ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ বিজয় যেন রূপকথা

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১২ জুন ২০১৭

এ বিজয় যেন রূপকথা

শুক্রবার ইংল্যান্ডের কার্ডিফে শক্তিশালী ও সংহত টিম নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জয়কে নানা বিশ্লেষণে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছেÑ অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয়, মহাকাব্যিক বিজয়। এর কোনটিই অত্যুক্তি বলে মনে হবে না নিরপেক্ষ দর্শকের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে। মাত্র তেত্রিশ রানে চার উইকেটের পতনের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই চালানোর জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো মনোবল, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একনিষ্ঠ একাগ্রতা এবং অখ- মনোযোগ ও ধৈর্য, স্থিরতা। এর কোন একটির অনুপস্থিতিতে ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। অনেককাল টাইগারদের এমন ‘প্রাপ্তবয়স্কসুলভ’ দায়িত্বশীল ব্যাটিং এবং একই সঙ্গে সমঝোতাপূর্ণ ছন্দোময় গতিশীল জুটি গড়ে উঠতে দেখা যায়নি। একসঙ্গে একাধিক ভালর যোগফলে ‘উত্তম ফল’ লাভই স্বাভাবিক ঘটনা। আর সেটাই হয়েছে কার্ডিফে। তবু এ বিজয় যেন রূপকথা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ান তানিমের মতো দুর্ধর্ষ ওপেনারের শূন্য রানে বিদায়ের পর আকাশ থেকে বিমান ভূপতিত হওয়ার মতোই পরিস্থিতির মুখোমুখি সহযোদ্ধা টাইগাররা। উইকেটে থিতু হতে না পেরে দেশের নির্ভরযোগ্য ব্যাটিং স্তম্ভের ধারাবাহিক পতনে তখন সত্যিই দলের দিশেহারা অবস্থা। তেমন একটি নিমজ্জমান পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হয়ে দেখা দিল অভিজ্ঞ, চৌকস, নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানের নায়কোচিত বিশ্বস্ত দায়িত্বশীল পারফরম্যান্স। ভাগ্য ভাল, প্রয়োজন কানায় কানায় পূরণ করে রূপকথার মতো এক বিজয় এনে দিয়েছে সাকিব-মাহমুদুল্লাহ জুটি। বাংলাদেশের ইতিহাসে উভয়ের প্রথম জোড়া সেঞ্চুরি দেশবাসীকে তৃপ্ত করল। প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোন জুটিতে ২০০ রানও হলো। শাবাশ বাংলাদেশ। জ্বলে-পুড়ে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়। আইসিসি চ্যাস্পিয়ন্স ট্রফির আগের ম্যাচগুলোয় ‘ছারখার’ হওয়ার পর সঠিক সময়ে পুনর্বার জ্বলে উঠল টাইগাররা। সত্যিই মাথা নোয়াবার নয়। প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডকে গত মাসেও এমন অবাক করা পরাজয় ‘উপহার’ দিয়েছিল টাইগাররা। ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে দিয়ে টাইগাররা বিশেষ অর্জনের কোটা পূর্ণ করেছিল। নিউজিল্যান্ডকে এর আগে আটবার ওয়ান ডে ম্যাচে হারিয়েছে বাংলাদেশ দল, তবে এর সব কটিই স্বদেশের মাটিতে। এই প্রথমবার তারা কিউইদের বধ করল তাদেরই মাটিতে। একই সঙ্গে পূরণ হলো বিদেশের মাঠে সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে বিজয় অর্জনের কোটা। সেইসঙ্গে সীমিত ওভারের খেলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ উঠে এসেছিল র‌্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে। আগে নিউজিল্যান্ড, পরে ইংল্যান্ডÑ দু’ জায়গাতেই নিউজিল্যান্ডকে পরাস্ত করল বাংলাদেশ পাঁচ উইকেটে। আমরা গত মাসে বলেছিলাম, আগামীতে ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই জয় মাশরাফি বিন মুর্তজার দলকে দেবে বাড়তি আত্মবিশ্বাস। সত্যিই সেটা দিয়েছে। প্রথমত বোলাররা নিউজিল্যান্ডকে বড় স্কোর গড়তে দেয়নি। দ্বিতীয়ত ধ্বংসস্তূপ থেকে তারা উঠে দাঁড়িয়েছে। টাইগারদের শক্তি ও যোগ্যতা রয়েছেÑ এটা প্রমাণিত। শুধু প্রয়োজন আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যাভিসারী হওয়া। তারই একটি নমুনা পাওয়া গেল কার্ডিফের ম্যাচে। কেননা ম্যাচটিতে হারলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকেই ছিটকে পড়ত টাইগাররা। এখন আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি আরও তাক লাগানো বিজয়ের। আমরা বার বার বলেছি, দেশের বাইরের মাঠে প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে ভাল করার জন্য বাড়তি প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল। টাইগাররা সেটি অর্জনের দিকে অনেকটাই এগিয়েছে বলেও আমাদের বিশ্বাস। আমাদের প্রত্যাশা টাইগাররা আরও এমন চমকপ্রদ বিজয় ছিনিয়ে আনবে যা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখবে বিশ্ব।
×