ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদন

১১২ সরকারী সংস্থার বকেয়া ২ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১১ জুন ২০১৭

১১২ সরকারী সংস্থার বকেয়া ২ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা

রহিম শেখ ॥ ১১২ রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা। সরকারের কাছ থেকে নেয়া বিভিন্ন অর্থ ফেরত না দেয়া, গ্যারান্টিতে নেয়া ঋণ পরিশোধ না করা, মুনাফার অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা না দেয়ায় এসব বকেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, এসব অর্থ পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বার বার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও তারা এগুলো পরিশোধ করছে না। ফলে বকেয়ার পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ছে। ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১১২ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, আধাস্বায়ত্তশাসিত ও স্থানীয় সরকারের সংস্থার কাছে বকেয়ার পরিমাণ প্রয় ২ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা। আর প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অনুন্নয়ন বাজেট ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বকেয়ার পরিমাণ আগামী অর্থবছরের অনুন্নয়ন বাজেটের সমান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এভাবে জনগণের অর্থ ভর্তুকি দেয়া ঠিক হচ্ছে না। লোকসানি সব প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা যায়, সংস্থাগুলোর মধ্যে বিভাগভিত্তিক আকারে বকেয়ার পরিমাণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে বিদ্যুত বিভাগের কাছে। বিদ্যুত বিভাগের ৯টি সংস্থা সরকারের কাছে বকেয়া রয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। এরপর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ৭টি সংস্থার কাছে সরকারের পাওনার পরিমাণ ৩৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের ৫৫টি সংস্থারের কাছে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয়ের মোট ৪টি সংস্থার কাছে বকেয়ার পরিমাণ ১০ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৬টি সংস্থার কাছে বকেয়া প্রায় ৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ৫টি সংস্থার কাছে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের প্রায় ৫০৯ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাত্র ৩টি সংস্থার কাছে ৩ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের ১৫টি সংস্থার কাছে ৬ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। তথ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের কাছে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকা। মুক্তযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কাছে প্রায় ৯৭ কোটি টাকা। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের কাছে ৫৭ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৩টি সংস্থার বকেয়ার পরিমাণ ১ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের বকেয়ার পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বকেয়া রয়েছে ২৭ হাজার টাকা। বিভিন্ন সংস্থার বকেয়ার বিষয়ে সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বকেয়ার কারণ নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে। কেননা এই বকেয়ার পরিমাণ দিয়ে আলাদাভাবে এক অর্থবছরের জন্য অনুন্নয়ন বাজেট দেয়া যাবে। এ ছাড়া সরকারের কাছ থেকে অর্থগ্রহণ করে সংস্থাগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা কিংবা লাভ-লোকসানে রয়েছে কিনা সেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।
×