ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১২ জুন ২০১৭

ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

‘আরে সেমিফাইনালে যেহেতু উঠেছে, ফাইনালেও উঠে যাবে বাংলাদেশ।’ সবার কণ্ঠেই এখন এমন কথা। লন্ডন প্রবাসী বাঙালীদের সংখ্যা প্রচুর। যুক্তরাজ্যের যে কোন জায়গার চেয়ে এখানে তাদের বসবাস বেশি। তাই যেখানেই যাওয়া হোক, বাংলাদেশী মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা হয়ই। তাদের মুখে এখন এই একই উচ্চারণ। অনেকে তো এমনও বলছেন, ‘আমার তো মনে হচ্ছে চ্যাম্পিয়নই হয়ে যাবে বাংলাদেশ।’ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার পর ইংল্যান্ডের কাছে অস্ট্রেলিয়ার হারে শেষ চারের টিকেট নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। ইতিহাস গড়েছে। প্রথমবারের মতো কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠেছে। ইতিহাস রচনা করার পর সবাই এখন আরও বড় স্বপ্ন দেখছেন। এই যে বাংলাদেশ ফাইনালে চলে যাবে, চ্যাম্পিয়ন হতে পারে বলা হচ্ছে, সেটির পেছনে যুক্তিও আছে। যদিও পরিসংখ্যান কিংবা অতীত কোন কাজে দেয় না। এটাও বলা হয়, ‘পরিসংখ্যান একটা গাধা।’ কিন্তু এরপরও ইতিহাস বলছে, গ্রুপপর্বে বৃষ্টিতে খেলা পরিত্যক্ত হওয়ার পর এক পয়েন্ট পেয়ে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজিরও আছে। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে বিদায় নিয়েই নিচ্ছিল পাকিস্তান। এমন সময়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচে হারতে হারতে বাঁচে। ৭৪ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। তারপর বৃষ্টি আসায় এক পয়েন্ট পায়। এরপর যে জেতা শুরু করে, চ্যাম্পিয়নই হয়ে যায়। বাংলাদেশও তো পাকিস্তানের মতোই বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় এক পয়েন্ট পেয়েছে। তাতে করে সেমিফাইনালে উঠে গেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে হেরেছে। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ১৮২ রানে অলআউট হয়েছে। বাংলাদেশ ম্যাচটিতে হেরেই যাচ্ছিল। নিশ্চিত হার থেকে বৃষ্টি বাঁচিয়ে দেয়। অস্ট্রেলিয়া ১৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৮৩ রান করে ফেলে। যদি আর ৪টি ওভার খেলতে পারত অসিরা, তাহলেই বাংলাদেশ বিদায় নিত। বৃষ্টি আইনে জিতে যেত অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ভাগ্য ভাল থাকলে যা হয়। বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে গেল। বাংলাদেশ ১ পয়েন্ট পেয়ে গেল। এরপর নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্নই বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে ২০০৫ সালেও জিতেছিল। অস্ট্রেলিয়াকে সেবার হারিয়ে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এবার নিউজিল্যান্ডকে ধরাশায়ী করল। শুধু তাই নয়, বিদায়ই করে দিল। বাংলাদেশকে তখন তাকিয়ে থাকতে হলো ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের দিকে। ম্যাচটিতে ইংল্যান্ডকেই সবাই সমর্থন দিয়েছে। দেয়ারই কথা। ইংল্যান্ড জিতলেই যে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে যাওয়া নিশ্চিত হবে। দলের ক্রিকেটাররা রবিবার সারাদিন ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি দেখেছেন। কার্ডিফেই হোটেলে বসে খেলা দেখেছেন। আর প্রার্থনা করেছেন যেন অস্ট্রেলিয়া হেরে যায়। তাই হলো। অসিরা হেরে গেল। বৃষ্টি আইনে হারল। সেই হারে বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেল। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বৃষ্টিতে খেলা না হওয়ায় ১ পয়েন্ট পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে কোয়ার্টার ফাইনালেই উঠে গিয়েছিল। এবারও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পয়েন্ট পেয়েই সেমিফাইনালে উঠে গেছে বাংলাদেশ। একের পর এক ইতিহাস গড়েছে। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগেরদিন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলছিলেন, ‘কেন জানি মনে হচ্ছে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেব। আবার সেমিফাইনালেও খেলব। ভাগ্য বদল হয়েছে। সেমিতেও খেলব।’ মাশরাফির কথাই ঠিক হলো। ক্রিকেটারদের মনে বিশ্বাস ছিল তারা পারবেন। পেরে দেখিয়েছেন। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যেমন আর কোন পথ থাকে না, আক্রমণ করতেই হয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও বাংলাদেশ তাই করেছে। তাতেই জয় মিলেছে। জয় পাওয়ার পরও সেমিফাইনালে ওঠা নিশ্চিত ছিল না। সেই নিশ্চয়তাও এখন মিলে গেল। সামনে এখন ফাইনাল ম্যাচে খেলতে নামার পালা। ‘বি’ গ্রুপের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে সেমিফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। ‘এ’ গ্রুপ থেকে ইংল্যান্ড গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ যে গ্রুপ রানার্সআপ হয়েছে। বাংলাদেশ দল সেমিফাইনাল ম্যাচটি খেলতে কার্ডিফ থেকে বার্মিংহামেও চলে গেছে। আজ সেমিফাইনাল ম্যাচের জন্য প্রস্তুতিও শুরু করে দেবেন ক্রিকেটাররা। প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলবে দল। ক্রিকেটাররা স্বাভাবিকভাবেই রোমাঞ্চিত। যে কোন টুর্নামেন্টের চেয়েই বেশি উত্তেজিত। এই উত্তেজনা এখন সেমিফাইনাল ম্যাচে কাজে লেগে গেলেই হয়। প্রতিপক্ষকে হারিয়ে এবার ফাইনালে ওঠার ম্যাচ। সুযোগটি যেহেতু মিলেছে, বাংলাদেশ হারতে নিশ্চয়ই চাইবে না। আর তো একটি ম্যাচ জিতলে সেমিতে উঠবে বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। শিরোপা থেকে দুই ম্যাচ দূরে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কেউই ভাবেনি বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলতে পারে। যে কঠিন গ্রুপ। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দল প্রতিপক্ষ। কিন্তু এ ঠিকই বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিল। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে বিদায় করে দিল। বিশ্বকে দেখিয়ে দিল নিজেদের সামর্থ্য। যে সামর্থ্যে এখন সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষও কাঁপবে। প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে ওঠার ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। আর একটি ম্যাচ জিতলেই যে ফাইনালে ওঠার ইতিহাসও হয়ে যাবে।
×