ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটেনে ঝুলন্ত সংসদ

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১১ জুন ২০১৭

ব্রিটেনে ঝুলন্ত সংসদ

আগাম সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে নিজেদের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর যে স্বপ্ন দেখেছিল ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টি, তা মাঠে মারা গেছে। সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পারেনি ক্ষমতাসীন দলটি। অবশ্য কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নেই। ফলে একটি ঝুলন্ত সংসদ পেল ব্রিটেনের জনগণ। স্বাভাবিকভাবেই এখন জোট তৈরি করে গঠন করতে হবে সরকার। সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১৫ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হয় কনজারভেটিভ পার্টি। বছরখানেক আগে এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন হওয়ার পক্ষে (ব্রেক্সিট) রায় দেয় যুক্তরাজ্যের জনগণ। ইইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষে প্রচার চালানো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ওই রায়ের পর পদত্যাগ করলে দায়িত্ব নেন তারই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরেসা মে। তিনি নিজেও ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর একটি সফল ব্রেক্সিট আলোচনার জন্য সব কিছু করার প্রতিশ্রুতি দেন। পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী গত মার্চ মাসে ইইউকে পত্র পাঠিয়ে ব্রেক্সিট ঘণ্টাও বাজান তিনি। কিন্তু ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে শুরুতেই সংসদে বিরোধিতার মুখে পড়ে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে গত এপ্রিলে আকস্মিকভাবে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন টেরেসা মে। আগাম নির্বাচনের কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, ব্রেক্সিট সামাল দেয়ার মতো একটি নিশ্চিত, স্থিতিশীল ও শক্তিশালী সরকার প্রয়োজন। ব্রেক্সিট আলোচনায় নিজের অবস্থানকে আরও সুসংহত করতেই আগাম নির্বাচন দিয়েছেন তিনি। আগামী উনিশ জুন থেকে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সে আলোচনা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তবে এটা বাস্তব যে, ব্রেক্সিট আলোচনা এখন আরও দীর্ঘায়িত এবং জটিল হতে পারে। আগামী ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সময় রয়েছে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের সরে আসার মেয়াদ। অবশ্য গণভোটে ব্রিটেনের জনগণকে বোঝানো হয়েছিল ইইউ-এর বাইরে গেলে উজ্জ্বল ভবিষ্যত নির্মাণ সম্ভব। ভোটে অর্ধেকের সামান্য বেশি ভোট পড়েছিল ব্রেক্সিটের পক্ষে। এ নিয়ে জনগণের মধ্যে মতান্তরও রয়েছে। এবারের নির্বাচনের আগে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ম্যানচেস্টার ও লন্ডন ব্রিজ এলাকায় দুই দফা সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ফলে নির্বাচনী প্রচারে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। নির্বাচনী প্রচারাভিযানও বন্ধ ছিল ক’দিন। এবারের নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় আটষট্টি শতাংশ। প্রায় চার কোটি সত্তর লাখ মানুষ নিবন্ধিত ভোটার। নির্বাচনে ৬৫০টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পেয়েছে তিন শ’ আঠারো আসন। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন তিন শ’ ছাব্বিশ আসন। ইতোমধ্যে দশটি আসন পাওয়া উত্তর আয়ারল্যান্ডের আঞ্চলিক দল এবং ব্রেক্সিট সমর্থক ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি সমর্থন দেবার কথা বলেছে। তাদের সমর্থনে টেরেসা মে আবার সরকার গঠন করতে পারলেও নিরঙ্কুশ অবস্থান না থাকায় বেগ পেতে হবে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দল জেরেমি করবিনের লেবার পার্টি পেয়েছে দুই শ’ একষট্টি আসন। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি পঁয়ত্রিশ, লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি কুড়ি, ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি দশটি এবং অন্যান্য দল পেয়েছে তেরোটি আসন। আগের যে কোন সময়ের চেয়ে এবার নারী প্রার্থী ছিল বেশি। বাঙালী বংশোদ্ভূত চৌদ্দজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে তিনজন বাঙালী নারী গতবারের মতো এবারও বিজয়ী হয়েছেন। তাদের প্রতি অভিনন্দন। ফলাফলে দেখা যায়, কনজারভেটিভ পেয়েছে বিয়াল্লিশ শতাংশ ভোট। অপরদিকে লেবার পেয়েছে চল্লিশ শতাংশ। নির্বাচনে লেবার গতবারের চেয়ে ২৯টি আসন বেশি পেয়েছে। কনজারভেটিভ গতবারের চেয়ে ১৩টি আসন কম পেয়েছে। যে জনপ্রিয়তা যাচাই করতে গিয়ে টেরেসা মে আগাম নির্বাচন করালেন তাতে তার জনপ্রিয়তা যে বাড়েনি সেটা প্রমাণ হলো। আর এই জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় লেবার পার্টির নেতা জেরেমি প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মেকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। লেবার পার্টি আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে ভোটের ক্ষেত্রে। ব্রিটেনে স্থিতিশীল সরকার পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। তবে ব্রিটিশ জনগণ তাদের আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য যে ভোট প্রদান করেছেন তার প্রতিফলন দেখা যাবে আগামীতে। বিশ্ববাসী চায় ব্রিটিশ জনগণ যেন দুর্ভোগে না পড়ে।
×