সংসদ রিপোর্টার ॥ ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে জেদ না ধরার আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেছেন, এখানে জেদ ধরার বিষয় নেই। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের রাজনীতি করে। মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েই প্রধানমন্ত্রী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আর আওয়ামী লীগ ভোটের রাজনীতি করে- এটাও মাথায় রাখা প্রয়োজন। আর এই শুল্কারোপ নিয়ে জনমনে সংশয় ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। তাই অযথা জেদ না ধরে বর্ধিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করে এই সংশয় দূর করতে হবে। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ আফম রুহুল হক, সরকারী দলের আবদুল মান্নান, এ কে এম আউয়াল, সানজিদা খানম, ড. শামসুল হক ভুঁইয়া, আনোয়ারুল আজিম আনার, সেলিনা জাহান লিটা, শিরীন নঈম, গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন, বেগম কামরুন নাহার চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির মোহাম্মদ ইউনুছ আলী এবং জাতীয় পার্টির আবদুল মুনিম চৌধুরী। বাজেটের পাশাপাশি সংসদ সদস্যরা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকা-ের সমালোচনার পাশাপাশি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিজয়ী তিন বাঙালী কন্যাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারী দলের সিনিয়র সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ইফতার পার্টির নাম করে বেগম খালেদা জিয়া প্রতিদিন যেভাবে কথা বলছেন তাতে অবাক হই। বেগম জিয়া বলেন, হাসিনা মার্কা কোন নির্বাচন হবে না। তাহলে কি আগামীতে খালেদা জিয়া মার্কা নির্বাচন হবে? নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায় কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। দেড় বছর পর নির্বাচন হবে। এরইমধ্যে অনেক বিদেশী তৎপর হয়েছে। গোপন জরিপে খালেদা জিয়া নাকি জেনেছেন আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। দলের নেতা-কর্মীদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। তার এ কথায় তাকে আমি উন্মাদ না বললেও তার আপার চ্যানেলে (মস্তিষ্কে) কোন সমস্যা হয়েছে এটা নিশ্চিত।
তিনি বলেন, তাদের দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেছেন আওয়ামী লীগ ৩০টির বেশি সিট পাবে না। এটা বলার উনি কে? সিট তো দেবে জনগণ। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বিবেচনা করলে খালেদা জিয়ার অবস্থান শেখ হাসিনার হাঁটু ও তাঁর নিচে বলে মনে করি। তিনি বলেন, নির্বাচনে হেরে গেলে প্লাটফরম তৈরি করতে হবে সেজন্য বেগম খালেদা জিয়া আজ নির্বাচন নিয়ে এসব কথা বলছেন। অর্থমন্ত্রীকে জেদ ধরে না রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী সিলেটে বলেছেন, ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক প্রত্যহারের কোন পরিকল্পনা নেই। আমি বলি এখানে জেদ ধরার কোন কারণ নেই। আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে। ভোটের রাজনীতি করে। তাই জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়। তিনি বলেন, ভ্যাটের পক্ষে আমি যে হারে ভ্যাট বসানো হয়েছে তা বিবেচনার অনুরোধ জানাব।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক বলেন, আমাদের দেশে সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন এগিয়ে চলেছে। গত ৮ বছরে এই সরকারের উন্নয়নে আমার নির্বাচনী এলাকাকে বদলে দিয়েছে। উন্নয়নের ঝুলিতে দেশ আজ উপচে পড়ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। তবে মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকের অভাব রয়েছে বলে মনে করি। সরকারকে এদিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত।
সংরক্ষিত নারী আসনের বেগম সানজিদা খানম বলেন, প্রতিটি জায়গায় উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নারী উন্নয়নে এগিয়েছি অনেক। পদ্মা সেতু আজ আর স্বপ্ন নয় বাস্তব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম নেতৃত্বে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের দাবি পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু রাখা হোক।
জাতীয় পার্টির দলীয় মোঃ আবদুল মুনিম চৌধুরী বলেন, বাজেটের সফলতা বলতে আমরা বুঝি তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কি না। আর জনগণ বোঝে কোন জিনিসের দাম কমলো আর কোন জিনিসের দাম বাড়ল। কিন্তু কোন সময়ই বাজেট বাস্তবায়ন হয় না। সম্পূরক বাজেটের নামে সব সময় চলে লুটপাট। এবারও সে লুটপাট হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এসব সাধারণ ও গরিব মানুষ ব্যবহার করে। ইমিটেশনের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। যারা স্বর্ণ ব্যবহার করতে পারেন না তারা ইমিটেশন ব্যবহার করেন। অর্থমন্ত্রী সেটাও তাদের জন্য দুর্লভ করলেন। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি ও ব্যাংক লুটপাট করে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী কিছুই করতে পারেননি। এত ভ্যাট ট্যাক্স আর শুল্ক আরোপের পর এ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে।
সরকারী দলের একেএম আওয়াল (সাইদুর রহমান) বলেন, তৃণমূলের কথা বিবেচনা করে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। একজন লোক জীবনে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়নি সে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেল। জীবনে আওয়ামী লীগ করেনি হঠাৎ শুনি আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে গিয়েছে। তারা আবার শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করে। আজ আমাদের শপথ হোক- যারা শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হবে। আর বিএনপিকে অনুরোধ করব- শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন। দেশকে ভালবাসুন, দেশের মানুষকে ভালবাসুন।
সরকারী দলের অপর সংসদ সদস্য ড. মোঃ শামসুল হক ভুঁইয়া বলেন, আবগারি শুল্ক কোন নতুন কথা নয়। এটা বাস্তবায়নযোগ্য। এতে জনগণের কোন ক্ষতি হবে না। ব্যক্তিগত আয়করের সীমা দেড়গুণ বাড়িয়ে দেয়া উচিত। মানুষের কল্যাণের বাজেট হিসেবে এবারের বাজেট পাস করা হোক।
গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন বলেন, জন্মই যার আজন্ম পাপ, সেই বিএনপির মুখে বাজেট নিয়ে কোন কথা মানায় না। কারণ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াই ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতির কালো টাকা কর দিয়ে সাদা করেছেন। তার পুত্রের দুর্নীতির কথা সারাবিশ্বের মানুষের মুখে মুখে।