ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেলফাস্টে ডিইউপি ও কনজারভেটিভ বৈঠক

সরকার গঠনে সমঝোতা

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১২ জুন ২০১৭

সরকার গঠনে সমঝোতা

যুক্তরাজ্যের অতি রক্ষণশীল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সঙ্গে শনিবার সমঝোতায় পৌঁছেছে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনে হতাশাব্যঞ্জক ফল করার পরও সরকার পরিচালনা অব্যাহত রাখার সুযোগ পেলেন মে। এএফপি ও বিবিসি। ব্রিটেন পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ব্রেক্সিট আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে, মে একথা জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলকে জানিয়েছেন। নির্বাচনে খারাপ ফল করার পর মে এ বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে পারবেন কি না তা নিয়ে ইইউ নেতৃবৃন্দ সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে মে’র কনজারভেটিভ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। দলটিকে এখন সরকার গঠনের জন্য নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডিইউপির ১০ জন এমপির সমর্থন প্রয়োজন। শনিবার দুই দলের বৈঠক শেষে মে’র মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘সরকার গঠনের বিষয়ে উভয় দলের মধ্যে নীতিগত সমঝোতা হয়েছে।’ বেলফাস্টে এদিন বৈঠক হয়। কনজারভেটিভ পার্টির চীফ হুইপ গ্যাভিন উইলিয়ামসন ও ডিইউপি নেতৃবৃন্দ বৈঠকে অংশ নেন। তিনি আরও জানান, এটি যদিও একটি কোয়ালিশন সরকার হবে কিন্তু তা হবে মূলত একটি সংখ্যালঘু সরকার যা অপেক্ষাকৃত একটি দলের সমর্থনের ওপর টিকে থাকবে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সমঝোতার বিস্তারিত চূড়ান্ত করা হবে বলে ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন। ডিইউপি কনজারভেটিভ পার্টির কাছ থেকে কোন্ কোন্ বিষয়ে ছাড় আদায় করে নিতে পেরেছে তা স্পষ্ট নয়। দলটি গর্ভপাত ও সমকামী বিয়ের ঘোর বিরোধী। এ নিয়ে অতীতে অনেক রাজনৈতিক বিতর্র্কও হয়েছে। মে’র প্রশাসন থেকে শনিবার দু’জন শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। এরা হলেন তার জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ নিক টিমোথি এবং ফিয়োনা হিল। তাদের জায়গায় সাবেক গৃহায়ন মন্ত্রী গ্যাভিন বারওয়েলকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনে তিনি নিজের আসনটি হারিয়েছেন। বৃহস্পতিবার নির্বাচনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার পর মে যখন নিজের অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা করছেন তখন এ রকম একসময় এদের বিদায় মে’র জন্য ছিল একটি আঘাত। কারণ এর আগে মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে এই দু’জনের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিলেন। টিমোথি বলেছেন, দলীয় মেনিফেস্টোতে বয়স্ক লোকদের সামাজিক নিরাপত্তার পরিকল্পনাটি দলের মূল ভোটারদের হতাশ করেছে। তিনি এ দায় নিয়েই পদত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন। অপর পদত্যাগী ফিয়োনা হিল সম্পর্কে তার এক সহকর্মী মন্তব্য করেছেন তিনি সরকারের মধ্যে পরিবেশ ‘বিষিয়ে’ তুলেছিলেন। কনজারভেটিভ নেতা মে তিন বছর বাকি থাকতেই আগাম নির্বাচনের ডাক দেন। তার লক্ষ্য নির্বাচনে দল আরও বেশি সংখ্যক আসন পেলে ব্রাসেলসে ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ব্রেক্সিট আলোচনায় তিনি বলিষ্ঠভাবে নেতৃত্ব দিতে পারতেন। কিন্তু আগাম সাধারণ নির্বাচন যে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল সে বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতারা মে’কে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তারা এ বিষয়ও সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, নেতৃত্বে কোন ধরনের তড়িঘড়ি পরিবর্তন ব্রেক্সিট আলোচনার জন্য দেশের প্রস্তুতিকে ব্যাহত করবে। চলতি মাসের ১৯ তারিখ এই আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। স্পষ্টতই মে যে উদ্দেশ্যে আগাম নির্বাচনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন তার সুফল তিনি পাননি। এ নির্বাচনে দলের যেসব এমপি নিজেদের আসন হারিয়েছেন তাদের বিষয়ে মে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু নির্বাচনের ঝুঁকি নেয়া ঠিক হয়নি, তিনি একথা মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন। নির্বাচনের আগে ৬৫০ আসনবিশিষ্ট কমন্স সভায় কনজারভেটিভ পার্টির আসন সংখ্যা এখন ৩১৮। দু’বছর আগে হওয়া নির্বাচনে তারা ৩৩১টি আসন পেয়েছিল। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি গত নির্বাচনে আসন পেয়েছিল ২৩২টি, এবার ২৬২টি। ডিইউপির সঙ্গে কনজারভেটিভ পার্টি সমঝোতার সমালোচনা করেছেন। সমালোচকদের বেশিরভাগই লেবার পার্টির সমর্থক। তারা বলছেন, ডিইউপি একটি বর্ণবাদী ও সমকামী বিরোধী দল। ডিইউপি ব্রেক্সিট সমর্থন করে কিন্তু রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত একেবারে বন্ধ করে দেয়ার বিরোধী। নতুন পার্লামেন্ট মঙ্গলবার শপথ নেবে। মে’র জন্য আসল পরীক্ষা অপেক্ষা করছে ১৯ জুন। তার নতুন সরকারের রূপরেখাগুলোর ওপর এদিন পার্লামেন্টে সদস্যরা ভোট দেবেন।
×