ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিতে ভারতকে মোকাবেলায় চাপহীন বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৩ জুন ২০১৭

সেমিতে ভারতকে মোকাবেলায় চাপহীন বাংলাদেশ!

‘ভারত অনেক শক্তিশালী দল। তবে আমাদের ওপর কোন চাপ নেই। আমরা নির্ভার হয়েই খেলব। সেমিফাইনালে ওঠায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না।’ বলেছেন বাংলাদেশ দলের পেসার শফিউল ইসলাম। ভারতের বিপক্ষে বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে ম্যাচটি হবে। বার্মিংহ্যামে জিম শেষে এ কথা বলেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ যত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলল, শফিউল একটাতেও খেলতে পারেননি। আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি সিরিজে চার ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। একটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে। আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচ খেলেছে। একটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে। শফিউল ড্রেসিংরুমেই থেকেছেন। একাদশে আর সুযোগ পাননি। তবে তার এতে কোন সমস্যা নেই। দল ভাল করলেই তিনি খুশি। দলের সঙ্গে যে থাকতে পারছেন, এমন অর্জনে সাক্ষী হতে পেরেছেন; তাতেই আনন্দিত। শফিউল জানিয়েছেন, ‘আমরা খুব খুশি। সবাই আত্মবিশ্বাসী। আমরা জানি ভারতের বিপক্ষে খেলা অনেক কঠিন। ভারতকে হারাতে হলে আমাদের সেরাটা দিতে হবে। আমরা সবাই এক্সাইটেডও। জানি ভারতকে হারাতে পারলেই ফাইনালে উঠে যাব। সবাই চায়, এই অর্জনও নিজেদের করে নিতে। সেই চেষ্টাই করে যাব আমরা।’ ভারতকে হারানো সত্যিই কঠিন। তবে অসাধ্য বলে কিছু না। অসম্ভব কিছু না। এর আগেও ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাছাড়া ভারতের বিপক্ষে যখনই খেলা হয়, তখনই ক্রিকেটারদের ভেতর কেমন জানি আত্মবিশ্বাস এসে পড়ে। ভাল খেলার প্রেরণা এসে পড়ে। সেটি ভাল খেলায় বিশেষ ভুমিকাও রাখে। কিন্তু গত কয়েকটি ম্যাচে ভারতের কাছে জিততে জিততে হারে বাংলাদেশ। জয়ের আশা জাগিয়েও হারে বাংলাদেশ। এবার তাই সেই রকম জেতার সুযোগ মিললে যেন না হারায় বাংলাদেশ, সেই দিকেই মনোযোগ রয়েছে। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ লড়াই হয় ২০১৫ সালে। যে সালটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল বছর। এ বছরেই ভারতকে সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। যদিও তিন ম্যাচের সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে হারে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম দুই ওয়ানডেতে জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয়। এ সিরিজ খেলতে নামার আগে ক্রিকেটারদের ভেতর একটা জেদা কাজ করেছে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে হারে বাংলাদেশ। কিন্তু আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তগুলো এবং মাঠে ভারতের প্রতি আইসিসির সমর্থনও যেন ছিল। এগুলো সবার চোখের সামনেই ধরা পড়ে। সেই হারের পর ভারতকে হারাতে উদগ্রীব হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। শেষপর্যন্ত সিরিজে হারায়। এখন বাংলাদেশ-ভারত খেলা হলেই উত্তেজনা কাজ করে। যে উত্তেজনা আগে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে দেখা যেত। তা এখন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে দেখা যায়। আর দেখা যায় বলে দুই দলের মধ্যে লড়াইটাও হয় জমজমাট। তবে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ভারতকে হারানো যেন বাংলাদেশের কাছে কঠিনই। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে একবার হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে করে ভারত গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। এরপর ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হারে। ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে হারে। তবে এবার বাংলাদেশকে অন্যরকম দল মনে হচ্ছে। যে বাংলাদেশ যে কোন দলকে হারিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশ দল ভারতকে হারানোর দিকেই নজর দিচ্ছে। আর দেয়াটাও স্বাভাবিক। সেমিফাইনাল ম্যাচ এটি। এখানে হারলেই বিদায়। জিতলেই আরও বড় অর্জন মিলবে। যে অর্জন বাংলাদেশকে আরও উপরে নিয়ে যাবে। বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে ফাইনালে প্রথমবারের মতো উঠবে। যেটি বাংলাদেশ ক্রিকেটকেই আরও আমূল বদলে ফেলবে। সামনে যে ম্যাচগুলো আসবে, তাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে যে প্রতিপক্ষই থাকবে, তাদের হাজারো পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। যেমনটি বৃহস্পতিবার করবে ভারত। তাদের মাথায় অসম চাপও থাকবে। সেই সুযোগটি বাংলাদেশ আবার কাজেও লাগাতে পারে। আর বাংলাদেশ? তাদের হারানোর কিছু নাই। অনেক পাওয়া হয়েছে। যদি ফাইনাল যাওয়া যায় অনেক ভাল। না গেলেও সেমিফাইনালে খেলার সুখ থাকবে। কোন চাপ থাকছে না। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে তাই চাপহীন বাংলাদেশই খেলবে। তাতে করে ফাইনালে ওঠার রসদও মিলে যেতে পারে। চাপযুক্ত দলের সঙ্গে চাপহীন দলের খেলা হলে, চাপহীন দলের জেতার সম্ভাবনাই যে বেশি থাকে।
×