ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সোলার পাওয়ার হাব

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১২ জুন ২০১৭

সোলার পাওয়ার হাব

বাংলাদেশে বিদ্যুত ও জ্বালানি সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা ভাবা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। আর শুধু বাংলাদেশইবা কেন, বরং সারা বিশ্বেরই মনোযোগ এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে, যা একই সঙ্গে সহজপ্রাপ্য, সাশ্রয়ী, সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব। সৌরবিদ্যুত, বায়ুবিদ্যুত, জলবিদ্যুত, সমুদ্র তরঙ্গ থেকে আহরিত বিদ্যুত, বায়োফুয়েলÑ এ সবই বিকল্প ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির নানাবিধ উৎস হতে পারে। তবে এসবের মধ্যেও সবচেয়ে সুলভ ও সস্তা হলো সৌরবিদ্যুত। বাংলাদেশ গ্রীষ্মম-লীয় দেশ বিধায় এখানে সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা অফুরন্ত। তবে দুঃখজনক হলো দীর্ঘদিন থেকে সরকারী-বেসরকারী নীতিনির্ধারক ও উদ্যোক্তাদের মাথায় সৌরবিদ্যুত নিয়ে এক ধরনের চিন্তা-ভাবনা থাকলেও বাস্তবে এর অগ্রগতি খুব কমই লক্ষ্য করা যায়। এরপরও যে সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে অগ্রগতি একেবারেই হয়নি তা নয়। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে অন্তত ১০ ভাগ বিদ্যুত উৎপাদন হওয়ার কথা। সেই হিসেবে বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ৯ হাজার মেগাওয়াট হিসেবে ৯০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুত থাকার কথা। বাস্তবে সোলার হাব সিস্টেম এবং মিনি গ্রিড মিলিয়ে পাওয়া যায় মাত্র ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। দক্ষিণাঞ্চলসহ কোন কোন অঞ্চলে ব্যক্তি উদ্যোগে ঘরে ঘরে সৌরবিদ্যুত জনপ্রিয় হলেও সরকারী-বেসরকারী ছোট-বড় উদ্যোগ নেই বললেই চলে। সুপরিসর পর্যায়ে সৌরবিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যতম একটি বড় বাধা হলো জমিপ্রাপ্তি ও অধিগ্রহণ। সে কারণে দেশীয় উদ্যোক্তারা সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে আগ্রহ প্রায় হারিয়ে ফেলছে। তবে সম্প্রতি সরকার ব্যাপক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সারাদেশে ১০০ ইপিজেড তথা রফতানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। বেসরকারী খাতও এগিয়ে এসেছে ইপিজেড নির্মাণে। এর জন্য মোট ৭৬ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এরই একটি অংশ চট্টগ্রামের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পড়ে থাকা ২ হাজার একর জমি। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড সেখানে একটি সোলার পাওয়ার হাব তথা পার্ক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। সৌরবিদ্যুতের এই হাবটি হবে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন। বিদ্যুত বিভাগ এখন পর্যন্ত জাতীয় বিদ্যুত গ্রিডে সংযুক্ত হতে পারে এমন কোন সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারেনি। সেই প্রেক্ষাপটে মীরসরাইয়ের সোলার পাওয়ার হাবটি হতে পারে পথপ্রদর্শক। পিডিবি খুব শীঘ্রই এটির জন্য দরপত্র আহ্বানের ঘোষণা দিতে পারে। অবশ্য তাতেও যে শেষ রক্ষা হবে এমন কথা বলা যায় না। সারাদেশের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সাল নাগাদ দেশে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। সেই হিসেবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনের হার হওয়ার কথা দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। তার মানে দাঁড়ায় সরকারী-বেসরকারী নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা জোরেশোরে বলা হলেও বাস্তবে এর অগ্রগতি আদৌ আশাব্যঞ্জক নয়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সব রকম জ্বালানি তেল ও কয়লার দাম কম থাকায় বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সবিশেষ জোর দিচ্ছে এসব থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ওপর। পরিবেশবান্ধব নয় বিধায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে ঘরে-বাইরে তীব্র আপত্তি থাকলেও একাধিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশ অগ্রসর হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণেও। এতসব সত্ত্বেও দেশীয় ও বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি বিবেচনায় এবং সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বিধায় আগামীতে আমাদের সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনে। মীরসরাইতে প্রস্তাবিত সোলার পাওয়ার হাব এক্ষেত্রে হতে পারে পথপ্রদর্শক। তবে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি তথা গোষ্ঠীগত উদ্যোগও অবশ্যই প্রত্যাশিত।
×