ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাবে প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে জনগণ নৌকাকে বিজয়ী করবে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১২ জুন ২০১৭

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে জনগণ নৌকাকে বিজয়ী করবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনেও বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, লুটেরাদের সংগঠন বিএনপির ওপর জনগণের কোন আস্থা নেই। এ দলটি কেবল হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই ক্ষমতা দখল করেছিল এবং জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনে কোনকিছুই করেনি। ক্ষমতায় থাকাকালে তারা শুধু নিজেদের পকেট ভারি করেছিল। সন্ত্রাস ও ভয়ভীতির রাজত্ব কায়েম করে কেবল নিজেদের ভাগ্য গড়ায় ব্যস্ত ছিল। তাই বিগত দিনের মতো আগামী নির্বাচনেও জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে, আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচিত করবে। রবিবার সকালে গণভবনে শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ আজ যে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে, নিশ্চয়ই তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তারা আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে। বাংলাদেশের মানুষ আজ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে যে উন্নয়নটা পাচ্ছে সেটা প্রত্যেকটা মানুষ উপলব্ধি করে। একটা সরকারের ধারাবাহিকতা যে একান্তভাবে প্রয়োজন সেটাও আজ প্রমাণিত। তিনি বলেন, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে চলেছে। জনগণই বারবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। জনগণ কিছু পায়। আর অন্যরা ক্ষমতায় আসে শুধু নিজেদের আখের গোছাতে। আওয়ামী লীগ, তাদের সকল সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শেখ হাসিনাকে কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছায় স্নাত করেন। আর নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। ওয়ান-ইলেভেনের সেই দুঃসময়ের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে আমাকে রাখা হয়েছে ১১টি মাস। দোতলার নিচে পর্যন্ত নামতে দিত না। এমনকি অসুস্থ হলে ডাক্তারও দেখায়নি। কিন্তু আমি কখনও মনের জোর হারাইনি। তিনি বলেন, ছেলের বউয়ের অপারেশন, মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ছিল। সেজন্য আমি দেশের বাইরে যাই। অথচ এরপর আমাকে দেশে আসতে দেবে না। মামলা দেবে, ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে। এ খেলাই তারা খেলতে চেয়েছে। তিনি বলেন, সবাই মামলার ভয়ে পালায়। আমি সেখানে জোর করে ফেরত এসেছি মামলা মোকাবেলা করার জন্য। নির্দেশ ছিল কেউ যেন বিমানবন্দরে না যায় এবং তারা সংখ্যা বেঁধে দিয়েছিল। ১০-২০ জনের বেশি যেতে পারবে না। সকল বাধা উপেক্ষা করে কৌশলে বিমানবন্দরে হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মী উপস্থিত ছিল। তাদের যেটা উদ্দেশ্য ছিল, হাজার হাজার মানুষ থাকায় তারা সেটা করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলনসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা স্মরণ করে বলেন, আমরা দেখেছি চেহারা। ভেতরে থাকলে এক চেহারা, বাইরে থাকলে আরেক চেহারা। আওয়ামী লীগ সব সময় তৃণমূলের দল। তৃণমূল কখন সিদ্ধান্তে ভুল করে না। জন্মলগ্ন থেকেই এ ধরনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন। কারণ আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকারের কথা বলত, বঞ্চনার কথা বলত। জাতির পিতা জীবিত থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারত। দেশের সে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা রুখে দিতেই খুনী মোশতাক, জিয়াদের চক্রান্তে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশকে যে উন্নত করা যায়, আমরা তা প্রমাণ করতে শুরু করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে একটা সরকার যদি ধারাবাহিকভাবে না চলে তাহলে উন্নয়নটা দেখা যায় না। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। তার কারণ আমি দেশের স্বার্থ বিক্রি করতে চাইনি। বিএনপির সঙ্গে বিদেশী গোষ্ঠীর সে সময় দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি হয় মর্মে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রি করতে হবে আর তার বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে। এ রাজনীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে করে না। যারা মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তারাই এ দেশে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, বাংলাভাই, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, অত্যাচার-নির্যাতন, মানুষ হত্যা করেছে। বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতনের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়াসহ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন বানচালের নামে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষ হত্যা এবং তাদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি এ সময় তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনঃব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর এজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জাতির পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে রাজনীতিতে ব্রতী হবারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আর্দশ নিয়ে চলবে। দেশের মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা এবং যে কোন ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। জঙ্গীবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখুন এদিকে, রবিবার দুপুরে সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন মাওলানা আশরাফ আলীর নেতৃত্বে কওমী মাদ্রাসাগুলোর শীর্ষ আলেমরা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে কওমী মাদ্রাসার আলেমদের প্রতি আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ইহসানুল করিম বলেন, কওমী মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেয়ায় আলেমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী এবং ঐতিহাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করেন তারা। আলেমরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তবলীগ জামাতের জন্য কাকরাইলে মসজিদের জায়গা এবং বিশ্ব এজতেমার জন্য টঙ্গীতে জায়গা দেয়াসহ ইসলামের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও আলেমরা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসার শিক্ষর্থীদের প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের মোট ছাত্রছাত্রীদের একটা বিরাট অংশ কওমী মাদ্রাসায় পড়ে। তাদের মূল ধারায় সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। কারণ কাউকে বাদ দিয়ে শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসার উন্নয়নের আশ্বাসও দেন। আফগানিস্তানের পাশে থাকবে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দেশটির পাশে থাকার অঙ্গীকারের কথা পুনঃব্যক্ত করে বলেছেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের এক ঐতিহাসিক ও চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। আমরা আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব এবং আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা পাশে থাকব। রবিবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত আবদুল রহিম ওরাজ বিদায়ী সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। মুসলিম দেশগুলোতে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর প্রতিরোধে অগ্রগতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা পুনরায় উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁরা ওই বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন এবং তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল দেশের ব্যাপকসংখ্যক মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ কারণে আমরা গ্রামীণ জনগণের উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছি। আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত ঢাকায় তাঁর কর্মকালীন অনেক সমর্থন পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ আমার সেকেন্ড হোম এবং এখান থেকে আমি অনেক ভালবাসার স্মৃতি নিয়ে ফিরছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে তিনি বলেন, জনগণ আপনার নেতৃত্ব চায়। আপনি অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন, যা উন্নয়নশীল দেশসমূহের মুখোমুখি হতে হয়। আফগান কূটনীতিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শন করেন এবং বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ওই সময় আফগানিস্তানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কর্মসূচীতে আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম।’ এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
×