ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ আনন্দ বেদনার উৎসব

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১১ জুন ২০১৭

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ॥ আনন্দ বেদনার উৎসব

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ হলো প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরম আকাক্সক্ষার স্থান। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি যুদ্ধে বিজয় লাভ করেই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই স্বপ্নের আঙ্গিনায় পদার্পণ করে। আর সেই আঙ্গিনা যদি হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাহলে তো কথাই নেই। দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম দিন থেকেই ক্লাস, পরীক্ষা, এ্যাসাইনমেন্টের ব্যস্ততা যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই বলে কি শিক্ষার্থীরা থেমে থাকবে? তারা শত ব্যস্ততার মাঝেও ক্যাম্পাস, বন্ধুবান্ধব নিয়ে নানা রকমের স্বপ্ন বুনতে থাকে। ক্লাস শেষে ঘুরে বেড়ানো, ক্যাম্পাসের মনোরম দৃশ্য উপভোগ, বন্ধুদের সঙ্গে গানবাজনা, আড্ডা, ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে নৌকা ভেসে বেড়ানোর মাঝেই সময় কেটে যায়। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের মমতাময়ী মায়ের মতো আপন। ছুটির দিনগুলোতে বাসায় গেলেও যেন মন পড়ে থাকে প্রাণের ক্যাম্পাসে। আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্বপ্ন মাখা সময়গুলো। ঘোরের মাঝেই যেন চারটি বছর চোখের পলকেই শেষ হয়ে যায়। একসময় টুং করে বেজে ওঠে বিদায়ের ঘণ্টা। আর এই মধুময় দিনগুলোর স্মৃতি হৃদয়ের ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আনন্দে, উচ্ছ্বাসে, সেøøাগানে, রঙে-রূপে এক অনন্য সাজে সজ্জিত হয়ে র‌্যাগ ডে নামক মহানন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। র‌্যাগ ডে হলো শিক্ষাজীবনের শেষ দিন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ৫২তম ব্যাচ এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মেতে আনন্দ শোভাযাত্রায়। ‘সর্বত্র রেখেছি চিহ্ন, আমরা বায়ান্ন’ এই সেøøাগানকে সামনে রেখে তারা তিনদিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে র‌্যাগ ডের উৎসব পালন করে। র‌্যাগ ডে নিয়ে কৃষি অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ তরিকুল ইসলাম রিফাত বলেন, শেষ করে ফেললাম ¯œাতক পাঠ। দেখতে দেখতেই কেটে গেল চারটি বছর। বিদায় শব্দটি মনে হলেই যেন বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। অনেক হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ক্যাম্পাসের প্রতিটি আনাচে-কানাচে। ক্লাসের বন্ধুবান্ধব, হলের স্মৃতিময় মধুর দিনগুলো ছেড়ে চলে যাব ভাবতেই খারাপ লাগছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই চাঁদা তুলে পালন করে এ মহাউৎসবের। এ উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসের পরিবেশ হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। উৎসবকে সম্পন্ন করতে শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পাশাপাশি চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া। নানা রঙের আলপনায় সাজিয়ে তোলে অনুষদ ভবন, ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। দিনের শুরুতেই কেক কাটা দিয়ে শুরু হয় র‌্যাগ ডের উদযাপন কর্মসূচী। এ দিনে ছেলেরা একই রঙের পাঞ্জাবি, মেয়েরা গোলাপি শাড়ি পরে বর্ণাঢ্য র‌্যালির মাধ্যমে সারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। বিকেলবেলায় রিক্সায় পুরো ক্যাম্পাস ভ্রমণের মাধ্যমে আনন্দ যেন নতুন রূপে ফুটে ওঠে। এরপর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্যাশন শো ও রাতে বার বি কিউ পার্টির আয়োজন করা হয়। পরদিন সকালবেলা বিস্কুট দৌড়, রশি টানাটানি, হাঁড়ি ভাঙ্গা, সুঁই-সুতা দৌড়, চকোলেট দৌড় খেলার পাশাপাশি সাইকেল র‌্যালি করা হয়। উৎসবের শেষ দিনে সকালবেলাতেই শুরু হয় রং খেলা। বন্ধুদের কেউ দুষ্টুমির ছলে রং দিয়ে রাঙিয়ে দিচ্ছে অন্য বন্ধুর মুখ, কেউবা হৈ হুল্লোড়, রং ছোড়াছুড়ি, বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচ, গান, আড্ডায় মেতে ওঠে। কেউ আবার ব্যস্ত স্মরণীয় এসব দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দী করতে। এ সময় র‌্যাগ ডের টি শার্টে চলে মনের না বলা কথা লেখার সেই স্মরণীয় মুহূর্ত। এরপর ব্রহ্মপুত্রের বুকে নৌকা ভ্রমণের শেষে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতিচারণ করে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। কৃষি অনুষদের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিফাত, মিথুন, হাবিব, আতিক, মিল্টন, বান্না, মারুফ, সুস্ময়, হাসান, শুভ, হিমু, কথা, তৃষা, ঊর্মী, তকি, তানিয়া, কেয়া, সোনিয়া র‌্যাগ ডে নিয়ে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, প্রথম বর্ষ থেকেই মনে হতো কবে ব্যস্ততার দিনগুলো শেষ হবে। এখন মনে হচ্ছে সেই দিনগুলো কতই না রঙিন ছিল। আনন্দের মাঝেও রয়ে যাবে সুপ্ত বেদনা। পলকেই যেন ঝাপসা হয়ে উঠছে আনন্দঘন দিনগুলো আর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে আজ আমরা একে অন্যকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানের এক মুহূর্তে এসে একে অন্যকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বস্তুতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়ই এক শিক্ষার্থীর জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। আর র‌্যাগ ডে পালনের মাধ্যমেই শেষ হয় সেই শিক্ষাজীবনের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি। এ দিনে সবাই আনন্দে মেতে থাকলেও ভিতরে ভিতরে থাকে গুমোট বেদনা।
×