ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উপজেলা চেয়ারম্যান পুত্রের কাণ্ড শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি

প্রকাশিত: ০৮:০০, ১১ জুন ২০১৭

উপজেলা চেয়ারম্যান পুত্রের কাণ্ড শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জেলার মেহেন্দিগঞ্জে ১১ দিন আটকে রেখে আগুনের ছ্যাঁকা দেয়া ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার এসএসসি পাস করা ছাত্র মোছাদ্দেক সিকদারকে (১৯) শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে ভর্তি হওয়া মোছাদ্দেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন সার্জারি ইউনিট-১ ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ এসএম মশিউল আজম। হিজলা উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ টিপুর পুত্র তন্ময় সিকদার এগারোদিন আটকে রেখে মোছাদ্দেকের ওপর এ নির্যাতন চালিয়েছে। মোছাদ্দেক মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আজিমপুর গ্রামের কামাল সিকদারের পুত্র। নির্যাতনের শিকার মোছাদ্দেকের মা মরিয়ম বেগম বলেন, তিনি রাজধানীর গার্মেন্টেসে এবং স্বামী কামাল হোসেন বনানীর ন্যাশনাল ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে ঢাকায় থাকেন। তাদের একমাত্র সন্তান মোছাদ্দেক বাড়িতে তার দাদির কাছে থেকে পড়াশোনা করে। তিনি আরও জানান, একই স্কুলে পড়ালেখা করায় এক ক্লাস সিনিয়র হিজলা উপজেলা চেয়ারম্যানের পুত্র তন্ময় সিকদারের সঙ্গে মোছাদ্দেকের সখ্য গড়ে ওঠে। সেই সুবাদে তাদের বাড়িতে তন্ময়ের যাতায়াত ছিল। ১১ দিন পূর্বে মোছাদ্দেককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় তন্ময়। সেই থেকে মোছাদ্দেক নিখোঁজ হয়। শুক্রবার দুপুরে তন্ময় মোটরসাইকেলযোগে গুরুতর আহত মোছাদ্দেককে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে মোছাদ্দেকের দাদি নুরজাহান বেগম আহত নাতিকে পার্শ্ববর্তী মুলাদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান পুত্র তন্ময়ের হুমকির কারণে ফের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এতে মোছাদ্দেকের অবস্থা আরও গুরুতর হওয়ার খবর পেয়ে শুক্রবার তার মা ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে অতিগোপনে শনিবার বিকেলে তার পুত্রকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেন। মরিয়ম বেগম আরও বলেন, হাসপাতালে ভর্তি করার খবর পেয়ে নির্যাতনকারী তন্ময় সিকদার তার দলবল নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। সূত্রমতে, মোছাদ্দেক এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ফোর পয়েন্ট জিরো ফাইভ পেয়ে পাস করার পর তার রাজধানীর একটি কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। এটা মেনে নিতে পারেনি তন্ময়। সে কারণেই তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। সূত্রমতে, মোছাদ্দেককে আটকে রেখে নির্যাতন করায় কলেজে ভর্তির তারিখ পার হয়ে গেছে। আহত মোছাদ্দেকের ফুপা ফজলে করিম বলেন, তন্ময় সিগারেটের আগুন দিয়ে মোছাদ্দেককে অসংখ্য ছ্যাঁকা দিয়ে ক্ষত করে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। তিনি আরও জানান, নির্যাতনকারী তন্ময়ের বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ায় তাদের হুমকির মুখে পুরো পরিবার এখন হতাশাগ্রস্ত। শেবাচিম হাসপাতালের সার্জারি ইউনিট-১-এর ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ এসএম মশিউল আজম বলেন, রোগীর শরীরে আগুনে পোড়ায় অসংখ্য ক্ষত রয়েছে। নির্যাতনের কারণে তার কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে কিনা তার পরীক্ষা আর মাথায় আঘাত থাকায় সিটিস্ক্যান করতে দিয়েছেন। এ রিপোর্ট পাওয়ার পরই রোগীর অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে রোগীর সার্বিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও উল্লেখ করেন মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ এসএম মশিউল আজম। হিজলা থানার ওসি মোঃ মাসুদুজ্জামান বলেন, তিনি ঘটনা শুনেছেন কিন্তু তার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত তন্ময় সিকদারের বাবা হিজলা উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ টিপুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
×