ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

নতুন ভ্যাট আইন

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ১১ জুন ২০১৭

নতুন ভ্যাট আইন

১ জুলাই ২০১৭ থেকে দেশব্যাপী চালু হতে যাচ্ছে মূল্য সংযোজন কর আইন ২০১২, যা কিনা নতুন ভ্যাট আইন নামে সর্ব মহলে সমধিক পরিচিত। এই আইনকে ঘিরে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার পাশাপাশি রয়েছে ব্যাপক কর্মতৎপরতা ও প্রস্তুতিপর্ব। নতুন এই ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কেবল বদ্ধপরিকরই নয় বরং ইতোমধ্যে এই আইন বিষয়ে দেশব্যাপী নানামুখী কৌতূহল নিবৃত্তের জন্য কল সেন্টার স্থাপনসহ সবরকম প্রস্তুতিপর্বও সারা হয়েছে। যে কেউ সহজেই ১৬৫৫৫ নম্বরে ফোন করে জেনে নিতে পারে ভ্যাট-সংক্রান্ত যে কোন তথ্য। ভ্যাট-সংক্রান্ত বর্তমান আইনটি ১৯৯১ সালে প্রণীত। এ আইনের আওতায়ই এনবিআর ১৯৯১ সাল থেকে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আদায় করে আসছে। ব্যবসার ধরন পরিবর্তন ও নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে বিদ্যমান আইনটি পরিবর্তনের বিষয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ করছে এনবিআর। ২০১০ সালে নতুন আইনটি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর সংসদে তা পাস হয়। এরপর ব্যবসায়ীসহ সব অংশীদারের পরামর্শ সাপেক্ষে সংশোধন করে ২০১৫ সালেই তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করে সরকার। তবে ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে বারবারই তা পেছাতে হয়েছে এনবিআরকে। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শুরুতে তা কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে আবারও বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয় সরকার। তবে আগামী অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ভ্যাটের নতুন আইনটি অনেক বেশি সহজ ও সাবলীল করা হয়েছে। এ আইনে সবকিছুই করা হয়েছে অনলাইনের মাধ্যমে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতামতের ভিত্তিতেই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন আর মাস শেষে কাউকে নিজে হাতে করে রিটার্ন দাখিলের জন্য অফিসে যেতে হবে না। খুব সহজে রিটার্ন পূরণ করে প্রযোজ্য ভ্যাট ব্যাঙ্কিং চ্যানেলে পরিশোধ করে মেইল করে দিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট দফতরে। আবার যদি কোন বিষয়ে কোন রকম ভিন্নমত বা সংক্ষুব্ধি থাকে, তাও আপনি জানাতে পারবেন অনলাইনে ই-মেইলের মাধ্যমে। এখন কাজ হবে সব প্রযুক্তিভিত্তিক, সেখানে ‘মানবিক ভুলেরও’ কোন আশঙ্কা নেই। খরচ কমবে, সময় বাঁচবে, কিন্তু মুনাফা হবে বেশি। নতুন ভ্যাট আইনে পণ্য বিক্রয় এবং সেবা সরবরাহের হিসাব সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ছোট থেকে বড় সব শ্রেণীর ব্যবসায়ীকে তা অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় রেয়াত সুবিধা পাবেন না ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ টার্নওভারের সীমার নিচে হলে এবং বাধ্যতামূলকভাবে দাখিলপত্র জমার মতো বেশকিছু আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত করা হয়েছে। নতুন ভ্যাট আইন একটি সর্বজনীন প্রক্রিয়া হওয়ায় আগের বিভিন্ন স্তরবিশিষ্ট আইনের অভ্যস্ততা থেকে ব্যবসায়ীদের বের করে আনতে বেগ পেতে হবে। আইন অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা নিজেরা ভ্যাট পরিশোধ না করলেও ক্রেতাদের কাছ থেকে তা আদায়ের দায়িত্ব তাদেরই থাকবে। তবে কোন কোন ব্যবসায়ী ক্রেতা হারানোর ভয়ে এর বিরোধিতা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের আইনের নানা সুবিধা সম্পর্কে অবহিত করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এনবিআরের জন্য। এর বাইরে আইনটি বাস্তবায়নে আরও যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো হলো, কর প্রদানে অনীহা দূর করে কর সংস্কৃতির পরিবেশ সৃষ্টি, করদাতাদের পুনর্নিবন্ধনীকরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি; আইটি সিস্টেম স্থাপনের পর ভ্যাট অফিসে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল নিয়োগ ও কর কর্মকর্তাদের মানসিকতার পরিবর্তন। আমাদের দেশে ভ্যাটের আওতায় নিবন্ধিত সাড়ে ৮ লাখ শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে; কিন্তু মাত্র ৩২ হাজার প্রতিষ্ঠান রিটার্ন দেয়। বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির সীমা বছরে ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৬ লাখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ মাসে গড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারধারী প্রতিষ্ঠানের কোন কর দিতে হবে না। সেই সঙ্গে টার্নওভার করের সীমা বছরে ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠানের মাসিক টার্নওভার গড়ে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচে, তাদের ৪ শতাংশ হারে টার্নওভার কর দিতে হবে। এতদিন ৩০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভারের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল। নতুন ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আইনের আওতায় অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন শুরু চলছে। যে কেউ সহজে হৎন.মড়া.নফ তে ক্লিক করে অনলাইনে ইলেক্ট্রনিক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা ই-বিআইএন নিতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে এই কার্যক্রম। অনলাইনে সেবা নেয়ার জন্য ভ্যাট নিবন্ধন বা ই-বিআইএন নেয়ার বিষয়টি অনেকটা অনলাইনে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএনের মতো। ঘরে বসেই ব্যবসায়ীরা এখন ভ্যাট নিবন্ধন নিতে পারবেন। এরই মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানের সনাতনি পদ্ধতিতে নিবন্ধন নেয়া আছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে এখন নতুন করে অনলাইন পুনর্নিবন্ধন নিতে হবে।
×