ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জার্মানিতে বাংলাদেশী দুই শিল্পীর চিত্র প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১২ জুন ২০১৭

জার্মানিতে বাংলাদেশী দুই শিল্পীর চিত্র প্রদর্শনী

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ জার্মানির কাসেলে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের দুই শিল্পীর চারুশিল্প প্রদর্শিত হচ্ছে। ১০ জুন শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ডকুমেন্টার প্রদর্শনীর ১৪তম এই আসরে বাংলাদেশের আধুনিক ধারার চারুশিল্পের কিংবদন্তি শিল্পী জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-১৯৭৬) এবং সমসাময়িক চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক নাঈম মোহাইমেন (জন্ম ১৯৭৬) অগ্রণী দুই প্রজন্মের দুই শিল্পীর কাজ স্থান পেয়েছে। এতে বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক ইতিহাসের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ তুলে ধরা হচ্ছে। এই দুই শিল্পীর কাজের একত্রে শিল্পের এই আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভূতপূর্ব অংশগ্রহণের মাধ্যমে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন দেশটির চারু শিল্পের আধুনিক ধারার ঐতিহ্য এবং সমসাময়িক শিল্পচর্চা উভয়ের প্রতি সমর্থনকে পুনরুজ্জীবিত করতে চায়। ডকুমেন্টা একটি শিল্প প্রদর্শনী যা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর কাসেল, জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমা ইউরোপের আভান্ট-গার্ড ও পরীক্ষামূলক শিল্পের গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য এটি ১৯৫৫ সালে আরনল্ড বডের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখন তার ১৪তম সংস্করণে, এই প্রদর্শনী এখন বিশ্বব্যাপী তাৎপর্যপূর্ণ। ১০ জুন থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের পর্যন্ত এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত দুর্ভিক্ষ সিরিজ ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষের অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ইতিহাসে অনেকক্ষেত্রেই উপেক্ষিত ঘটনার দৃশ্যমান দলিল, যে দুর্ভিক্ষে আনুমানিক ২ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল যখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। এবারের ডকুমেন্টায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের ব্যক্তিগত সংগ্রহের দুর্ভিক্ষ সিরিজের দুটি কালি অঙ্কন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ডকুমেন্টার এ আসরের আরটিস্টিক ডিরেক্টর এ্যাডাম শিমজিক বলেন, আবেদিন এবং অন্যান্য বঙ্গীয় ঘরানার শিল্পীদের যারা দুর্ভিক্ষের ইতিহাসকে তাদের কাজের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শন শুধু তাদের সঙ্গেই পরিচিতি নয়, বরং ইউরোপের ঔপনিবেশিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কেও পরিচয় করিয়ে দেয়া। ১৯৪০-এর দশকের প্রথম দিকে আঁকা এই শিল্পকর্ম দুটির আরও সূক্ষ্ম প্রাসঙ্গিকতা উদ্ধার করা যায় বিশ্বযুদ্ধের জটিল ইতিহাসের বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে সময় ঔপনিবেশিকতা আরও কঠোর, সহিংস ও নিপীড়ক রূপ ধারণ করে বিশ্বজুড়ে। নাঈম মোহাইমেনের ‘টু মিটিংস এ্যান্ড এ ফিউনারাল’ (২০১৭) বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দুটি ঘটনার মধ্যবর্তী এক সময়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে যখন বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের আলজিরিয়ায় ন্যাম বৈঠকে এবং তার মতাদর্শিক প্রতিপক্ষ ইসলামিক দেশসমূহের সংগঠন ওআইসির ১৯৭৪ সালের লাহোর বৈঠকে অংশগ্রহণ করে। চলচ্চিত্রের মূল বিষয়বস্ত হলো এই দুই বৈঠককে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সে সময়ের রাজনৈতিক ও অস্তিত্বের সঙ্কট, বিশেষ করে যখন একই সময়ে সে জাতিসংঘের বৈধতার জন্য লড়াই করছিল। পাশাপাশি চলচ্চিত্রটি তৃতীয় বিশ্বের ধারণাটিকে ক্রম ক্ষয়িষ্ণু হিসেবে বিবেচনা করেছে বরং এ সকল অঞ্চলকে ঔপনিবেশিকতার মুক্তি, উদার ধর্ম চর্চা এবং সমাজতন্ত্রের বিকাশের একটি সম্ভাব্য স্থান হিসেবে প্রকাশ করেছে। শারজাহ আর্ট ফাউন্ডেশন এবং জাস্টফিল্মস, ফোর্ড ফাউন্ডেশন কর্তৃক এই চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং এটি আর্টস কাউন্সিল ইংল্যান্ড, টেনস্টা কনস্টাল (সুইডেন) এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশন দ্বারা সমর্থিত।
×