ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগারদের উত্থান, উপমহাদেশের দাপট

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৩ জুন ২০১৭

টাইগারদের উত্থান, উপমহাদেশের দাপট

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্ব ক্রিকেটে উপমহাদেশের প্রভাব কতটা ব্যাপক, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মধ্যপথেই সেটি প্রমাণ হয়ে গেল। ইংল্যান্ডে আট জাতির ওয়ানডে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অবতীর্ণ র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা সব দল। পাওয়ার ক্রিকেটের মন্ত্রে নতুন করে জেগে ওঠা স্বাগতিক ইংল্যান্ড, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, ‘নাম্বার ওয়ান’ দক্ষিণ আফ্রিকা, টুর্নামেন্টের ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন ভারত, ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান, সঙ্গে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেছনে ফেলে জায়গা করে নেয়া বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে উঠে আসা চার দলের তিনটিই উপমহাদেশের। নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে উপমহাদেশের গর্বের জায়গাটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বদলে যাওয়া টাইগাররা। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইসিসির কোন ইভেন্টের সেমিতে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। অন্যতম ফেবারিট প্রোটিয়াদের এবার চোখের জলে ভাসিয়েছে বিরাট কোহলির ভারত, আর সরফরাজের পাকিস্তান। যে লঙ্কানরা স্বীকৃত আন্ডারডগ, গ্রুপ ‘বি’ থেকে সেই তারাই কিনা কোহলিদের হারিয়ে দুর্দান্তভাবে সেমির রেসে ফিরে আসে। সোমবার এ রিপোর্ট লেখার সময় পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচ চলছিল। বিজয়ী দল সেমিতে উঠে যাওয়ায় এতক্ষণে লাইনআপও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অন্যদিকে ‘এ’ গ্রুপ থেকে সব ম্যাচ জিতে সবার আগে শেষ চারে ইয়ন মরগানের ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যন্ড ও বাংলাদেশকে নিয়ে এই গ্রুপটাকেই বল হচ্ছিল ‘গ্রুপ অব ডেথ’। সেখান থেকে টাইগারদের সেমিতে উঠে আসা, কেবল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নয়, বিশ্ব ক্রিকেরেটই আলোচিত ঘটনা। তামিম ইকবালের অনবদ্য সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৩০৫ রানের বড় স্কোর গড়ে ইংলিশদের কাছে হার দিয়ে শুরুর পরও মাশরাফিরা ছিল আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ১৮২ রানে অলআউটে তাতে ধাক্কা লাগে। শেষ পর্যন্ত আশীর্বাদ হয়ে আসা বৃষ্টির সৌজন্যে ১ পয়েন্ট। কোণ্ঠাসা অবস্থা থেকে গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিযে স্বপ্নের পথে এক পাঁ দিয়ে রাখে বাংলাদেশ। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সে সেদিন ইতিহাস গড়েন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিউইদের ২৬৫ রানের জবাবে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পাগল ভক্তও তখন জয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই সাকিব-মাহমুদুল্লাহর কাব্যগাথা। দু’জনেই তুলে নেন সেঞ্চুরি। সাকিব ১১৪, মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত ১০২। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভনের মতে, আধুনিক ওয়ানডেতে সেরা জুটির নজির এটি। আর বিশ্লেষকদের স্বীকৃতি, টাইগারদের ৫ উইকেটের জয় ওয়ানডে ইতিহাসেরই অন্যতমসেরা ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানের হার, ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিতে উঠে বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ে ভারতের কাছে, গত বছর টি২০ বিশ্বকাপে সেই ভারতের কাছে (১ রানে) হার। প্রতিটি আফসোস জাগানিয়া ম্যাচেই লুকিয়ে ছিল টাইগার ক্রিকেটের উত্থানের গল্প। উপমহাদেশের বড় নাম ভারত। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে ফেবারিটের মতোই শুরু করে কোহলির দল। এরপর আন্ডারডগ শ্রীলঙ্কার কাছে হারলেও ‘বি’ গ্রুপে ‘ডু অর ডাই’ হয়ে ওঠা নিজেদের শেষ ম্যাচে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সেমি নিশ্চিত করে ভারত। প্রোটিয়াদের বিদায়ে শত্রুদেশ পাকিস্তানের অবদানও কম নয়। যে পাকিরা ভারতের কাছে পাত্তা পায়নি সেই তারাই পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে দেয়। আরও একবার প্রমাণ করে কেন তারা ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। আর ভারতের বিপক্ষে ৩২১ রান চেজ করে পাওয়া শ্রীলঙ্কার জয়টা আসরের অন্যতম চিত্তাকর্ষক, আলোচিত। সব আলোচনা ছাড়িয়ে যাওয়া শেষ নামটা সেই বাংলাদেশই। বিশ্বকাপ, টি২০ বিশ্বকাপসহ আইসিসির ইভেন্টগুলোতে ভারত-পাকিস্তান লড়াই ঘিরে আলোচনার শেষ থাকেন না। অথচ চিরশত্রুদের সঙ্গে পাকিস্তান এখন প্রতিরোধই গড়তে পারে না, নিয়মিত হারে। সে অর্থে বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথটাই যেন বেশি করে জমে উঠছে। বিশ্ব ক্রিকেটে এই যে উপমহাদেশের দাপট, তাতে টাইগারদের মাঠের পারফর্মেন্স, বাইরের সমর্থন বড় ভূমিকা রাখছে। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলার পর শক্তির বিচার এখন বাংলাদেশই তো ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমিতে আরও একবার দেখা হচ্ছে।
×