ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ডের কাছে হেরে আস্ট্রেলিয়ার বিদায়

স্বপ্নের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ১১ জুন ২০১৭

স্বপ্নের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

মজিবর রহমান ॥ বৃষ্টি আইনে ইংল্যান্ডের ৪০ রানের জয়ে স্বপ্নের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। সৌভাগ্যই বলতে হচ্ছে মাশরাফিদের। প্রথমবারের মতো মর্যাদার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে জায়গা করে নেয়া নিঃসন্দেহে গৌরবের। এ সুযোগটা এসে গেল ইংল্যান্ডের কাছে অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়ে। আগেরদিন নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে সেমির মঞ্চটা তৈরি করে রেখেছিল টাইগাররা। এবার সেই মসনদে বসল তারা। কিউইদের বিরুদ্ধে সাকিব আল হাসান আর মাহমুল্লাহ রিয়াদ যে তা-ব চালিয়ে কেবল রেকর্ডের সেঞ্চুরিই নয়। সাবলীল জয় উপহার দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে, ঠিক একই পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইয়ন মরগান ও বেন স্টোকস। প্রায় জোড়া সেঞ্চুরি হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু এ ক্ষেতে দুর্ভাগ্যই বলতে হবে ইংলিশ অধিনায়ক মরগানের। দলীয় রান যখন ১৯৪ ঠিক তখনই ৮১ বলে ব্যক্তিগত ৮৭ রানের মাথায় রান আউট হয়ে ফিরে যান তিনি। তবে স্টোকস কিন্তু ঠিকই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলের জয়ে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে মরগানের আউটে অক্ষত থাকল সাকিব ও মাহদুল্লার কীর্তি। জোড়া সেঞ্চুরি থেকে অল্পের জন্য বঞ্চিত হলো স্বাগতিক ইংল্যান্ড। তা নাহলে এবারের আসরে আরেকটা জোড়া সেঞ্চুরির রেকর্ড হয়ে যেত। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের সঙ্গে অসি-কিউই লড়াইটার বেশ মিল রয়েছে। বাংলাদেশ টপাটপ চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ার পর সাবিক-মাহমুদুল্লাহ যেভাবে ম্যাচটাকে ধরেছিলেন, পৌঁছে দিয়েছিলেন জয়ের বন্দরে। ঠিক একইভাবে দলীয় ৩৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড চাপে পড়ার পর মরগান- স্টোকস জুটিও তাই করলেন। ব্যতিক্রম বলতে কেবল অল্পের জন্য মরগানের সেঞ্চরিটা ফসকে যাওয়া। এ জয়ের সুবাদে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমির খাতায় নাম লিখিয়ে নিয়েছে ইংলিশরা। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা জয়ে ৬ পয়েন্ট। তিন পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমির টিকেট পেল বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ নির্ধারণ হবে আজ ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ও আগামীকাল পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পর। ‘বি’ গ্রুপে এই চারটি দলেরই পয়েন্ট দুই করে। দু’দফা বৃষ্টির বাগড়ায় পড়ে ইংল্যান্ড-আস্ট্রেলিয়া ম্যাচটাও ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত ওভার শেষ করতে পারলেও অস্ট্রেলিয়া থেমে যায় ৪ উইকেটে দলীয় ২৪০ রানে। স্কোর বোর্ডে তখন শো করছিল ৪০.২ ওভার আর ইংল্যান্ড। বৃষ্টির মাস্তানি অনুমান করতে পেরে কিছু সময় অপেক্ষার পর এখানেই হিসেব চুকিয়ে নিতে বাধ্য হন ম্যাচের পরিচালকরা। উল্লেখিত ওভারে ইংল্যান্ডকে ২০১ রানের টার্গেটে এনে ডিএল মেথডে ৪০ রানে জয়ী ঘোষণা করা হয় । বিজয়ী দলের পক্ষে ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন বেন স্টোকস। আর ২৯ রানে জস বাটলার। এ ছাড়া দুই ওপেনার জেসন রয় ও এ্যালেক্স হালেস আউট হন যথাক্রমে ৪ ও ০ রানে। ওয়ানডাউনে জো রুট নেমে সাঝঘরে ফিরেন ব্যক্তিগত ১৫ রানে। ম্যাচসেরার পুরস্কারটা লাভ করেন সেঞ্চুরিয়ান বেন স্টোকস। এমনিতে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া দ্বৈরথ ঘিরে টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের খুব একটা আগ্রহ থাকার কথা নয়। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শনিবার এজবাস্টনের ম্যাচটার দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বাংলাদেশ। সেটি সমীকরণের কারণে। আগের দিন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ঐতিহাসিক ব্যাটিং নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর শেষ চারের আশা বাঁচিয়ে রাখে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। পয়েন্টের হিসেবে, অস্ট্রেলিয়া হারলেই শেষ চারে বাংলাদেশ। মার্ক উড-আদিল রশিদদের একেকটা উইকেট শিকারে, ডেভিড ওয়ার্নার-স্টিভেন স্মিথদের আউটে তাই লাল সবুজের সমর্থকদের বাঁধভাঙ্গা উল্লাস! ইংল্যান্ড, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলে চিৎকার। সেই চিৎকার হয়ত বার্মিহামে গিয়ে পৌঁছায়নি, তবে স্বাগতিক ইংলিশরা কিন্তু শুরুটা করে ফেবারিটের মতোই। ৫০ ওভারে ২৭৭/৯Ñএ থামিয়ে দেয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে। টসে হেরে ব্যাটিং পাওয়া স্টিভেন স্মিথের দল শুরুতে কিন্তু বড় স্কোরের ইঙ্গিতই দিয়েছিল।কিন্তু আদিল রশিদের ঘূর্ণিতে এলোমেলো হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ। অন্যপ্রান্তে পেস আক্রমণে ঘায়েল করেন গতি তারকা মার্ক উড। মরগান-বাহিনীর সামনে টার্গেট ২৭৮ রানের। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪০ রানের ওপেনিং জুটি উপহার দেন দুই হার্ড-হিটার ডেভিড ওয়ার্নার এবং এ্যারন ফিঞ্চ। মার্ক উডের বলে ওয়ার্নার (২৫ বলে ২১) উইকেটকিপার বাটলারের গ্লাভসবন্দী হলে ভাঙ্গে এই জুটি। ফিঞ্চকে নিয়ে হাল ধরেন স্মিথ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৯৬ রান। তবে ফিঞ্চের (৬৪ বলে ৬৮) পর দ্রুত বিদায় নেন ময়েস হেনরিকস (১৯ বলে ১৭) এবং অধিনায়ক স্মিথ (৭৭ বলে ৫৬)। হেনরিকসকে দিয়েই শিকার শুরু করেন রশিদ। এই পর্যায়ে পঞ্চম উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়ে বিপদ সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং ট্রেভিস হেড। মার্ক উড ম্যাক্সওয়েলকে (৩১ বলে ২০) ফেরানোর পর ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন রশিদ। পর পর তার শিকার হন ম্যাথু ওয়েড (৩ বলে ২), মিচেল স্টার্ক (৩ বলে ০) এবং প্যাট কমিন্স ( ৭ বলে ৪)। এ্যাডাম জাম্পাকে রানের খাতা খুলতে দেননি উড। শেষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। শেষতক নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭৭ গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। বিপদের মধ্যে ৬৪ বলে ৭১ রানের কার্যকর ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন হেড। পেসার মার্ক উড এবং লেগস্পিনার আদিল রশিদ দু-জনেই নেন সমান ৪টি করে উইকেট। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া ২৭৭/৯(৫০ ওভার)। ওয়ার্নার ২১, ফিঞ্চ ৬৮, স্মিথ ৫৬, হেনরিকস ১৭, হেড ৭১(অপ.) ম্যাক্সওয়েল ২০। মার্ক উড ৩৩/৪, আদিল রশীদ ৪১/৪। ইংল্যান্ড ॥ ২৪০/৪(৪০.২ ওভার), (ডিএল মেথডে ৪০.২ ওভারে টার্গেট ২২১ রান)। মরগান ৮৭, স্টোকস ১০২ (অপ.), বাটলার ২৯ (অপ.)। স্টার্ক ৫২/১. হ্যাজেলউড ৫০/২) ফল ॥ বৃষ্টি আইনে ইংল্যান্ড ৪০ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)।
×