাসনকে বলে দেয়া হয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। স্বেচ্ছাসেবক ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখার জন্য বলা হয়। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীকে অবহিত করে রাখার জন্যও বলা হয়। তিনি বলেন, অনেক সময় ইচ্ছা করলেও মানুষকে সরিয়ে নেয়া যায় না। পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার সতর্ক করা হয়। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে চায় না। অনেক সময় জোর করে পুলিশ দিয়ে আনতে হয়। সেখানে দুইদিন ধরে মাইকিং হচ্ছে। আমাদের প্রস্তুতি শতভাগ থাকে। তারপরও অনেকে (আশ্রয় কেন্দ্রে) আসতে চায় না। তবে আগে মানুষকে আহ্বান জানানো হলেও দুর্যোগের সময় আশ্রয় কেন্দ্রে আসত না, এখন স্বেচ্ছায় আসে বলেও জানান মন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোঃ শাহ কামাল, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) শাকিল নেওয়াজ উপস্থিত ছিলেন।
×