ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফি কি এবার বলবেন শিরোপা আমার হাতের মুঠোয়?

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১২ জুন ২০১৭

মাশরাফি কি এবার বলবেন শিরোপা আমার হাতের মুঠোয়?

টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সেদিন কি সত্যিই রসিকতা করেছিলেন। নাকি মনের প্রবল আত্মবিশ্বাস থেকেই বলেছিলেনÑ শিরোপা থেকে এক হাত দূরে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর ঠিক আগে মিডিয়া কনফারেন্সে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শিরোপা থেকে আপনি কত দূরে। মুখে ইপ্সিত হাসির রেখা টেনে উত্তর দিয়েছিলেন মাত্র এক হাত। চিরায়ত নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের প্রেস কনফারেন্সে শো পিস হিসেবে টেবিলে সব অধিনায়কের সামনেই রাখা হয় আসরের শিরোপা। ব্যত্যয় ঘটার কথা নয় বাংলাদেশ অধিনায়কের ক্ষেত্রে। ঘটেওনি। আসলেই সেদিন শিরোপা থেকে এক হাত দূরেই ছিলেন তিনি। এখন তো মনে হচ্ছে রসিকতা নয়। মনের জোর থেকেই বলেছিলেন মাশরাফি। কারণ টাইগাররা তো এখন শিরোপা থেকে মাত্র দু’কদম দূরেÑ সেমিফাইনাল আর ফাইনাল। অধিনায়কের কথার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে সবকিছু। আসলে সময় যখন ভাল হয় তখন সবকিছু নিখুঁত হয়ে যায়। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সঙ্গে হার দিয়ে শুরুর পর খোদ মাশরাফিও হয়তো কল্পনা করেননি হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেমিফাইনালে পৌঁছে যাবে তার দল। আসলে সেদিন তিনি রসিকতাই করেছিলেন। সেটাই এখন নির্জলা সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে। পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের সামনে জ্বলজ্বল করছে সেরা চারের গৌরবময় মসনদে মাশরাফিবাহিনী। যদিও কথায় আছে সাফল্যের জন্য শুধু ভাল খেলা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ভাগ্যের সহায়তাও। এ সহায়তা যে বাংলাদেশ পায়নি তা বলা যাবে না। ভাগ্যদেবী তো দু’হাত উজাড় করেই আশীর্বাদ দিয়ে যাচ্ছেন ১৬ কোটি মানুষের দলকে। তা নাহলে কিভাবে সেমিফাইনালে খেলছে বাংলাদেশ? বিশ্ব ক্রিকেটের তিন মোড়লের অন্যতম অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বৃষ্টির বদান্যতায় এক পয়েন্ট পেয়েই স্বপ্ন আর বাস্তবতার কাছাকাছি চলে আসে বাংলাদেশ। গ্রুপের শেষ ম্যাচে তো রীতিমতো ইতিহাস। টিকে থাকার জন্য জয় ছাড়া উপায় ছিল না নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। আর উদ্ভাসিত জয় ছিনিয়ে নিজেদের আসল কাজটা করে রাখে টাইগাররা। পরপর ৪ উইকেট পতনের পর অনেকেই হয়তো ধরে নিয়েছিলেন আর সম্ভব নয়। কিন্তু ওই দৈন্যতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি দুরন্ত মাশরাফিবাহিনীর সামনে। দলের দুই অভিজ্ঞ তারকা সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লা রিয়াদ যে কীর্তি গড়েছেন তা নিয়ে এখন আর নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন পড়ে না। সেটা এখন ইতিহাস। সেমিফাইনাল টপকাতে না পারলেও এ দু’জনের পার্টনারশিপ, সেঞ্চুরির রেকর্ড সরস আলোচনার খোরাক যুগিয়ে যাবে অনেকদিন। এবার নিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মোট পাঁচবার খেলছে বাংলাদেশ। দুইবার খেলতে পারেননি র‌্যাঙ্কিয়ে পিছিয়ে থাকা। বিগত সব আসরের রেজাল্ট শুধুই হতাশার। ২০০৬ সালে জিম্বাবুইয়েকে হারানো ছাড়া বড় কোন দলের সঙ্গে জিততে পারেনি। তখন অবশ্য খেলা হতো ১০ দল নিয়ে। এখন শীর্ষ আট। যা হোক দিন বদলেছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশ। তাই ক্রিকেটে বাংলাদেশকে এখন আর খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। পরাশক্তির একটি বললেও ভুল হবে না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির লড়াই মাঠে গড়ানোর আগেই ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিং-৬ এ ওঠে সেই প্রমাণ তো দিয়েই রেখেছিলেন মাশরাফিরা। আর সেই বাহুবলেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন গৌরবগাঁথা সেমিফাইনালের মঞ্চে অরোহণ করে। অনেকেই বলতে পারেন ভাগ্যই বাংলাদেশকে টেনে তুলেছে এই বিশাল মঞ্চে। হ্যাঁ-যুক্তি দেখাতে পারেন বৃষ্টির কারণে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচ থেকে পয়েন্ট না পেলে আর ইংল্যান্ডের কাছে অস্ট্রেলিয়া না হারলে কেবল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক জয় এই অর্জনের জন্য যথেষ্ট ছিল না। বাদই পড়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু শুধু ক্রিকেট নয় কালেভদ্রে অঘটন ছাড়া ভাগ্য বরাবরই বড় দলের পাশে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। ডেথ গ্রুপের চার দলের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের পরে থাকলেও এই পরিসংখ্যান ভুল প্রমাণ করেছে টাইগাররা। ময়দানী লড়াইয়ে পরিসংখ্যান, র‌্যাঙ্কিং অচল। ভাল খেলবে যে দল তারাই জায়গা করে নিবে মর্যাদার আসনে। বাংলাদেশ সেটাই করে দেখিয়ে দিয়েছে। নিয়তি বা ভাগ্য নিয়ে ইতিহাস খুব একটা লেখা হয় না। ইতিহাস কেবল সাফল্যকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে এটাই এখন রির্জলা সত্য। কিভাবে এলো সেটা কোন বিষয় নয়। শিরোপা থেকে মাত্র দুই ম্যাচ দূরে। এটাই বাস্তবতা। এখন দেখার বিষয় মাশরাফির রসিকতা না আবার ঐতিহাসিক কোন ঘটনায় পরিণত হয়ে যায়। তার মুখ থেকেই না আবার শুনতে হয় শিরোপা এখন আমার হাতের মুঠোয়। কারণ খেলাধুলায় সবকিছুই সম্ভব। বাংলাদেশের বিপক্ষে এখন আর ফেবারিট বলে কোন প্রতিপক্ষ নেই। বাংলাদেশই তো ফেবারিট।
×