ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই সুইসাইডাল ভেস্ট, বোমা ও পিস্তলসহ নব্য জেএমবির তিন সদস্য গ্রেফতার

রাজশাহীতে জঙ্গী আস্তানা, নারী ও শিশুসহ ৯ জনের আত্মসমর্পণ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৩ জুন ২০১৭

রাজশাহীতে জঙ্গী আস্তানা, নারী ও শিশুসহ ৯ জনের আত্মসমর্পণ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে ॥ গোদাগাড়ীর নিভৃত পল্লীতে অপারেশন ‘সান ডেভিলে’র একমাস পর এবার জেলার তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রবিবার গভীর রাতে জঙ্গীদের আস্তানা মাটির দোতলা বাড়িতে অভিযানের শুরুতেই নব্য জেএমবির তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাতে এই অভিযানের সময় ওই বাড়ি থেকে দুটি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৫ রাউন্ড গুলিসহ পিস্তল উদ্ধার করা হয়। সোমবার সকালে ওই বাড়ি থেকে নারী ও শিশুসহ আরও ৯ জন আত্মসমর্পণ করে। অভিযানের শুরুতেই গ্রেফতাররা হলো ইব্রাহীম হোসেন (২৬), ইসরাফিল হোসেন (২৪) ও রবিউল ইসলাম (২৫)। এদের মধ্যে ইব্রাহীম ও ইসরাফিল সহোদর এবং রবিউল তাদের ছোট বোন হাওয়া খাতুনের (২১) স্বামী। ইব্রাহীমের বাবা রমজান আলী উপজেলার গৌরাঙ্গপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী জানান, রবিবার রাত ১২টার দিকে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও রাজশাহী জেলা পুলিশ রমজানের মাটির দোতলা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এ সময় ওই বাড়ি থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে বলা হয়। পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাতেই তিনজন বের হয়ে আসে। পরে বাড়ির ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে দুটি সুইসাইডাল ভেস্ট, একটি ৭ দশমিক ৬২ মডেলের এমএম বিদেশী পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী আরও বলেন, ইব্রাহীম, ইসরাফিল ও রবিউল তিনজনই জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতারের পর তাদের তানোর থানায় নেয়া হয়। সেখান থেকে কঠোর নিরাপত্তায় রাজশাহী জেলা পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়। বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যে এ অভিযান চালানো হয় বলে জানান সুমিত চৌধুরী। বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, ধর্ম নিয়ে তারা সব সময় বাড়াবাড়ি করত। তারা বড় ধরনের কোন ধ্বংসাত্মক হামলার পরিকল্পনা করেছিল। গ্রেফতারের পর তাদের রাজশাহী পুলিশে দেয়া হয়েছে। রাজশাহী পুলিশ মামলা দায়ের করবে। তাদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে জানান তিনি। এদিকে, সারারাত ওই বাড়ি ঘিরে রাখার পর সোমবার সকালে সেখান থেকে চার শিশু ও তিন নারীসহ ৯ জন আত্মসমর্পণ করে। এদেরও থানা হেফাজতে নেয়া হয়। এরা হলো জঙ্গী ইব্রাহীম ও ইসরাফিলের বাবা স্কুল শিক্ষক রমজান আলী, মা আয়েশা বেগম, মেয়ে হাওয়া খাতুন, ইব্রাহীমের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন, ইসরাফিলের স্ত্রী হারেছা খাতুন। এছাড়া হাওয়া খাতুনের এক ও মর্জিনা খাতুনের তিন শিশুকন্যাকে পুলিশী হেফাজতে নেয়া হয়। এদের বয়স এক মাস থেকে ৯ বছর পর্যন্ত। সবাইকে বাড়ি থেকে বের হলে সকালে পুলিশ দ্বিতীয় দফায় ওই বাড়িতে তল্লাশি চালায় বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী। তবে ওই বাড়িতে বোমা ও বিস্ফোরক থাকতে পারে এমন সন্দেহে পুলিশ ঘিরে রাখে। ঢাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয় বিশেষজ্ঞ দল এলে ওই বাড়িতে কোন বিস্ফোরক ও বোমা থাকলে তা নিষ্ক্রিয়ের পর অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। তারপর পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকা থেকে রাজশাহীতে পৌঁছেনি বোমা নিষ্ক্রিয় বিশেষজ্ঞ দল। বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়েছে। রাতে ফের অভিযান শুরু, বোমার বিস্ফোরণ রাত এগারোটার দিকে তানোরের ‘জঙ্গী আস্তানায়’ অভিযান শুরু করে ডিএমপি গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বোমা নিস্ক্রিয় বিশেষজ্ঞ দল। প্রায় ১৫ মিনিট পরই বিস্ফোরণের বিকট একটি শব্দ পাওয়া যায়। তবে বাড়ির ভেতরে কেউ নেই বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে রাতে মাইকে গ্রামবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে কাউকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্যও বলা হচ্ছে।
×