ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদন

রেমিটেন্স কমায় জিডিপিতে কমছে সঞ্চয়ের অবদান

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৩ জুন ২০১৭

রেমিটেন্স কমায় জিডিপিতে কমছে সঞ্চয়ের অবদান

রহিম শেখ ॥ মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) জাতীয় সঞ্চয়ের অবদান কমছে। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে রেমিটেন্সের পরিমাণ কমে আসায় এ চিত্র ফুটে উঠেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপিতে জাতীয় সঞ্চয়ের অবদান ছিল ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে দাঁড়াবে ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশে। তবে জিডিপিতে জাতীয় সঞ্চয় কমলেও অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়ের অবদান বাড়বে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭ পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। স্বাভাবিক নিয়মে মানুষের আয় বাড়লে সঞ্চয় বাড়ে, আর সঞ্চয় বাড়লে বিনিয়োগও বাড়ে। আবার বিনিয়োগ বাড়লে বা বিনিয়োগের যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে মানুষ সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ হন। এ জন্য জাতীয় অর্থনীতিতে সঞ্চয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু চলতি অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স নেতিবাচক হয়ে পড়ায় জাতীয় সঞ্চয় কমছে। শুধু তাই নয়, রেমিটেন্সের নেতিবাচক প্রবণতার কারণে এবার সার্বিক ভোগ ব্যয়ও কমছে। বেসরকারী ভোগ হ্রাসই এ জন্য দায়ী। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগের সুযোগ না থাকলে মানুষের মধ্যে সঞ্চয় করার প্রবণতা কমে যায়। কারণ মানুষ তখন সঞ্চয়ের বদলে ভোগে মেতে ওঠেন। তাই জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থেই বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে; যাতে মানুষকে সঞ্চয়ে আগ্রহী করে তোলা যায়। তবে এবারের জাতীয় বাজেটে মানুষকে সঞ্চয়ে আগ্রহী করে তোলার বদলে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে লাখ টাকার বেশির ব্যাংক এ্যাকাউন্টে বাড়তি আবগারি শুল্ক কর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে। এতে আগামী দিনে ব্যাংকে সঞ্চয় কমবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই প্রবাসী আয়ে মন্দা চলছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। এ জন্য নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির স্বার্থে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানানো হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রবাসী আয় প্রেরণ ব্যয় হ্রাস, বিদেশে কর্মরত ব্যাংকের শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোকে রেমিটেন্স প্রেরণে দক্ষ করে তোলা, প্রবাসীরা যেসব দেশে কর্মরত, সেসব দেশের স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রয়িং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রেরণে উদ্বুদ্ধকরণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। গেল অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলার, আগের অর্থবছরে যা ছিল ১ হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার। তবে মাথাপিছু আয় বাড়লেও জিডিপির হারে জাতীয় সঞ্চয় কমছে, যা ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, মানুষের আয় বাড়লে সঞ্চয়ও বাড়ে। এতে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ে। তবে সঞ্চয়ের তুলনায় বিনিয়োগ হার বেশি থাকে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জিডিপিতে বিনিয়োগের হার বেশি। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো। এটি ঠিক করতে পারলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে। অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে জিডিপিতে জাতীয় সঞ্চয়ের হার ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ। গেল অর্থবছরে জিডিপিতে জাতীয় সঞ্চয়ের হার ছিল ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ হিসাবে জাতীয় সঞ্চয় কমেছে দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে জাতীয় সঞ্চয়ের হার ছিল ২৯ দশমিক ০২ শতাংশ। জাতীয় সঞ্চয়ের পাশাপাশি জিডিপিতে কমেছে সার্বিক ভোগের অবদানও। গেল অর্থবছরে জিডিপিতে সার্বিক ভোগের অবদান ছিল ৭৫ দশমিক ০২ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারী ভোগ ছিল ৬৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর সরকারী ভোগ ছিল ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সার্বিক ভোগ ১ শতাংশের বেশি কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৯৪ শতাংশে। এর মধ্যে বেসরকারী ভোগ ৬৭ দশমিক ৫৫ ও সরকারী ভোগ ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে এবারও অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়ের হার বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের হার হবে ২৩ দশমিক ০১ শতাংশ, গেল অর্থবছরে যা ছিল ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ২২ দশমিক ৭ শতাংশ। এদিকে গেলবার বিনিয়োগ কমলেও এবার সার্বিকভাবে বাড়ছে। এর মধ্যে সরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধির হারই বেশি। আর বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার খুবই সামান্য। সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরে সার্বিক বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারী বিনিয়োগ ২৩ দশমিক ০১ ও সরকারী বিনিয়োগ ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। গেলবার সার্বিক বিনিয়োগের হার ছিল ২৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারী বিনিয়োগের হার ছিল ২২ দশমিক ৯৯ ও সরকারী বিনিয়োগের হার ছিল ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
×