ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমানতের সুদহার ৪.৯৭ শতাংশ

ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৩ জুন ২০১৭

ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেশের জনগণের কাছ থেকে যে আমানত গ্রহণ করছে তা চলে যাচ্ছে প্রভাবশালী ঋণ খেলাপীদের দখলে। বর্তমানে দেশে খেলাপী ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা ঋণ হিসাবে নিলেও ওইসব প্রভাবশালীরা ঋণের টাকা সময় মতো ফেরত না দেয়ায় একদিকে ব্যাংক খাতে বাড়ছে খেলাপী ঋণের পরিমাণ, অন্যদিকে ব্যাংক খাতে আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরের ব্যবধানে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের মার্চে খেলাপী ঋণ ছিল ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময় এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে খেলাপী ঋণের পরিমাণ এখন এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে খেলাপী ঋণ কমাতে সুনির্দিষ্ট মতামত ও কর্মপন্থা দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু সেই নির্দেশনার ইতিবাচক কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘জনগণের আমানত সুরক্ষিত রাখতে ও খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া আছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সুপারভিশন ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’ জানা গেছে, সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকের কিছু উর্ধতন কর্মকর্তার যোগসাজশে ঋণ বিতরণের নামে ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে। সরকারী ব্যাংকগুলোতে ঋণ বিতরণ হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায় আর বেসরকারী ব্যাংকগুলোর পরিচালকরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে ঋণ আদান-প্রদান করছেন। এছাড়া ঋণের নাম করে ব্যাংক থেকে নিয়ে টাকা পাচারের ঘটনাও ঘটছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ জনগণের আমানত থেকেই মূলত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করে থাকে। কিন্তু সেই ঋণ যদি ফেরত না আসে তাহলে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার গ্রাহকের আস্থায়ও চিড় ধরে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ নেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটি দেখা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক খাতে সুশাসন না থাকায় এমনটি হচ্ছে। কিছু টাকা বের করে নেয়া হয়েছে লুটপাটের মাধ্যমে। আবার নামী-দামী ব্যবসায়ীরাও অনিয়ম করে সুবিধা নিয়েছেন। এখন অনেক বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও ব্যাংকগুলো অর্থ আদায় করতে পারছে না। আবার যারা ঋণ পরিশোধ করছে না, তাদের কিছু করাও যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংক খাতের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাবে।’ এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বড় ঋণগ্রহীতাদের কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। অনেকে সময় মতো ঋণের টাকা ফেরত না দিলে ব্যাংক মামলা করেও ফল পায় না। তিনি বলেন, মামলা হলেই রিট হয়ে যায়, রিটের জাল থেকে ব্যাংক বেরুতে পারে না। এ কারণে বেশ কিছু ঋণের টাকা ফেরত আসে না।’ এদিকে খেলাপী ঋণ বাড়তে থাকায় ব্যয় সমন্বয় করতে আমানতের সুদের হার কমিয়ে আনছে ব্যাংকগুলো। ৫ বছর আগেও এই সুদের হার ছিল ১২-১৪ শতাংশ। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৫ শতাংশেরও নিচে। এমন অবস্থায় সরকার আমানতের আসল টাকায় হাত দিতে চাইছে। এতে আরও বিপাকে পড়েছেন সুদ আয়নির্ভর অল্প আয়ের গ্রাহকরা। অনেকে বাধ্য হয়ে ব্যাংক খাত থেকে টাকা উঠিয়ে নেয়া শুরু করেছেন। অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল শেষে ব্যাংক খাতে গড় আমানতের সুদহার ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ হয়েছে।
×