ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফারুক হোসেন চৌধুরী

১০ বছরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১১ জুন ২০১৭

১০ বছরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার পরিকল্পনা, বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে সমতা অর্জনের পদক্ষেপের ফসল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্দেশ্য সারাদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, জ্ঞানচর্চা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব প্রদানসহ পঠন-পাঠন ও গবেষণার সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০১ সালের ১৫ জুলাই মহান জাতীয় সংসদে ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প’ বিল পাস হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কারণে পাবনা তথা উত্তরবঙ্গ শিক্ষার নগরীতে পরিণত হয়েছে। গত ৫ ই জুন এ বিশ্ববিদ্যালয় ১০ বছরে পদার্পণ করেছে। এ উপলক্ষে ক্যাম্পাস সেজেছিল বর্নিল সাজে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প বিল পাস হওয়ার পর নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ২০০৮ সালে পাবনা শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ৩০ একর জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ২০০৯ সালের ৫ জুন আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। প্রশাসন ভবন, ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন, একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন, ভিসি লাউঞ্জ, ক্যাফেটরিয়া, মসজিদ. ডরমেটরি, মেইনগেট,পাওয়ার স্টেশনসহ সকল অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। চালু হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র হল ও শেখ হাসিনা ছাত্রী হল। স্বাধীনতা চত্বর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালীর সকল আন্দোলন সংগ্রাম ও গৌরব অর্জন তুলে ধরেছে। অনুষদ ও বিভাগসমূহঃ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক এ্যান্ড টেলিকমিউনিকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, ফামের্সি, পরিসংখ্যান, রসায়ন, ব্যবসায় প্রশাসন, অর্থনীতি, বাংলা , ইংরেজী, সমাজকর্ম, লোক প্রশাসন, ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ, ভূগোল ও পরিবেশ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ট্যুরিজম এ্যান্ড ইসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। রয়েছে একটি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি, বি ফার্ম, বি. আর্ক, বিএসএস, বিএ (অনার্স), বিবিএ, এমএসসি, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, ইএমবিএ, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রী চালু আছে। এছাড়া সান্ধ্যকালীন এমবিএসহ রয়েছে বিভিন্ন সার্টিফিকেট কোর্স। ‘স্বপ্ন ছোঁয়ার স্বপ্ন’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। আট সেমিস্টারের সময়সীমায় প্রতিবছর দুটি সেমিস্টার। ফলে মাত্র চার বছরেই এখান থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারছে। ইতোমধ্যে চারটি ব্যাচ শিক্ষাজীবন শেষ করে চলে গেছে। একদিনের জন্যও নেই সেশনজট। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচর্চার উর্বর ক্ষেত্র। রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শেখ হাসিনা ছাত্রী হল। লাইব্রেরিতে ই-বুক ও ই-জার্নালের সুবিধা ছাড়াও যুগোপযোগী ১৬ হাজার বই আছে। এখানকার আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব ও বিজ্ঞানাগার সর্বশেষ প্রযুক্তি সরঞ্জাম সমৃদ্ধ। বর্তমান যুগ অনলাইন সংবাদপত্রের যুগ। তারই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘ঢ়ঁংঃ হবংি’ পোর্টাল। শিক্ষক-শিক্ষার্থ, অভিভাবকও পাঠকরা তাৎক্ষণিকভাবে বিশ^বিদ্যালয়ের সকল খবর জানতে পারছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অনন্য উদাহরণ তৈরি হয়েছে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় অটোমেশনের দ্বারপ্রান্তে। এছাড়াও সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার কাজ চলছে। ১৫০ তরুণ শিক্ষক রাতদিন পরিশ্রম করছেন শিক্ষার্থীরা যাতে আধুনিক বিশ্বের চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও শিক্ষকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীদের সবোর্চ্চ মানসম্মত শিক্ষা দিতে, যাতে তারা আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষা পায় এবং শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের যোগ্য ‘পণ্য’ করে তুলতে পারে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে পাবনা তথা এই এলাকার মানুষের উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম হয়েছে। পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক পরিম-লে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। স্বল্প সময়ে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনে আমাদের প্রত্যাশা এই বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক বিজ্ঞান- প্রযুক্তিময় জ্ঞানে সমৃদ্ধ, যুগোপযোগী, দক্ষ ও মানবিকতাবোধ সম্পন্ন মানবসম্পদ সৃষ্টি করে সারা বিশ্বে অনন্য গৌরব অর্জন করবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০২১ সালের মধ্যে দেশ পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করবে। ফলে বাংলাদেশের সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তিময় ‘পণ্য’র চাহিদা তৈরি হবে। প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সেই ডিজিটাল যুগের জন্য উপযুক্ত ও দক্ষ মানব সম্পদ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন “ভিশন ২০২১” রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. আল-নকীব চৌধুরী ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে দক্ষ জনবল গড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
×