ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘দেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতিকে আলোকিত করেছেন বাদল রহমান’

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১২ জুন ২০১৭

‘দেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতিকে আলোকিত করেছেন বাদল রহমান’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ এক চলচ্চিত্রকার বাদল রহমান। একাত্তরে মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে লড়াই করেছেন রণাঙ্গনে। পরবর্তীতে স্বাধীন দেশে শিল্পচর্চার তাগিদে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে। তারই নিরলস প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে ফিল্ম আর্কাইভ। ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ নামের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিশুতোষ চলচ্চিত্রের এই নির্মাতার সপ্তম প্রয়াণবার্ষিকী ছিল রবিবার। মৃত্যুবার্ষিকীতে পথিকৃৎ এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করল ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি। সংগঠনটি আয়োজনে এদিন বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাদল রহমান স্মারক বক্তৃতা’। বক্তৃতার পাশাপাশি চলচ্চিত্রসহ নানা অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণে বাদল রহমানকে নিবেদিত আলোচনা। বাদল রহমানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সামাজিকীকরণের পূর্বাপর : কঠিন লড়াইয়ের পথ’ শীর্ষক বাদল রহমান স্মারক বক্তৃতা করেন চলচ্চিত্র গবেষক ও লেখক অনুপম হায়াৎ। তিনি বলেন, এ দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের বিকাশে বাদল রহমান আমাদের কাছে স্বপ্নপুরুষ ছিলেন। স্বাধীন দেশে যখন নানা কর্মকা- হচ্ছে, তখন তার মতো মানুষেরা চলচ্চিত্রে প্রত্যাশার সূর্য হয়ে এসেছিলেন। আত্মত্যাগী এই মানুষটি মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসায় অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীন দেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা; এ দেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতিকে আলোকিত করেছেন। স্মারক বক্তৃতায় তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মানুষের চলচ্চিত্র হচ্ছে বিনোদন। তবে শুধু বিনোদনকে ঘরে চলচ্চিত্রশিল্প এগিয়ে যায়নি, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা। একটি ছবি যখন ল্যাবরেটরির নানা প্রক্রিয়া পেরিয়ে সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়, তখন সেটি হয়ে ওঠে জনগণের সম্পদ। উদহারণ দিয়ে তিনি বলেন, সত্যজিৎ রায় পাশ্চাত্য ধারা অনুসরণ করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেও তার মূল বিষয় ছিল সমাজ ভাবনা। একইভাবে জহির রায়হান, আলমগীর কবির কিংবা মসিহউদ্দিন শাকেরের মতো নির্মাতারাও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু যখন এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেন, সেটাও ছিল চলচ্চিত্রেরই সামাজিকীকরণ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মসিহ্্উদ্দিন শাকেরের সভাপতিত্বে বাদল রহমানকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেনÑ চলচ্চিত্র সংসদকর্মী সুশীল সূত্রধর ও জুনায়েদ হালিম, ফিল্ম আর্কাইভের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন এবং বাদল রহমানের ছেলে অভিষেক রহমান। টেলিফোনের মাধ্যমে স্মরণসভায় যোগ দিয়ে বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকি বলেন, বাদল রহমান ছিলেন আমাদের চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রতিবাদী চরিত্র। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনসহ যে কোন সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস ছিল এই মানুষটির। অন্য বক্তারা বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি বাদল রহমান। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনকে বেগবান করতে গিয়ে তিনি নিজের জন্য কোনদিনই কিছু চাননি। ব্যক্তিস্বার্থ বা পরিবারের কথা না ভেবে কাজ করে গেছেন চলচ্চিত্রশিল্পের বিকাশে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের সঙ্গে চলচ্চিত্র নিয়ে তাকে লড়াই করতে হয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্রকে একটি নিজস্ব ভাষা প্রদানের পাশাপাশি ফিল্ম আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য ফিল্ম এ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্সের ব্যবস্থা করাসহ নানা কাজে যুক্ত ছিলেন। চলচ্চিত্র নিয়ে বাদল রহমানের অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। কর্মময় জীবনে তিনি ছিলেন পূর্ণাঙ্গ এক নির্মাতা। তবে মূল্যায়নের সংস্কৃতিতে তিনি সেভাবে মূল্যায়িত হননি বলে অভিযোগ করেন আলোচকরা।
×