ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য

দুর্ধর্ষ জঙ্গী সাজিদ ঢাকায়, ঈদের আগেই বড় নাশকতার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১২ জুন ২০১৭

দুর্ধর্ষ জঙ্গী সাজিদ ঢাকায়, ঈদের আগেই বড় নাশকতার চেষ্টা

আজাদ সুলায়মান ॥ নব্য জেএমবির ভয়ঙ্কর শূরা সদস্য সাজিদ ঈদের আগে বড় ধরনের নাশকতার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাকে ধরতে না পারায় চিন্তিত র‌্যাবসহ অন্য গোয়েন্দারা। বর্তমানে সে ঢাকাতেই আত্মগোপন করে আছে। র‌্যাবের অভিযানে আটক সাজিদের সহযোগী দাওয়াতি আমির ইমরান আহমেদ এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছে। জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর পশ্চিমের দাওয়াতি আমির ইমরান আহমেদ ও তার সহযোগী শামীম মিয়াকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে শনিবার রাতে আটক করা হয়। আটককৃতদের কাছ থেকে ১টি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল পরিমাণ জঙ্গীবাদী বই, কম্পিউটার ও অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। জঙ্গীবাদে অস্ত্র ও অর্থসহায়তার অভিযোগে রূপগঞ্জে পোশাক তৈরি কারখানা ‘জিম টেক্স’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইমরান আহমেদকে ধরা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। জানা যায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান আহমেদ জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগ স্বীকার করেছে। সে জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের শূরা সদস্য এবং ঢাকা মহানগর পশ্চিমের দাওয়াতি আমির। ২০১২ সালে বন্ধু ওবায়েদের মাধ্যমে জসিম উদ্দিন রাহমানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় এই ইমরানের। জসিম উদ্দিন রাহমানির মাধ্যমেই তার জঙ্গীবাদে প্রবেশ। এছাড়া জসিম উদ্দিন রাহমানির মাধ্যমে মিরপুর-১০ এর মাওলানা আব্দুল হাকিমের সঙ্গেও তার পরিচয় হয়। মাওলানা হাকিমের মাধ্যমে ইমরানের জেএমবি সারোয়ার-তামীম গ্রুপে অন্তর্ভুক্তি এবং নন্দিপাড়া কোরআন সুন্নাহ একাডেমির মসজিদের খতিব শায়েখ আরিফ হোসেনের সঙ্গে সখ্য হয়। এই শায়েখ আরিফ বর্তমানে জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের কেন্দ্রীয় দাওয়াত বিষয়ক শূরা বোর্ডের আমির। ইমরান আহমেদ তার অফিস, গার্মেন্টস, ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে ডাঃ আসাদুলাহ গালিব, জসিমউদ্দিন রাহমানি, জুন্নুন সিকদার ও আইএস লোগো সংবলিত জঙ্গীবাদী বই সংরক্ষণ করেন। ওই বই থেকে উস্কানিমূলক জঙ্গীবাদী সংক্রান্ত মতাদর্শ প্রচার করতেন। তিনি ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বিদেশ থেকে জঙ্গীবাদী বই সংগ্রহ করতেন। ইমরান আহমেদ র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গীবাদে অর্থসহায়তা প্রদানে বেশকিছু তথ্য দেন। তিনি কয়েকজন জঙ্গী সদস্যকে পাসপোর্ট তৈরির জন্য আর্থিক সহায়তা করেন। এছাড়া জুন্নুন সিকদারকে বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি পাসপোর্ট তৈরিতেও অর্থ দেন। বিশেষ করে জেলখানায় আটক জেএমবি সদস্যদের পরিবারগুলোকে অর্থসহায়তা করতেন তিনি। ইমরান আহমেদ এর আগেও র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত মাওলানা আব্দুল হাকিমকে জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য তার স্ত্রীকে দুই লাখ টাকা দেন। তিনি জেএমবির সামরিক শাখার অস্ত্র ও বিস্ফোরক ক্রয়ের ব্যাপারে অর্থসহায়তা করেন বলেও র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। আটক অপর সদস্য মোঃ শামীম মিয়া (২৯) পেশায় ইমরানের গাড়িচালক। তিনি ইমরানের জঙ্গীবাদী কার্যক্রমের সহযোগী বলেও দাবি করেন র‌্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ খান। তিনি জানান, ইমরানের মাধ্যমে তিনিও জঙ্গী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন। ইমরানের নির্দেশে জেএমবির বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের কাছে অর্থ ও পার্সেল পৌঁছে দিতেন শামীম। এদিকে সাজিদ সম্পর্কে র‌্যাব জানিয়েছে, সারোয়ার-তামীম গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় শূরা সদস্য সাজিদ বিভিন্ন সময় আশ্রয় ও অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে। তার রয়েছে একাধিক নাম। সে কামরান, লাল ভাই, হাবিবুর রহমান, কামরান, মামুন রশিদ নামে পরিচিত। সে বর্তমানে জেএমবির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে। সে জেএমবির মূল সমন্বয়কারী হিসেবে কেন্দ্রীয় আমির আবু মুহারিবের আস্থাভাজন। আবু মুহারিবের পরিকল্পনায় সাজিদ জেএমবির মূলধারা এবং বর্তমান ধারাকে একত্রিত করার চেষ্টায় লিপ্ত। এ লক্ষ্যে সে বিভিন্ন স্থানে জেএমবির শূরা সদস্যদের সঙ্গে গোপনে বৈঠকে মিলিত হয়েছে। সাজিদের অবস্থান সম্পর্কে ইমরান জানায় যে, তাদের গোপন যোগাযোগের মাধ্যম থ্রীমা গ্রুপে গত ২৬ মে হতে সাজিদের আইডি নিষ্ক্রিয়। র‌্যাব পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেছেন, ধারণা করা হচ্ছে সাজিদ ঈদ সামনে রেখেই রাজধানীতে বড় ধরনের কোন নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর আগে সাজিদ সিলেটের আতিয়া মহলে পুলিশের অভিযানের আগে অবস্থান করেছিল। ভাগ্যক্রমে সে অভিযানের আগেই আতিয়া মহল হতে বের হয়ে আসে। এরপর সে ঢাকায় ইমরানের মহাখালীর বাসায় আশ্রয় নেয়। সাজিদকে নিয়েই ইমরান ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। সাজিদ ছাড়াও সে আব্দুল হাকিম, তাওহীদ, রাশেদ, আনোয়ার জনি ও মোহাম্মদসহ জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক সদস্যদের তার বাসায় আশ্রয় দিয়েছিল। গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর জেএমবির মূলধারাসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা একত্রিত হয়ে জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপ তৈরি করে। এই গ্রুপটি গুলশান ও শোলাকিয়ায় নাশকতা চালায়।
×