ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিদস্যুদের মদদ ॥ উচ্ছেদ করেও ঠেকানো যাচ্ছে না

চট্টগ্রামে ১৩ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে হাজারও পরিবার

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৪ জুন ২০১৭

চট্টগ্রামে ১৩ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে হাজারও পরিবার

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের ১৩টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসে সহায়তা করছে পুলিশ প্রশাসনসহ ওয়াসা, বিদ্যুত ও কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষের অসাধুরা। তবে পাহাড়ে ফাটল দেখা দিলেও ভূমিদস্যুরা ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ ও হতদরিদ্র মানুষকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ বসবাসকারীদের। মঙ্গলবার সকালে মতিঝর্ণার টাঙ্কির পাহাড় ও বায়জীদের মিয়ার পাহাড় থেকে প্রায় ১৬০টি পরিবারকে সরিয়েছেন জেলা প্রশাসনের ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান টিম। সীতাকু-ের আটটি ইউনিয়ন এলাকায় মাইকিং করে পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরানো হয়েছে বলে জানালেন সীতাকু-ের এসি ল্যান্ড রুহুল আমীন। মৃত্যুআতঙ্কে পাহাড়বাসীরা ঘর ছাড়তে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ মাটির বস্তা দিয়ে আবাসগৃহ ঠেকানোর চেষ্টা করছে। টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড়বাসীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত রবিবার থেকে সাগরে নি¤œচাপের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সোমবার গভীর রাতে আঘাত হানে। চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও নগরীর ১৩টি পাহাড় থেকে সরছে না মানুষ। গত দুই দিনে অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে পাহাড়ের মাটি অনেকটা নরম হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে পাহাড়ের চূড়ায় গর্ত করে পাহাড় খেকোরা কৌশলে পাহাড় কাটার চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে ফিরোজশাহ মিনার এলাকায় পাহাড় ধসে দুজন আহত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নগরীর লালখান বাজার ও মতিঝর্ণা এলাকা থেকে প্রায় ৬ শ’র বেশি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে, আকবরশাহ হাউজিং সোসাইটি, নাছিরাঘোনা, সুন্দরীর পাহাড় মিলে প্রায় ২ শ’ পরিবার, টাইগার পাসের বাটালী হিল, এবকখানের পাহাড়ে রয়েছে শতাধিক পরিবার, বায়জীদের রৌফাবাদের মিয়ার পাহাড়ে রয়েছে প্রায় ৭৫ পরিবার, আকবরশার রেলের পাহাড়ে রয়েছে প্রায় অর্ধশত পরিবার। নগরীর ১৩টি পাহাড়ে রয়েছে প্রায় হাজারো পরিবার। সে অনুযায়ী মৌখিক ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে সরে যাবার জন্য বারবার বলা হয়েছে। উচ্ছেদে সরানো হয়েছে প্রায় দেড়শ পরিবারকে। এদিকে, টাইগারপাস রেলের পাহাড় তথা বাটালী হিল, আকবরশাহর বেলতলী ঘোনা ও রেলের পাহাড় এবং মতিঝর্ণা এলাকায় থাকা রেলের পাহাড়ের পাদদেশে থাকারা অন্যত্র সরে যেতে নারাজ। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল হাসান ও মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, মতিঝর্ণা, বাটালী হিল ও বায়জিদের মিয়ার পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার প্রায় ১৬০টি পরিবারকে সরানো হয়েছে। গত ২ দিন ধরে এসব পাহাড়ী এলাকায় মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছিল। বিদ্যুত, গ্যাস ও ওয়াসার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ এসব অপরাধে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে তালিকা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১২ সালের ২৭ জুন আওয়ামী লীগের সাইন বোর্ডে স্থানীয় ইয়াসিন গং কর্তৃক কর্তনকৃত পাহাড় ধসে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ও রেলের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হলেও পরিবেশ অধিদফতরের উদাসীনতার কারণে ভূমিদস্যু বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। ২০১১ সালের ১ জুলাই টাইগার পাস এলাকায় বাটালী হিলের প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। রেল কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট দেয়াল ঘেঁষে বস্তিঘর নির্মাণ করায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে হতদরিদ্ররা দাবি করেছে। এর আগে ২০০৭ সালের ১২ জুন পাহাড়তলীতে জিইআর শপের দেয়াল ধসে লাগোয়া বস্তির ১২ জন মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এদিকে, টাইগার পাস পুলিশ বক্সের উত্তর ও পূর্ব পাশে পাহাড়ের পাদদেশে এবং মাঝামাঝিতে গড়ে উঠা কাঁচা ঘর, তুলাতুলি ও ফয়’স লেক এলাকার ১, ২ ও ৩ নং ঝিল এলাকায় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কাঁচা ও সেমি পাকা ঘর। এসব ঘরে বসবাস করছে শত শত পরিবার। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এসব পরিবারের লোকজনকে কম ভাড়ায় থাকতে সহায়তা করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে থাকা ভূমিদস্যুরা। ফলে রেল প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযানে গেলেও তাদের বাধার মুখে বিভিন্ন সময় ফিরে আসতে হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকা ছাড়াও রেলের পূর্বাঞ্চলের খুলশী থানাধীন আকবর শাহ মাজার এলাকায় প্রায় সাড়ে দশ একর ভূমি অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে। এরমধ্যে ৯০ শতাংশই পাহাড়ী ভূমি। আকবর শাহ এলাকায় এসব পাহাড়ী ভূমি দখলে নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যানারে থাকা অসাধুরা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ভাড়া ঘর নির্মাণ করেছে। ফলে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা হত দরিদ্র শ্রেণীর ওপর যে কোন মুহূর্তে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। পরিবেশ ভবনের সামনে পাহাড় কেটে ৫তলা ভবন তৈরি করেছে আব্দুল মালেক সওদাগর। এছাড়াও প্ল্যানিং কমিশনের অফিস প্রধান সায়েদুজ্জামান আকবরশাহ মাজারের পাশেই পাহাড় কেটে প্লট বানিয়ে ও কাঁচাঘর নির্মাণ করে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে আসছে।
×