ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

শপিংমলগুলো সেজেছে রঙিন সাজে

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৩ জুন ২০১৭

শপিংমলগুলো সেজেছে রঙিন সাজে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উৎসব তো শিশুদের জন্য। সেই উৎসবকে বর্ণিল করতে সবার আগে চাই শিশুর পোশাক। ঈদে শিশুদের আনন্দের কথা মাথায় রেখেই রাজধানীর শপিংমলগুলো এবারও সেজেছে রঙিন সাজে। এ আয়োজন থেকে বাদ পড়েনি দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। সঙ্গে অনলাইন শপিং তো আছেই। এসব পোশাকে ডিজাইন ও কাটছাঁটের পাশাপাশি নামেও রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। আর এবারের ঈদে আবহাওয়ার অবস্থা থাকবে খানিকটা গরম। তাই ডিজাইনাররা বর্ণিল রঙের পাশাপাশি আরামদায়ক পোশাক হিসেবে হাতাসহ ও হাতাকাটা দু’ধরনের পোশাকই রেখেছেন। সরেজমিন দেখা যায়, মেয়ে শিশুদের পোশাকের মধ্যে আনারকলি জামা ও লেহেঙ্গা সবচেয়ে বেশি। বেশ বড় ঘেরযুক্ত এ পোশাকগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেলেও তীব্র তাপদাহের কথা ভেবে অভিভাবকরা খুঁজছেন সুতির পোশাক। সুতি কাপড়েও এসেছে ভিন্নতা। সুতির জামাগুলোতে লেস, ফিতা, কারচুপি ও স্টোনের কাজ করে বেশ জমকালো করে তৈরি করা হয়েছে। আর নিয়মিত ফ্রক ও স্কার্ট তো আছেই। ছেলে শিশুদের জন্য রয়েছে জিন্স প্যান্ট, নরমাল প্যান্ট, থ্রি-কোয়ার্টার সেট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, বাবা সেট, গেঞ্জি, শার্ট ও গেঞ্জি সেট। এদিকে নিউমার্কেট, পল্টন, মিরপুর, গুলিস্তান সংলগ্ন রাস্তায়ও ব্যবসায়ীরা শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় রং ও বাহারি ডিজাইনের পোশাক বিক্রি শুরু করেছেন। বিভিন্ন ডিজাইনের এসব পোশাকের জৌলুস বাড়াতে ব্যবহার করা হয়েছে লেইস, চুমকি, পুঁতি, ব্লক, পট্টি, এ্যামব্রয়ডারি, কারচুপি, এ্যাপলিক, কুঁচি এবং হরেক রকমের সুতোর বুনন। এছাড়া আরামদায়ক পোশাকের জন্য এ্যান্ডি কটন, তাঁতের কাপড় এবং বৈচিত্র্যতা আনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে নানা উজ্জ্বল রঙের কাপড়। এখানকার বিক্রয়কর্মী দুর্জয় হোসেন জানান, বড়দের পাশাপাশি শিশুদের জন্য তৈরি পোশাকের মূল্য ৩শ’ টাকা ১৫শ’ টাকার মধ্যে। ঈদে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের পোশাকের বিপুল সরবরাহ ঘটেছে দোকানগুলোতে। এসব পোশাকের বাহারি নামে শিশুরা যেমন বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে, তেমনি চড়া দামের কারণে পছন্দের পোশাকটি কিনে দিতেও অনেক অভিভাবককে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নীলক্ষেতের গাউসিয়া মার্কেটে আসা নাইসা আলম জানান, ছয় বছরের মেয়ে রাফিসাকে নিয়ে পোশাক কিনতে এসেছেন তিনি। কিন্তু বড়দের পোশাকের যে দাম, ছোটদের পোশাকেরও একই দাম। রাজধানীর বেশ কয়েকটি মার্কেট ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরের মতো এবারও ঈদের পোশাকে ভারতীয় চলচ্চিত্র ভিত্তিক পোশাকের আধিপত্য চলছে। ঢাকাসহ সারাদেশের অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে দেশী পোশাকের তুলনায় বিদেশী পোশাকের দিকেই ক্রেতাদের বেশি মনোযোগ। এবার ঈদের বাজারে এসেছে হিন্দী চলচ্চিত্রের নামে একাধিক পোশাক। ভারতীয় চলচ্চিত্রের নায়িকাদের ব্যবহৃত পোশাকের আদলে তৈরি পোশাক কম বয়সীদের পছন্দের শীর্ষে। বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় শিশুদের পোশাকের দোকানগুলোতে রয়েছে প্রধানত বিদেশী পোশাকের সম্ভার। মার্কেটের কিডস ওয়ার্ল্ডের বিক্রয়কর্মীরা জানান, এবারও গত কয়েক বছরের মতো বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ভারতীয় পোশাক। বসুন্ধরা সিটির চিতা ডিজাইনের ব্যবস্থাপক মোঃ রনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শিশুদের পোশাকের দাম বেড়েছে গড়ে প্রায় ২০-৩০ ভাগ। দেশী পোশাক মানের দিক থেকে বিদেশী পোশাকের চেয়ে কোন অংশে কম নয়, দামেও কিছুটা সাশ্রয়ী। তবু কেন জানি না, বিদেশী পোশাকের প্রতিই ক্রেতাদের বেশি ঝোক। রবিবার বসুন্ধরা সিটিতে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঈদের শপিং করতে এসেছিলেন ধানম-ির বাসিন্দা আতিকা রহমান। শুরুতেই শিশুদের পোশাকে দাম নিয়ে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, গত বছরের চেয়ে বেশি দাম হওয়া সত্ত্বেও ঈদ শপিং করতে হচ্ছে। বসুন্ধরা সিটির কিডস ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী মোঃ খোকন বলেন, বিক্রি এখন আগের তুলনায় বেড়েছে। বসুন্ধরা সিটির বেবিস গ্যালারিতে কথা হয় বিক্রয়কর্মী মোঃ তাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার তাদের দোকানে ঈদে ছোটদের জন্য এসেছে চীন, থাইল্যান্ড ও ভারতীয় পোশাক। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের থ্রি কোয়ার্টারের মূল্য ৯৮০ থেকে ২২৫০ টাকা। সালোয়ারের বিশেষ একটি সেটের মূল্য ২৪৮০ থেকে ১৮৫০ টাকা, ডিভাইডার ফ্রক ১২০০ থেকে ১৮৫০ টাকা। ছেলেদের টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০ থেকে ১৪৯০ টাকায়। চিতা ডিজাইনে কিশোরদের ভারতীয় টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়, জিন্স প্যান্ট ২২০০ থেকে ৩০০০ টাকায়, শার্ট ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। এদিকে বেইলি রোডের ফ্যাশন হাউসগুলোতে শিশুদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের আকর্ষণীয় পোশাক। এসব পোশাকের জমিনে বিভিন্ন ধরনের কাজ থাকায় দারুণ চাহিদা তৈরি করেছে শিশুদের কাছে। এখানেও শিশুদের সব ধরনের পোশাক মিলছে ৬শ’ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে নগরদোলা, আড়ং, সাদাকালো, অন্যমেলা, নিত্য উপহার, রঙ, দেশাল, প্রবর্তনা, নিপুণ, অঞ্জন’স, ওটু, চাঁদের হাসি, ইনফিনিটিসহ প্রায় সব ধরনের ফ্যাশন হাউসেই মেয়ে শিশুদের বিভিন্ন ফ্রক ও ফ্রিলের পার্টি ফ্রক পাওয়া যাচ্ছে। আরও রয়েছে সালোয়ার-কামিজ, ঘাঘড়া চোলি ও নকশা করা প্যান্ট। সব কাজেই উজ্জ্বল রঙকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। শিশুদের ফ্রকের দাম ২৫০ থেকে ২ হাজার টাকা, টু-পিস এবং থ্রি-পিসের দাম ৮শ’ থেকে তিন হাজার টাকা, শার্টের দাম পড়বে ২শ’ থেকে ১২শ’ টাকা, পাঞ্জাবি ৬শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা, হাফপ্যান্ট ও ফুলপ্যান্টের দাম ৩শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা, ছেলেদের পাঞ্জাবির সঙ্গে আলাদা করে পাজামা বা ধুতি কিনতে চাইলে এর দাম পড়বে ২৫০ থেকে এক হাজার টাকা। তবে শোরুম ও কাপড়ের মানের জন্য দামের কিছুটা হেরফের হতে পারে। অঞ্জনসের শীর্ষ নির্বাহী শাহীন আহম্মেদ বলেন, ঈদে শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে এ্যান্ডি সিল্ক, ভয়েল, লিনেন কাপড়ের পোশাক, যা শিশুদের জন্য আরামদায়ক।
×