ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সর্বোচ্চ সেবার প্রস্তুতি

ঈদ যাত্রায় প্রস্তুত দক্ষিণ অঞ্চলের তিন পথ

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১১ জুন ২০১৭

ঈদ যাত্রায় প্রস্তুত দক্ষিণ অঞ্চলের তিন পথ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে নারির টানে বাড়ি ফেরা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা এ বছর পাচ্ছেন সর্বোচ্চ সুবিধা। ঘরে ফেরা যাত্রীদের নির্বিঘœ যাত্রা নিশ্চিতকরণে সরকারীভাবে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নদী বেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বেশি ভরসাস্থল নৌ-রুটে শতভাগ যাত্রা নির্বিঘœ করতে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বিভিন্ন নৌবন্দর পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। ঈদে যাত্রীদের ভিড়ের কথা বিবেচনা করে ঢাকা-বরিশাল রুটের আকাশপথে বেসরকারী বিমান সংস্থা নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি বাড়তি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি অতীতের মতো এ বছর নেই ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে খানাখন্দ। পুরনো দিনের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য মন্ত্রী ও এমপিদের পরামর্শ দেয়ার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় গোটা দেশের ন্যায় বরিশালসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন শুরু হওয়ায় এ বছর ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীরা সর্বোচ্চ সেবা পাচ্ছেন। অতীতে এক সময় লোকসানের অজুহাতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আকাশ পথে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিমান যোগাযোগ। সরকারের বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপির সাহসী উদ্যোগে বর্তমানে একই রুটে সরকারী ও বেসরকারী কোম্পানির বিমান লভাংশের মধ্য দিয়ে চলাচল করছে। এরই মধ্যে সকল বিমানের অগ্রিম টিকেটও বিক্রি হয়ে গেছে। অপরদিকে যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির দুুরদর্শিতায় পর্যায়ক্রমে খানাখন্দের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ফিরে এসেছে পূর্ণ যৌবন। নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন নৌবন্দর সফরের মধ্য দিয়ে আধুনিক নৌবন্দর থেকে শুরু করে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ফিরে আসে নৌরুটের জৌলুস। একে একে নৌরুটে যোগ হয় সরকারী এবং বেসরকারী কোম্পানির বিলাস বহুল জাহাজ ও লঞ্চ। ফলে এ বছর আর ঈদে ঘরে ফেরা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের কেবল লঞ্চের ওপর ভরসা করে থাকতে হচ্ছে না। নৌরুট, আকাশ এবং সড়ক পথ সচল থাকায় এবারই কেবল কোন প্রকার ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই নিরাপদ ও আরামদায়ক অবস্থায় ঈদে নারীর টানে শিকরের কাছে আসা দক্ষিণের লাখো যাত্রী যাতায়াত করতে যাচ্ছেন। লঞ্চের অগ্রিম টিকিট ১৩ জুন ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি আগামী ১৩ জুন মোতাবেক ১৭ রমজান থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৫ জুন ১৯ রমজান পর্যন্ত। আর ঈদের বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হবে আগামী ২৩ জুন থেকে। ঢাকা থেকে বরিশাল আসা ও ঈদ শেষে বরিশাল থেকে ঢাকায় ফেরার উভয় টিকিট ওই তারিখে বিক্রি করা হবে। এবার বিশেষ সার্ভিসে মোট ১৬টি লঞ্চ যুক্ত হতে যাচ্ছে। এতে করে যাত্রী বিড়ম্বনা অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান জানান, মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৩ জুন থেকে যাত্রীদের মধ্যে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। ইতোমধ্যে গত ৬ জুন ১০ রমজান থেকে ৮ জুন ১২ রমজান পর্যন্ত কেবিনের টিকিট প্রাপ্তির জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। ১৩ জুন থেকে ১৫ জুনের মধ্যে আবেদনকারীদের মধ্যে কেবিনের টিকিট বিক্রি করা হবে। বরিশাল যাত্রীবাহী লঞ্চ মালিক সমিতির কর্মকর্তা ও সুন্দরবন নেভিগেশনের পরিচালক শহিদুল ইসলাম পিন্টু বলেন, ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে চাহিদার চেয়ে কেবিনের সংখ্যা অনেক কম। এছাড়া ঈদ ও কোরবানিতে কেবিনের সংখ্যার চেয়ে চাহিদা থাকে কয়েক শ’ গুণ বেশি। ফলে আবেদনকারী সবাইকে কেবিন দেয়া সম্ভব হয় না। তাই লটারির মাধ্যমে যাত্রীদের মধ্যে টিকিট বিতরণ করা হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, ঈদের সরকারী ছুটিতে ঢাকা থেকে আসা ও ফিরতি টিকিট ১৩ তারিখ বরিশালের কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করা যাবে। যেসব লঞ্চের বরিশালে কাউন্টার নেই ওইসব লঞ্চের টিকিট সরাসরি লঞ্চ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। আকাশ পথে বিমানের স্পেশাল ফ্লাইট ॥ ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল আকাশপথে বাড়ছে বিমান ফ্লাইটের সংখ্যা। পাশাপাশি রয়েছে স্পেশাল সার্ভিসও। ঈদের পূর্বে ঢাকা থেকে বরিশালে আসা ঘরমুখো মানুষের জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে আকাশপথে বেসরকারী বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি দুইদিন বাড়তি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে বলে সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সংস্থার বরিশাল বিমানবন্দরের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সাইফুর রহমান জানান, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের কথা ভেবে আগামী ২৩ ও ২৪ জুন আরও দুইটি বাড়তি ফ্লাইট দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সংস্থার ঢাকা-বরিশাল রুটে নিয়মিত ফ্লাইট রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার চলাচল করছে। যদি ঈদ ২৭ জুন হয় তাহলে ১৮, ২০, ২২ ও ২৫ জুন বাড়তি ফ্লাইট রাখা হয়েছে। দুইটি বাড়তি ফ্লাইটের কারণে এ বছর বিমানে অধিক যাত্রী বরিশালে আসতে পারবেন। সড়ক পথে নেই খানাখন্দ ॥ অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার আর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে নেই কোন খানাখন্দ। বরং গত বছরের চেয়ে এবার মহাসড়ক আরও বর্ধিত করা হয়েছে। ফলে যাত্রীরা নিরাপদেই এবার সড়ক পথে তাদের গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবেন। জানা গেছে, এবারের ঈদে ঢাকা-বরিশাল সড়কপথে ঈগল, হানিফ, সাকুরা, গোল্ডেনলাইন, সোনারতরী, মেঘনাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবহন যাত্রীসেবা প্রদান করবে। পাশাপাশি মাওয়া-বরিশাল রুটে রয়েছে বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিসের সঙ্গে মাইক্রোবাসে যাতায়াতের সুবিধা।
×